
—ছবি মুক্ত প্রভাত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) পদ থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন সতন্ত্র প্রার্থী মাহমুদুল হাসান মিঠু। তিনি বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্র দলের সাংগঠনিক সম্পাদক। শনিবার তারা নিজেদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন।
একই সঙ্গে সিনেট সদস্য প্রার্থী তিনজনসহ বিভিন্ন পদের মোট ১১ জন তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। প্রার্থীতা প্রত্যাহারের এই বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন রাকসু নির্বাচন কমিশন।
রাকসু নির্বাচনের নিরপেক্ষতা এবং গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দুটি প্যানেল। ভোট গণনায় ম্যানুয়াল পদ্ধতি ব্যবহারের দাবিও জানিয়েছেন তারা। নির্বাচন কমিশনকে ১২ দফা প্রস্তাবনাও দিয়েছে
ছাত্রদল এবং ছাত্র অধিকার পরিষদ সমর্থিত ‘রাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জ’ প্যানেলের নেতাকর্মীরা। শনিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন ডেকে দুটি প্যানেল তাদের এসব প্রস্তাবনা তুলে ধরে।
রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বলেন, রাকসু নির্বাচনের ভোট ওএমআরের মাধ্যমে নেওয়া হবে। ভোট গণনাও হবে ওএমআর মেশিনের মাধ্যমেই। তিনি বলেন, এতো ভোট ম্যানুয়ালি গণনা করতে গেলে জাকসুর মতো নানা সমস্য সামনে আসবে। এই আধুনিকায়নের সময়ও যারা ম্যানুয়াল ভোট গণনার কথা বলছেন-সেসব ব্যক্তি বিজ্ঞানসম্মত নন।
সূত্র বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মিঠু সংগঠন থেকে কোনো পদেই নির্বাচনের অনুমতি পাননি। ফলে তিনি ভিপি পদে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেছিলেন। কিন্তু পারিপারশিক বিষয়ে বিবেচনায় এনে তিনি নিজের প্রার্থিতা প্রত্যহার করেছেন।
মাহমুদুল হাসান মিঠু বলেন, ছাত্রদল একটি বড় ছাত্র সংগঠন। নির্বাচনে ব্যক্তিত্বের প্রতিযোগিতাও রয়েছে। তাছাড়া গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যোগ্য ব্যক্তিদের বাছাই করায় তিনি সংগঠনের নির্বাচনী সমস্ত সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, রাকসু নির্বাচনে ৯টি প্যানেল অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল, ছাত্রবিবির সমর্থিত প্যানেল, সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট, রাকসু ফর র্যাডিক্যাল চেঞ্জ, গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ, অপরাজেয় ৭১, অপ্রতিরোধ্য ২৪, আধিপত্যবিরোধী ঐক্য, সার্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ, সচেতন শিক্ষার্থী পরিষদ ও স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট। ভিপি পদে ১৮, জিএস পদে ১৪ ও এজিএস পদে ১৬ জন প্রার্থী হয়েছেন।
মনোনয়নপত্রে নানা ত্রুটি থাকায় ৭ জনের। তবে আপিল করে ৫ জন তাদের প্রার্থিতা ফেরত পেয়েছেন। তপশিল অনুযায়ী রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের কথা রয়েছে। তালিকা প্রকাশের পরই শুরু হবে প্রচার-প্রচারণা। রাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
শনিবার ছাত্রদলের যে যৌথ সংবাদ সম্মেলন হয়েছে, সেখানে অভিযোগ করা হয়- ছাত্রশিবির নিয়ম ভঙ্গ করছে বার বার। শিক্ষার্থীদের আতর, খাবারসহ নানা উপঢৌকন দিচ্ছে। এসব নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘনের সামিল। শুধু এসব সমস্যাই নয় বরং ব্যলট নম্বর দিতেও ছাত্র শিবিরকে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন এসব কার্যকলাপে নিরপেক্ষতার সংকট তৈরি করেছে।
তারা বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তারা ১২ দফা দাবি তুলে ধরেছেন। এগুলো হলো- স্বচ্ছ ব্যালট ব্যবহার, ভোট শুরুর আগে সাংবাদিক ও এজেন্টদের উপস্থিেিত ব্যালট উন্মুক্ত করা, ভোটারদের আঙুলে অমোচনীয় কালি ব্যবহার, একদিনের মধ্যে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রকাশ, ম্যানুয়ালি ভোট গণনা, নির্বাচনি খরচ ও পোস্টারের সংখ্যা নির্দিষ্টকরণ, ব্যলট ছাপানো ও বাঁধাই পর্যন্ত এজেন্টদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা, পর্যাপ্ত বুথের ব্যবস্থা, ডিজিটাল বোর্ডে ভোটার নম্বর প্রকাশ, সাইবার বুলিং প্রতিরোধে কার্যকর সেল গঠন ও বিশ^বিদ্যালয়কেন্দ্রিক বিভ্রান্তিকর পেজ-গ্রুপ বন্ধ করা এবং ভোটের দিন ভোটার তালিকা হাতে ধরিয়ে না দেওয়া নিশ্চিত করা।
ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর-উদ্দীন আবীর বলেন, ‘ইভিএমে ভোট গণনা করা হলে কারচুপির আশঙ্কা রয়েছে। যেহেতু দীর্ঘদিন পর রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, সেকারণে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হতে হবে। এরই মধ্যে ডাকসু ও জাকসু নির্বাচন নিয়ে নানা ধরণের বির্তক হয়েছে। রাকসু নিয়ে কোনো বিতর্ক চাইনা। যদি ভোটার সংখ্যা বেশি হয় তাহলে নির্বাচন কমিশন জনবল বাড়িয়ে ভোট গণনা করবেন। প্রতিক্ষীত এই নির্বাচন যেন কোনোভাবেই কলঙ্কিত না হয়।’