
—ছবি মুক্ত প্রভাত
চলন্ত বিলে ভাসমান হাজার হাজার নৌকায় শুক্রবার সকাল থেকে বাইচ দেখার অপেক্ষায় শিশু থেকে বৃদ্ধ। বিকেল তিনটায় ভাঙল অপেক্ষার প্রহর। পানসি নৌকার বাইচ শুরু হতেই উচ্ছ্বাসে মুখর হয়ে উঠল চলনবিল। এ অঞ্চলে চার দশকের মধ্যে উন্মুক্ত জলারাশিতে সবচেয়ে বড় নৌকাবাইচ ছিল এটি।
লাখো দর্শকের আগমণে শুক্রবার দিনটিতে চলনবিল ছিল কানা কানায় পূর্ণ। দূর-দূরান্ত থেকে আসা ১২টি পানসি নৌকার অংশগ্রহণে চলনবিলের গুরুদাসপুর উপজেলা অংশের বিলশায় অনুষ্ঠিত হয় এই বাইচ। চলনবিলের দর্শকদের উপস্থিতি, উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা, আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচকে প্রাণবন্ত করে তুলেছিল। নাটোরের জেলা প্রশাসকের আয়োজনে ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচটি বাস্তবায়ন করে গুরুদাসপুর উপজেলা প্রশাসন। বিকেল তিনটায় বাইচটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান। বাইচটি দেখতে এসেছিলেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, রাজশাহী রেঞ্জের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল মোহাম্মদ শাহজাহান, নাটোর জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন, গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা আফরোজ।
১২টি নৌকার অংশ গ্রহণে ৭ রাউন্ড খেলা অনুষ্ঠিত হয়। বিলশার মা জননী সেতু থেকে শুরু করে কাঁটাবাড়ি বিল পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হয়। বিলের পানিতে ভাসমান অবস্থায় দর্শক এবং ভাসমান নান্দনিক মঞ্চে বসে বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই নৌকাবাইচ উপভোগ করেন অতিথিরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা আফরোজ বলেন, জীবনের প্রথম এতো দর্শকের উপস্থিতিতে নৌকাবাইচ উপভোগ করেছেন তিনি। দর্শকদের আগ্রহ, উচ্ছ্বাস, উদ্দীপনা নৌকাবাইচকে আরো প্রাণবন্ত করে তুলেছিল। লাখো দর্শকের এই আগমণ আদি বাংলার ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে এনেছে। নৌকাবাইচটি সফলভাবে আয়োজন করতে পেরে আয়োজক হিসেবে তিনিও সফল।
আয়োজক সূত্রে জানাগেছে, ৬ রাউন্ড শেসে সেরা তিনটি নৌকা বাছাই করা হয়। ফাইনাল রাউন্ডে ‘বাঙলার বাঘ ও আল মদিনাকে পেছনে ফেলে নিউ একতা এক্সপ্রেস বাইচে প্রথম হয়। প্রথম দলকে পুরস্কার হিসেবে একটি মোটরসাইকেল দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দলকে দেওয়া হয় রেফ্রিজারেটর এবং এলইডি টেলিভিশন।
উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে দর্শকেরা বলেন, নৌকাবাইচও যে বাঙলার ঐতিহ্য তা এই প্রজন্ম জানেই না। এমন সংকটময় সময়ে চলনবিলের উন্মুক্ত জলারাশিতে নৌকাবাইচ আয়োজন করায় আদি বাঙলার সেই ঐতিহ্য ফিরে এসেছে। লাখো দর্শকের উপস্থিতি তাই প্রমাণ করে। প্রতি বছরই নৌকাবাইচের মতো বড় আয়োজন করে গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ছড়িয়ে দেওয়ার দাবি তাদের।
প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, চলনবিলের পানিতে গোসল করে নৌকায় ভেসে বড় হয়েছেন তিনি। কয়েক দশক ধরে চলনবিলের উন্মুক্ত জলারাশিতে নৌকাবাইচ হয়নি। এতো বড় আয়োজন এবং পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ এলাকার লাখো দর্শকের অংশ গ্রহণ তাকে মুগ্ধ করেছে। আগামীতেও এই ধরণের আয়োজন করার আহ্বান তার।