
—ছবি মুক্ত প্রভাত
নওগাঁর বদলগাছীর মিঠাপুর-মথুরাপুর ও পাহাড়পুর ইউনিয়ন ভুমি অফিসে জমির খাজনাকে ঘিরে চলছে রমরমা ঘুষ বাণিজ্য।
অভিযোগ উঠেছে,সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত ভূমি খাজনার হার আর অফিসে বাস্তবে খাজনার হার এক নয়। অফিসে ঘুষের বিনিময়ে কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে খাজনা আদায়ের পরিমান।
এছাড়া অভিযোগ আছে,ভূমি সহকারী ওই কর্মকর্তা স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে ঘুষ নিয়ে থাকেন। ফলে সেবা নিতে গিয়ে হয়রানি শিকার হচ্ছে ঐসব ইউনিয়নের লোকজন।
অন্যদিকে বারবার ঘুরেও কাক্ষিত সেবা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষরা। অফিসে ঘুষের বিনিময়ে লাখ টাকার খাজনা কয়েক হাজার টাকায় নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসন বলছে, এসব বিষয়ে তদন্ত চলছে,প্রমান মিললেই নেওয়া হবে ব্যবস্থা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার নাম রাসেল হোসেন। তিনি তার এই অফিসকে ঘুষ বাণিজ্যে পরিনত করেছে। জমির খারিজ,খাজনা প্রদান, নামজারির রেকর্ড সংশোধন সহ সব ক্ষেত্রেই টাকা ছাড়া মিলছে না কোন সেবা। সেবা গ্রহিতাদের খাজনার পরিমান দেখে চুক্তি করা হয় টাকা।
ভূক্তভোগীদের অভিযোগ প্রথমে খাজনা রশীদে টাকার পরিমান বেশী দেখান ওই সহকারী কর্মকর্তা,ঘুষ দিলে খাজনার পরিমান হয়ে যায় কয়েক শত টাকা। আবার ঘুষের টাকা না পেলে মাসের পর মাস হয়রানি হতে হয় সেবাপ্রত্যাশীদের। এসব কাজে ঐ কর্মকর্তার নিয়োগকৃত দালালরা বসেই থাকে সবসময় ওই ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। এমন তথ্যের সত্যতাও মিলেছে ওই অফিসে।
ভূক্তভোগী সুজাউল হোসেন বলেন,“আমার শ্বশুরের তিন খতিয়ান মিলে ১৫ শতাংশ জমির খাজনা দিতে গেছিলাম মিঠাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। তিন খতিয়ানে ৬৯ হাজার ৪১৪ টাকার খাজনা রশীদ দেয় ঐ তহশিলদার রাসেল হোসেন, পরে স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা ঘুষের বিনিময়ে তিন খতিয়ানে ৫৮৪২ টাকার খাজনার অনলাইন রশীদ হাতে পাই আমি। আমাকে ও আমার শ্বশুরকে বেকায়দায় ফেলে কেন ৩০ হাজার টাকা নেওয়া হলো। আমার প্রশ্ন? তারা বলে অটো সফটওয়ার খাজনার পরিমান কম বেশী করার সুযোগ নাই। তাহলে ঘুসের বিনিময়ে কিভাবে কমছে খাজনার হার। আমি সহ আমার মতো সাধারন অনেক কৃষকের কাছ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে রাসেল হোসেন। আমি এই প্রতারকের বিচার চাই।’
আরেক ভূক্তভোগী ফাতেমা বেগম বলেন, `আমি ভূমি অফিসে চেক তুলতে গেছিলাম,জমি রেজিস্ট্রি করবো চেক না হলে জমি রেজিস্ট্রি হবে না। তাই আমি চেক তুলতে গেছি মিঠাপুর ইউনিয়স ভূমি অফিসে আমার কাছে ২৮ হাজা টাকা চাইছে তহশিলদার রাসেল। আমি দিতে পারিনি। ২য় বার যায়ে আমার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে ৫৭১ টাকা চেকে তুলে দিয়েছে আমার হাতে। আমি পরে গিয়ে বলছি স্যার আমার চেকে ৫৭১ টাকা তুলে দেছেন বাঁকী টাকা ফেরৎ দেন,আমি গরীব মানুষ। তারা বলছে তাই কম নিছি আমরা। আমি আমার টাকা ফেরৎ চাই”।'
এদিকে ঘুষ দিয়ে সেবা পাওয়ায় এক ভূক্তভোগীর অভিযোগের পেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) সোহেল রানা সেখানে তদন্ত করতে গেলে ভূক্তভোগীদের তোপের মুখে পড়েন ওই ভূমি সহকারী কর্মকর্তা রাসেল হোসেন। এমন একটি ভিডিও ক্লিপ স্থানীয় এক সাংবাদিকের হাতে এলে অনুসন্ধানে নামা হয় কয়েকজনজন সাংবাদিক।
গত এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন ভূক্তভোগীর সাথে কথা বলা হয়। পাওয়া যায় তার নামে বিভিন্ন ঘুষ দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ। কেউ চাইলেন ঘুষের টাকা ফেরত আবার কেউ চাইলেন বিচার। তবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের তদন্ত ১৫ দিন পার হলেও অভিযুক্ত রাসেল হোসেনের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
মথুরাপুর ইউপির তৌহিদ হোসেন বলেন,“ আমার কাছে তিন খতিয়ান মিলে প্রথমে ৪ লাখ টাকার রশীদ দেয়,পরে এক মহুরীকে নিয়ে গেলে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে ২ হাজার ২০০ টাকার খাজনা রশীদ আমাকে দেয়। এই তহশিলদার এখনো কিভাবে এখানে আছে।ওর তো চাকরি থাকার কথা নয়। সেদিন এডিসি স্যার সময় স্বল্পতার কারনে আমাদের সময় দিতে পারে নি। সেদিন প্রায় ৪০-৫০ জন ভুক্তভোগী তাদের অভিযোগ নিয়ে আসছিলো এই মিঠপিুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে।
সচেতন মহলের প্রতিনিধি ফজলে মওলা, বকুল, নাজমুল সহ বেশ কয়েকজ ব্যক্তি বলেন, মিঠাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কেউ খাজনা দিতে গেলে প্রথমে মৌখিকভাবে বিশাল অংকের একটা কথা বলে ঐ ব্যক্তিকে ভয় দেখায়। পরে তার ঘুষের বিনিময়ে তার চেয়ে কম টাকার খাজনার চেক হাতে ধরিয়ে দেন। এগুলো ঠিক না। প্রশাসনের তদারকির মাধ্যমেএগুলো রোধ করা সম্ভব।
তবে ঘুষ নেওয়া বিষয়ে মিঠাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার অভিযুক্ত রাসেল হোসেন ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হয় নি।
এসব ঘুষ দুর্নীতির বিষয়ে বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইসরাত জাহান ছনির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি অভিযোগের ভিত্তিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক স্যার তদন্ত করছে তদন্ত রিপোর্টে ওনার বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ প্রমানিত হয়,সেই মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তদন্ত প্রতিবেদন ও ঘুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ওই অভিযুক্ত ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা রাসেল হোসেনের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সোহেল রানা বলেন,আমরা যে বিষয়টা অভিযোগ পেয়েছিলাম,আমি নিজে সেটা তদন্ত করছি। এখনো কাজ চলমান আছে। এখানে কিছু টেকনিক্যাল বিষয় আছে, সেখানে অনলাইন ভুমি উন্নয়ন কর বিষয় ছিলো,আমরা ভূমি উন্নয়ন প্রকল্পে চিঠি লিখেছি। সেটার রিপ্লে পাওয়ার পর আমরা বুঝতে পারবো,যে বিষয়টা কি এবং তার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর বাহিরে আর কিছু বলতে পারছি না।