
—ছবি মুক্ত প্রভাত
শুধুমাত্র একটি চাকরির জন্য নেকেই ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও শিক্ষকতা পেশায় যোদ দিচ্ছেন। অথচ এসব ব্যক্তির বাস্তবে শিক্ষকতা করার তেমন আগ্রহ নেই। তাই ভালো সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। আবার সুযোগ পেলেই অন্যত্র চলে যান।
না হলে আগ্রহ না থাকলেও বাধ্য হয়েই শিক্ষতায় পেশায় থাকেন। এর ফলে স্নাতক স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে শিক্ষকতায় এলেও অনেকই তার আসল কাজ অর্থাৎ ঠিকমতো পাঠদান করেন না। ফলে শিখনঘাটতি নিয়ে ওপরের শ্রেণিতে উঠছে শিক্ষার্থীরা। আর প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তিটি দুর্বল থাকায় শিক্ষার পরবর্তী ধাপেও দক্ষতার ঘাটতি থাকছে। যার প্রভাব পড়ছে কর্মক্ষেত্রেও।
আরো পড়ুন———
> শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
> শিক্ষকদের বেতন গ্রেড বৃদ্ধির সুপারিশ, থাকছে পদোন্নতির সুযোগ
> কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়ার সুপারিশ
> পাঠদান নিয়ে শিক্ষকদের প্রতি নির্দেশনা
এই ধরণের পরিস্থিতি মোকাবিলায় শিক্ষা বিষয়ে ডিগ্রি থাকা ব্যক্তিরা যাতে প্রাথমিকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকার গঠিত পরামর্শক কমিটি।
তারা বলছে, প্রাথমিক শিক্ষা প্রিসার্ভিস একাডেমিক প্রোগ্রাম চালু করতে বলেছে। এটি ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা কোর্স হতে পারে। দেশের সব কটি প্রাথমিক শিক্সক প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটে (পিটিআই) এই প্রোগ্রাম চালুর পরামর্শ দিয়ে কমিটি বলছে প্রাথমিকভাবে এই ডিগ্রি বা ডিপ্লোমাধারীদের শিক্ষক নিয়োগে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
পর্যায়ক্রমে এটি বাধ্যতামূলক করতে হবে। আর প্রিসার্ভিস একাডেমিক প্রোগ্রাম পূর্ণাঙ্গভাবে চালু না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান প্রশিক্ষণে প্রায়োগিক বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার সুপারিশ করেছে এই কমিটি।
আরো পড়ুন———
> শিক্ষকদের পদোন্নতি নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
> এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ সুবিধা নিয়ে যা হতে যাচ্ছে
> অধ্যক্ষ-প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেবে এনটিআরসিএ, কমছে কমিটির ক্ষমতা
পরামর্শক কমিটি প্রাতমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে শাতাধিক সুপারিশ তুলে ধরেছে। এর মধ্যে শিক্ষকদের বেতন গ্রেড এক ধাপ বৃদ্ধি এবং সহকারী শিক্ষকের বিদ্যমান পদ বিলুপ্ত করে নতুন পদবির সুপারিশ করেছে। কমিটি শিক্ষকদের পদোন্নতির সুযোগ বৃদ্ধিও করতে বলেছে।
প্রিসার্ভিস একাডেমিক প্রোগ্রাম
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ নিতে হয় দেশের ৬৭টি পিটিআইয়ের মাধ্যমে। সব শিক্ষকের জন্যই এ প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। কিন্তু সুযোগ না থাকায় অনেক শিক্ষককে দীর্ঘ সময় শিক্ষকতা করার পর এই প্রশিক্ষণের সুযোগ পান। একসময় এই প্রশিক্ষণ কোর্স ছিল এক বছর মেয়াদি। তখন প্রশিক্ষণ কোর্সটির নাম ছিল সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন (সিইনএড)। পরে ১৮ মাস মেয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা হয়। গুরুত্ব বিবেচনায় কোর্সের নাম দেওয়া হয় ডিপিএড। কিন্তু ২০২২ সালে প্রশিক্ষণের মেয়াদ ১৮ মাস থেকে কমিয়ে ১০ মাস করার সিদ্ধান্ত হয়।
তখন এর নাম দেওয়া হয় মৌলিক প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ (বিপিটিটি)। অভিযোগ আছে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কিছু কর্মকর্তার ইচ্ছায় অপরিকল্পিত এই কোর্সকে সংকুচিত করা হয়। শিক্ষাবিদেরা বলছেন, এর ফলে প্রাথমিক শিক্ষায় গুণগত মানে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
শিক্ষা বিষয়ে ডিগ্রি থাকা ব্যক্তিদের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে সুপারিশ করেছে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে গঠিত কমিটি। প্রাথমিক শিক্ষক পদে যোগদানের জন্য একটি প্রাথমিক শিক্ষা প্রিসার্ভিস একাডেমিক প্রোগ্রাম চালু করা অপরিহার্য বলে এ বিষয়ে কিমিটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে ।
প্রাথমিকভাবে এই ডিগ্রি বা ডিগ্রিধারীদের শিক্ষক নিয়োগে অগ্রাধিকার দিয়ে পর্যায়ক্রমে বা বাধ্যতামূলক করা যায়। পিটিআইতে এই কোর্স চালুর জন্য সব শূণ্য পদ পূরণেএবং নতুন পদ সৃষ্টি করা ছাড়াও সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
বিভিন্ন বিশ্ববিধ্যালয়ের শিক্ষাবিজ্ঞানের বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির (পিটিআইয়ের প্রশিক্ষণ তদারকি করে) সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে পিটিআইয়ের সমক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারে।
প্রিসার্ভিস একাডেকি প্রোগ্রাম পূর্ণাঙ্গরূপে চালুর আগপর্যন্ত বিদ্যমান প্রশিক্ষণকালে প্রশিক্ষণার্থীরা যাতে পর্যাপ্ত সময় শ্রেণিকক্ষে দিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত থাকেন, তা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি।
এছাড়া স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে অভিন্ন প্রশিক্ষণ পঞ্জি প্রণয়ন না করে উপজেলা পর্যায় থেকে চাহিদার ভিত্তিতে অবিলম্বে একটি তালিকা করে সে অনুসারে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলোচনা এলাকাভিত্তিক বার্ষিক প্রশিক্ষণ পঞ্জি তৈরি করা যেতে পারে। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রণীত মডিউল অনুসরণ করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।