
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে পূনরায় জাহাজ বিস্ফোরণ- ছবি মুক্ত প্রভাত
ঝালকাঠি সুগন্ধা নদীতে সাগর নন্দিনী-২ জাহাজ হতে পেট্রোল অপসারনের সময় পূনরায় বিস্ফোরনের ঘটনা ঘটেছে। বিস্ফোরণে জাহাজের তেলের টাংকি ফেটে তেল নদীতে ছড়িয়ে পরছে। ফায়ার সার্ভিস সুত্রে জানাযায়, এতে জাহাজটি ধিরে ধিরে তলিয়ে যাচ্ছে।
এসময় কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য সহ প্রায় ১৫ জন অদগ্ধ হয়ে আহত হয়। এদিকে সাগর নন্দিনী-২ জাহাজে আগুনে বিস্ফোরনের ঘটনায় সোমবার পর্যন্ত নিখোজ ৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হলো। সাগর নন্দিনি-৪ জাহাজে ৪ লাখ ৫ হাজার লিটার পেট্রোল সরিয়ে নেয়ার শেষ পর্যায়ে বিকেলে দ্বিতীয় বিস্ফোরনে এই ঘটনা ঘটে।
এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাত ৮ টার সময় জাহাজের পেট্রালে লাগা আগুন ক্রমান্বয়ে নদীতে ছড়িয়ে পড়ছে। এপর্যন্ত কোন ফায়ার সার্ভিসের টিম ঘটনাস্থলে এসে পৌছায়নি। এতে সাধারন মানুষের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ার চরম আতঙ্ক বিড়াজ করছে।
আহতরা জানায়, সোমবার বিকেল ৫ টার দিকে সাগর নন্দিনী-২ জাহাজ হতে সাগর নন্দিনী-৪ জাহাজে পেট্রোল অপসারনের সময় পূনরায় এই বিস্ফোরণ ঘটে। এসময় সেখানে কর্তব্যরত নৌ পুলিশের অধিকাংশ সদস্যরাই আহত হয়। আহতদের জরুরী চিকিৎসার জন্য ঝাকাঠি সদর হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
আহতরা হলো ঝালকাঠি পুলিশ লাইনের এসআই আব্দুল হাকিম (৪৯), কনস্টেবল পলাশ মোল্লা (২৫), কনস্টেবল সওকত (২৩) ও কনস্টেবল মনির (৩০), বরিশাল নৌপুলিশেরে মোঃ সিদ্দিক (৪৯), এটিএসআই হেলাল উদ্দিন (৪৫), সাগর নন্দিনী-৪ জাহাজের স্টাফ শরিফ উল্লাহ্ (৪০) ও বাবুর্চি কাইয়ুম (৩২), ঝালকাঠি সদর থানার মাঝি মোঃ কাওসার (২৮) এবং ঝালকাঠি সদর থানার এএসআই গনেশ (৪২)। এছাড়াও আরো গুরতর আহতদের বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে নেয়া হয়েছে।
আহত বরিশাল নৌপুলিশেরে মোঃ সিদ্দিক জানান, প্রথমে সাগর নন্দিনী-২ জাহাজের সম্মুখ ভাগে বিস্ফোরনের ঘটনা ঘটে। এরপর সঙ্গে সঙ্গে এই জাহাজ থেকে পেট্রোল অপসারনের অপর জাহাজ সাগর নন্দিনী-৪ জাহাজে আগুন লেগে যায়।
জাহাজের উপরে ৪/৫ জন স্টাফ কাজে ব্যাস্ত ছিলো। তারা কি অবস্থায় আছে তা দেখার আগেই আমরা আহত হই। আমরা ঐ জাহাজের পাশে আলাদা একটি ট্রলারে কর্তব্যরত ছিলাম।
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে পূনরায় জাহাজ বিস্ফোরণ- ছবি মুক্ত প্রভাত
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে সাগর নন্দিনী-২ জাহাজে আগুনে বিস্ফোরনের ঘটনায় সোমবার পর্যন্ত নিখোজ ৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হলো। গতকাল রবিবার দুপুর ২ টার দিকে গ্রিজার আব্দুস সালাম হৃদয় পরে সোমবার সকালে সুপার ভাইজার মাসুদুর রহমান, সোমবার দুপুরে মাস্টার রুহুল আমিন এবং পরে সর্বশেষ ইঞ্জিন ড্রাইভার সরোয়ার হোসেন আকরামের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
ইতিপূর্বে উদ্ধার কার্যক্রম শীথিল রাখায় স্বজনদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। কিন্তু নদীতে স্রোতের কারণে কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়নি। এরপর নিখোজদের সন্ধানে গত রবিবার থেকে বিআইডব্লিউটিএ’র ডুবুরিদল এ উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে।
রবিবার সন্ধ্যায় উদ্ধারকারি বিআইডব্লিউটিএ’র জাহাজ নির্ভিক ঝালকাঠি এসে পৌছে। সোমবার সকালে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিস্ফোরনে নদীতে উড়ে যাওয়া জাহাজটির পিছনের অংশ উদ্ধারের কাজ শুরু করা হয়। কারন স্বজনদের দাবী ছিল নিখোঁজদের মৃতদেহ ডুবন্ত অংশের মধ্যে আছে।
এরপর সেখান থেকে সোমবার সকালে প্রথমে ১০ টা ৪৪ মিনিটের সময় জাহাজের সুপারভাইজার মাসুদুর রহমান বেলাল পরে সোয়া ১২ টার দিকে মাষ্টার রুহুল আমিনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এরআগে রবিবার দুপুর ২ টার দিকে জাহাজের পিছনে ইঞ্জিন রুমের ভিতর থেকে গ্রীজার আব্দুস ছালাম হৃদয়ের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সর্বশেষ সোমবার বিকেলে ইঞ্জিন ড্রাইভার সরোয়ার হোসেন আকরামের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
গতকাল দূর্ঘটনা কবলিত জাহাজ সাগর নন্দিনি-২ থেকে মৃদুলা-৫ এবং সেভেন সিমাক-২ জাহাজের মাধ্যমে ৬ লাখ ৭৫ হাজার লিটার ডিজেল স্থানান্তর করে ইতিমধ্যেই পদ্মা ডিপোতে সরবরাহ করা হয়েছে বলে ডিপো কর্তৃপক্ষ জানায়।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক ও উদ্ধারকারি জাহাজ নির্ভিকের কমন্ডার মো. সেলিম জানান, সোমবার ২ জনের এবং গত রবিবার ১ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। গত রবিবার আমাদের ডুবরিদল ডুবন্ত অংশের ভিতরে প্রবেশ করতে না পারায় বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়োরম্যানের নির্দেশে উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভিক ঝালকাঠিতে আনা হয়। আমাদের এ উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত ডুবন্ত অংশটি উপরে উঠাতে না পারি।
অংশটি উঠানোর পরে তার ভিতরে যদি কোন মৃতদেহ না পাওয়া যায় তারপর উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষনা করা হবে। ঝালকাঠি থানার ওসি নাসির উদ্দিন জানান, লাশ উদ্ধারের পর স্বজনদের অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত কেহই অভিযোগ করেনি।
উল্লেখ্য গত শনিবার সাগর নন্দিনি-২ তেলের জাহাজে আগুন লেগে বিস্ফোরনে মাষ্টার ব্রীজ ও স্টাফ কেবিনসহ পিছনের ইঞ্জিন রুমের উপরি ভাগ উড়ে যায়। ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এ ঘটনায় ৫ জন আহত ও ৪ জন নিহত হয়।
ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, বিকেলে জাহাজে দ্বিতীয় বিস্ফোরনের ঘটনায় আগুন নিয়ন্ত্রনে বরিশাল থেকে অগ্নি ঘাতক বিশেষ নৌজান ঝালকাঠির দিকে রওয়ানা হয়েছে। কারন আগুনের ভয়াবহতা ব্যাপক আকার ধারন করে নদীতে ছড়িয়ে পরছে।
বরিশাল থেকে আমাদের উর্ধতন কর্মকর্তারা কছিুক্ষনের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌছে যেভাবে নির্দেশনা দেবে আমরা সেভাবেই কাজ করবো। এই বিস্ফোরণে জাহাজ ফেটে জ্বালানী নদীতে বেড়িয়ে এসেছে। জাহাজটি ধিরে ধিরে নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে।
ঝালকাঠির সহকারী পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মোঃ মহিতুল ইসলাম জানান, বিকেলে বিস্ফোরণের ঘটনায় আমাদের ৮ জন পুলিশ সদস্য এবং এই ঘটনায় সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ জন আহত হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। আমি আমাদের আহত পুলিশ সদস্যদের সাথে চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে যাচ্ছি।