
পদ্মা কোম্পানীর বক্তব্য সঠিক নয় দাবী জাহাজ মালিকের
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বিস্ফোরিত সাগর নন্দিনী-২ জাহাজে থাকা জ্বালানী তেল নিরাপদে সরিয়ে নিতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিকে দূর্ঘটায় কবলিত ওটি সাগর নন্দিনী-২ জাহাজটির জ্বালানী দ্রুত খালাস করতে ২ জুলাই পদ্মা ওয়েল কোম্পানী চিঠি দিয়েছে জাহাজ মালিককে। পদ্মা কোম্পানীর সহকারী মহা ব্যাবস্থাপক ( সরবরাহ ও বিতরন) এই চিঠি দেন।
এদিকে জাহাজ মালিক সৈয়দ বদরুল আলম এক সাক্ষাতকারে গতকাল জানিয়েছে, আমাদের পক্ষ থেকে বিস্ফোরিত জাহাজে কোন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়নি। বিস্ফোরণের আগে জাহাজের সবাই পদ্মা কোম্পানীর ডিপোতে ছিলো। জাহাজে কোন পাম্প মেশিন, যন্ত্রপাতি কিছুই ছিলনা।
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা মেজিষ্ট্রেট মোঃ মামুন শিবলীর নেতৃত্বে গঠিত এই টিম ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজ থেকে অবশিষ্ট জ্বালানী নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার কার্যক্রম পর্যবেক্ষন করবে কমিটি। জ্বালানী অপসারণের কাজ করবে জাহাজ মালিক পক্ষ।
এদিকে এই প্রক্রিয়া চলাকালিন যে কোন পরিস্থিতি সামাল দিতে আরো দু’টি জাহাজ ঘটানস্থলে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জাহাজ দুটি হলো মার্কেন্টাইল-১৩ এবং সাগর নন্দিনী-১। এ প্রসঙ্গে গতকাল বুধবার জাহাজ কোম্পানীর ব্যাবস্থাপনা পরিচালক (মালিক) সৈয়দ বদরুল আলমকে জাহাজ থেকে পানি মিশ্রীত তেলের নমুনা সংগ্রহ করে পদ্মা ওয়েল কোম্পানীতে নিয়ে আসতে দেখা গেছে। এই পরিস্থিতির কারণে অকটেনের কোন জাহাজ ঝালকাঠিতে না আসায় ফুরিয়ে আসছে মজুদ।
ফলে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ করা যাচ্ছেনা। এ বিষয়ে পদ্মা ওয়েল কোম্পানীর এজিএম মোঃ আনোয়ার হোসেন জানান, অকটেনের মজুদ আগের তুলনায় কম আছে। তবে খুব শিগ্রই ক্ষতগ্রিস্ত জাহাজটি এবং জাহাজের জ্বালানি সরিয়ে ফেলা হলে জ্বালানী সরবরাহ ও পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
জ্বালানী অপসারণ কমিটি প্রধান এডিএম মোঃ মামুন শিবলী জানান, সাগর নন্দিনী-২ জাহাজটি পানি প্রবেশ করায় ভারি হয়ে কিছুটা দেবে গেছে। আমিসহ মোট ৮ সদস্যের এই কমিটির প্রধান কাজ হবে জাহাজটিকে ভাষিয়ে রেখে অবশিষ্ট জ্বালানী তেল সরিয়ে ফেলা। এই কাজ করবে জাহাজের মালিক পক্ষ।
তবে কমিটির কিছু নির্দেশনা মেনে পরিবেশের ক্ষতি না হয় সেই দিকে খোয়াল রেখে এই কাজ করা হবে। যা আমরা তদারকি করবো। একই সাথে বিস্ফোরণের কারণে জাহাজের ভিতরে থাকা ক্ষতিকারক ভগ্নাংশের টুকরা অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার কাজ করবে মালিক পক্ষ।
তবে আজকের থেকে আমাদের এই কমিটি কাজ শুরু করেছে। তাই পর্যবেক্ষনের পরে কবে নাগাদ ও কিভাবে অপসারনের কাজ শুরু করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। যতটা সম্ভব দ্রুত জাহাজটিকে সরিয়ে নিয়ে এই নৌপথ চলাচলের জন্য নির্বিঘ্ন করা হবে।
পদ্মা ওয়েল কোম্পানী দূর্ঘটনা কবলিত জাহাজ থেকে জ্বালানী দ্রুত খালাস করার চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, দূর্ঘটনার পর পদ্মা কোম্পানীর অন্য একটি জাহাজের মাধ্যমে ৪ লাখ ২৩ হাজার ৩৮৮ লিটার ডিজেল আনলোডিং করে দূর্ঘটনায় কবলিত জাহাজটি নিমজ্জিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা ও নিরাপদে রাখা হয়েছে। তাই মালিক পক্ষের সাথে চুক্তি অনুযায়ী অবশিষ্ট ডিজেল এবং পেট্রোল নিরাপদে ঝালকাঠি ডিপোতে আনলোডিং করার জন্য মালিক পক্ষকে এই চিঠিতে বলা হয়।
সংশ্লিষ্ট সুত্র মতে সাগর নন্দিনী-২ জাহাজে চট্টগ্রাম থেকে ঝালকাঠি ডিপোতে সরবরাহের জন্য ৪ লাখ ৬ হাজার ২৪৯ লিটার পেট্রোল, ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৮৪৪ লিটার ডিজেল আনা হয়। দূর্ঘটনার পর জাহাজ মৃদৃলা-৫ ও সেভেন সিমাক-২ এর মাধ্যমে ৪ লাখ ২৩ হাজার ৩৮৮ লিটার ডজিল সরিয়ে ডিপোতে সরবরাহ করা হয়।
সাগর নন্দিনী-২ জাহাজ ডুবে যাওয়ার সন্দেহে সাগর নন্দিনী-৪ জাহাজে আরো ২ লাখ ২৫ হাজার ডিজেল স্থানান্তর করে নেয়া আছে। অবশিষ্ট আরো ২৮ হাজার ৪৫৬ লিটার ডিজেল সাগর নন্দিনী-২ জাহাজে আছে। অপর দিকে সাগর নন্দিনী-৪ জাহাজে ২০ হাজার লিটার পেট্রোল স্থানান্ত করে নেয়া হয়।
বাকি ৩ লাখ ৮৬ হাজার ২৪৯ লিটার পেট্রোল সাগর নন্দিনী-২ জাহাজে মজুদ আছে। ক্ষতিগ্রস্থ জাহাজটি হতে উল্লেখিত ডিজেল ও পেট্রোল সরিয়ে নিতে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বুধবার পদ্মা ওয়েল কোম্পানী ঝালকাঠি ডিপো অফিসে মুক্তপ্রভাতের সাথে কথা হয় সাগর নন্দিনী-২ জাহাজের মালিক সৈয়দ বদরুল আলমের। এসময় তিনি বলেন, বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের কাছে সার্ভিস সনদের ছাড়পত্র পেয়ে জাহাজটি পূনরায় চালু করা হয়।
কিন্তু যেহেতু জাহাজটি একবার নিমজ্জিত হয়েছে তাই প্রথমেই পদ্মা ওয়েল কোম্পানী তেল পরিবহনের অনুমতি দেয়নি। এরপর কোম্পানী আবার পৃথক তদন্ত কমিটি করে খুটিনাটি পর্যালোচনার পর তেল সরবরাহের অনুমতি দয়ে। তাই আমরা সতর্ক থাকলেও আবার দূর্ঘটনা ঘটেছে।
এখন কিভাবে দূর্ঘটনা ঘটেছে সেটা কারো পক্ষেই বলা সম্ভব নয়। জাহাজটির বাবুর্চী বেলায়েত হোসেন অক্ষত থাকায় কি ভাবে ঘটনাটি ঘটেছে সে বিষয়ে তার সাথে কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সৈয়দ বদরুল আলম বলেন, সে পুলিশ হেফাজতে থাকায় তার সাথে কথা হয়নি।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব বরাবরে পদ্মা ওয়েল কোম্পানির সেফটি এবং সিকিউরিটি বিবেচনায় জাহাজ কর্তৃপক্ষকে খালাশ কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনার বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, এই বক্তব্য সঠিক নয়। আমাদের পক্ষ থেকে কোন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়নি। বিস্ফোরণের আগে আমার জাহাজের সবাই পদ্মা কোম্পানীর ডিপোতে ছিলো। জাহাজে কোন পাম্প মেশিন, যন্ত্রপাতি কিছুই ছিলনা।