
—ছবি সংগৃহিত
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ সুবিধা নিয়ে আপতত জটিলতা কাটছে না। এমনিতেই আগে থেকেই অর্থসংকটের কারণে এই সুবিধা পেতে শিক্ষক-কর্মচারীদের লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হতো।
আরো পড়ুন———
> বেরসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে লাগাতার কর্মসূচিতে যাচ্ছেন শিক্ষকরা
> শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে মাউশির জরুরী নির্দেশনা
> যেসব শর্তে বদলি হতে পারবেন শিক্ষকরা, সবশেষ নীতিমালায় যা আছে
> শিক্ষকদের বদলি শুরু, আবেদন চলবে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত
> শিক্ষকদের এমপিও নিয়ে এনটিআরসিএ’র নতুন সিদ্ধান্ত
সরকারের অর্থ এখন আরো বেড়েছে। প্রায় ছয় মাস ধরে অকার্যকর হয়ে আছে অবসর ও কল্যাণ সুবিধা বোর্ড। অর্থ সংকট আর অকার্যকর কল্যাণ সুবিধা বোর্ডের কারণে সুবিধা পেতে শিক্ষাক-কর্মচারী অপেক্ষা আরো বাড়ছে। জমা পড়ে আছে অবসর ও কল্যাণ সুবিধা মিলিয়ে ৭৪ হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মচারীর আবেদন। এসব আবেদন এখনো নিষ্পন্ন হয়নি।
শিক্ষক-কর্মচারীরা মনে করেন, অবসরের পরপরই অবসর ও কল্যাণ সুবিধা দেওয়া উচিত। সেই প্রত্যাশা থাকলেও এই সুবিধা পেতে শিক্ষক-কর্মচারীদের এখন তিন থেকে চার বছর পর্যন্তও অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এনিয়ে প্রায় ছয় মাস ধরে বোর্ড সভা না হওয়া এবং বোর্ডের নিয়মিত সচিব না থাকায় নতুন করে টাকা দেওয়ার অনুমোদন হচ্ছে না। ফলে হাহাকারও বাড়ছে শিক্ষক-কর্মচারীদের।
আরো পড়ুন———
> শিক্ষকদের জন্য সুখবর দিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর
> শিক্ষকরা রাজনীতি করলে ব্যবস্থা
অবসর ও কল্যাণ সুবিধা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, অবসর ও কল্যাণ সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষক-কর্মচারীদের অসহায়ত্ব দেখে তারাও কিছু করতে পারছেন না। এসব কর্মকর্তারাও চান, সরকার সরকার দ্রুত অবসর ও কল্যাণ সুবিধার সমাধান করুক।
সূত্র বলছে— দেশজুড়ে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী আছেন ৫ লাখের বেশি। দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অবসর ও কল্যাণ সুবিধা দেওয়া হয় শিক্ষক-কর্মচারীদের। এরমধ্যে কল্যাণ সুবিধার টাকা দেওয়া হয় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে। অবসর সবিধার টাকা দেওয়া হয় বেসিরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর বোর্ডের মাধ্যমে।
রাজধানীর পলাশী-নীলক্ষেত এলাকায় বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) ভবনে কল্যাণ ট্রাস্ট ও বোর্ডের কার্যালয়। সম্প্রতি ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, বেশকিছুসংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারী এবং তাদের স্বজনেরা এসেছিলেন অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকা পাওয়ার খবর নিতে। কর্মকর্তারা ওই শিক্ষক-কর্মচারীদের বোঝাচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবে আশা নিয়ে আসা সবাইকে নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র এসেছিলেন তার বাবার অবসর সুবিধার টাকার বিষয়ে। তিনি বলেন, তার বাবা গাইবান্ধার একটি কলেজের শিক্ষক ছিলেন । ২০২০ সালে অবসরে ড়েছেন, কিন্তু এখনো অবসর সুবিধা পাননি।
অবসর ও কল্যাণ সুবিধা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, অবসরের জন্য প্রায় ৩৮ হাজার কল্যাণ সুবিধার জন্য প্রায় ৩৬ হাজার আবেদন অনিষ্পন্ন হয়ে জমা পড়ে আছে।
অবসর সুবিধা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা জানান, বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের আবেদনগুলোর মধ্যে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত জমা আবেদনগুলোর বিপরীতে টাকা দেওয়ার অনুমোদন করা হয়েছে। কলেজে তা ওই বছরের মার্চ পর্যন্ত এবং মাদরাসার জন্র ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত জমা আবেদনগুলো নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
এছাড়া কল্যাণ ট্রাস্টের একজন কর্মকর্তা জানান, ২০২২ সালের মে পর্যন্ত জমা পড়ে থাকা আবেদনগুলোর বিপরীতে টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়য়েছে।
সেখানকার একটি সূত্র জানিয়েছে, অনুমোদনের পরও কখনো কখনো টাকা পেতে কিছু সময় লেগে যায়।
অকার্যকর বোর্ড
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব এই দুই প্রতিষ্ঠানে পদাধিকারবলে চেয়ারম্যান হলেও এই দুটি অফিস চলে মূলত সচিবের (সদস্যসচিব ডাকা হয়) নেতৃত্বে। সাধারণত সরকার সমর্থক শিক্ষকনেতারা এই দুই প্রতিষ্ঠানের সচিব হন। বোর্ডের সদস্যও হন সরকার সমর্থক শিক্ষক-কর্মচারীরা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তাদের সময়ে নিয়োগ করা সেই সচিব অফিসে যাননি। অন্য সদস্যরাও প্রায় নিষ্ক্রিয়। কিন্তু এর মধ্যে প্রায় ছয় মাস হতে চললেও এই দুই প্রতিষ্ঠানের বোর্ড পুনর্গঠন করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একারণে সংকট আরো বেড়েছে।
শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা মো, জাফর আহম্মদ গত নভেম্বর থেকে অবসর সুবিধা বোর্ডের সদস্যসচিবের রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, তারা এখন আগে অনুমোদন হওয়া টাকা দিচ্ছেন। তবে গত আগস্টের পর বোর্ডের কোনো সভা হয়নি
এদিকে অবসর সুবিধা বোর্ডে রুটিন কাজ চললেও কল্যাণ ট্রাস্ট প্রায় অভিভাবকহীন। এত দিন এই ট্রাস্টের সচিবের রুটিন দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাস্টের কর্মকর্তা মো. আবুল বাশার, কিন্তু তিনিও সম্প্রতি অবসর উত্তর ছুটিতে চলে গেছেন। ফলে স্বাক্ষর করার মতো কেউ নেই। অন্য কাউকেস রুটিন দায়িত্বও দেওয়া হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব সিদ্দিক জোবায়েরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
সমাধানের জন্য যা করা যেতে পাারে
অবসর ও কল্যাণ সুবিধার বড় অংশই আসে মূলত শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে। বর্তসানে অবসর সুবিধার জন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতনের ৬ শতাংশ হারে টাকা কাটা হয়। আর কল্যাণ সুবিধার জন্য ৪ শতাংশ হারে টাকা কেটে রাখা হয়। এছাড়া সরকার মাঝেমধ্যে থোক বরাদ্দ দেয়। এফডিআরের লভ্যাংশ এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে কেটে রাখা টাকা দিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকা দেওয়া হয়।
অবসর সুবিধা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ৬ শতাংশ হারে শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে মাসে প্রায় ৭০ কোটি টাকা আদায় হয়। এফডিআর থেকে মাসে আয় হয় তিন কোটি টাকা। এই দুই খাসে মাসে আয় হয় ৭৩ কোটি টাকা, যা বছরে ৮৭৬ কোটি টাকা। কিন্তু শুধু অবসর সুবিধার জন্য মাসে প্রয়োজন হয় ১১৫ কোটি টাকা। এই হিসেবে মাসে প্রায় ৪২ কোটি টাকা ঘাটতি থাকে, যা বছরে ৫০৪ কোটি টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অবসর সুবিধা বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, এখন যদি অনিষ্পন্ন সব আবেদন করতে হয়, তাহলে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা লাগবে। এরপর স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রতিবছর ৫০০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ দিলে কাউকে আর অবসর সুবিধার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। অন্যদিকে কল্যাণ ট্রাস্টের অনিষ্পন্ন আবেদনগুলো নিষ্পত্তি করতে এককালীন ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা দরকার। এরপর প্রতিবছর সরকার ২০০ কোটি টাকা দিলে তা স্থায়ী সমাধান সম্ভব।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান সরকার এই টাকা জোগানের পাশাপাশি আইন অনুযায়ী শিক্ষকদের মধ্য থেকে বোর্ড পুনর্গন করা।
মুক্ত/আরআই