
—ছবি মুক্ত প্রভাত
শুধু কদম ফুটেই থেমে থাকেনি এই বর্ষা। দিয়েছে আষাঢ়ের রিমঝিম বৃষ্টি। হিম শীতল বাতাস আর বৃষ্টির ফোটায় প্রাণপ্রকৃতি সেজেছে নতুন রূপে। বৃষ্টি আর কদমের সাথে এবার বাড়তি উপহার হিসেবে আষাঢ় দিয়েছে বিদ্যুৎখাতে আর্থিক সাশ্রয়। কিন্তু কীভাবে সেটি...?
উত্তর- ৩১ দিনে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের মতো উপহার দিয়েছে আষাঢ়। যে উপহারে ১ কোটি ১৬ লাখ ১৯হাজার ৮টাকা মূল্যের বিদু্যুৎ সাশ্রয় হয়েছে।
রাজশাহী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের হিসেব মতেÑ এই বর্ষার আষাঢ় মাসজুড়ে লাগাতার বৃষ্টি হয়েছে। ছাতা ছাড়া কোথাও বের হওয়ার সুযোগ ছিল না। ফলে রাজশাহী আবহাওয়া শীতল থাকায় শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) ও বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবহার একেবারেই কম ছিল। এতে করে গত বর্ষা মওসুমের তুলনায় এবার রাজশাহী শহরে ১ কোটি ১৬ লাখ ১৯হাজার ৮টাকা মূল্যের বিদু্যুৎ সাশ্রয় হয়েছে।
গত ছয় বছরের আষাঢ় মাসের বৃষ্টির তথ্য দিয়েছেন রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের সাবেক শিক্ষক নওগাঁর শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগার ও জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা জাহাঙ্গীর শাহ। তিনিই রাজশাহীতে নিয়মিত আবহাওয়ার তথ্য লিপিবদ্ধ করেন।
তার হিসেব বলছে, তিনি বিগত ১৩ বছর ধরে আবহাওয়ার ডায়েরি লিখছেন। এই ১৩ বছরের মধ্যে চলতি আষাঢ়ের মতো বৃষ্টি দেখেননি তিনি। এ বছর আষাঢ়ের প্রথম দিন থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। অব্যহত ছিল শেষ দিন পর্যন্ত। গত বছর আষাঢ়ে মাত্র ১ দিন বৃষ্টি হয়েছিল। ২০২৩ সালে ৩ দিন, ২০২২ সালে ৪ দিন, ২০২১ সালে ৬ দিন এবং ২০২০ সালে বৃষ্টি পাত হয়েছে মাত্র ৫দিন। গত ৫ বছরকে হার মানিয়েছে এবারের আষাঢ়ে বৃষ্টি।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস বলছে, গত বছরের আষাঢ় মাসে খরতাপ ছিল। সর্বোচ্চ তামপাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আজিজুল হক বলেন, মানুষের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকে ৩৬ দশমিক ৬ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। এর চেয়ে বেশি তাপমাত্রা মানুষের কাছে অসহনীয় হয়ে উঠে।
আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, এই আষাঢ়জুড়ে বৃষ্টিপাতের ফলে তাপমাত্রা কম ছিল। আষাঢ়ের ২৮ তারিখ পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা মানুষের শীরের ভেতরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়েও কম।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাজিব খান বলেন, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কম থাকলে গরমও কম লাগে। এ বছর ২৫ আষাঢ় দিনের সর্বোচ্চ তাপামাত্রা ছিল ২৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন ছিল ২৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি। আবহাওয়ার এই কম ব্যবধান থাকায় এই আষাঢ়ে তাপমাত্রা সহনীয় ছিল।
রাজশাহী ও পবা উপজেলার কাটাখালী এলাকায় সরবরাহকৃত বিদ্যুতের হিসেব থেকেই এ বছরের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের এই তথ্য পাওয়া গেছে। হিসেব বলছে, গত বছর আষাঢ় মাসে ১২ কোটি ৩০ লাখ ২৪ ইউনিট (কিলোওয়াট) বিদ্যুতের ব্যবহার হয়েছিল। ৭ টাকা ০৪৫ পয়সা প্রতি ইউনিটের মূল্য হিসেবে মোট খরচ হয়েছিল ৮৬ কোটি ৬৫ লাখ ৩৫ হাজার ১৬৯ টাক।
৭ টাকা ০৪৫ পয়সা প্রতি ইউনিটের মূল্য হিসেবে এই আষাঢ়ে ১২ কোটি ১৩ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৮ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়েছে। মোট খরচ হয়েছে ৮৫ কোটি ৪৯ লাখ ১৬ হাজার ১৬০ টাকা। এই হিসেবে এ বছরের আষাঢ়ে মোট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়েছে ১৬ লাখ ৪৯ হাজার ২৫৬ ইউনিট। টাকার যার মূল্য দাঁড়ায় ১ কোটি ১৬ লাখ ১৯ হাজার ৮টাকা।
রাজশাহী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, পাশ^বর্তী অন্য জেলার চেয়ে রাজশাহী শহরে বেশি এসি ও বৈদ্যুতিক ফ্যানের ব্যবহার হয়। তবে এ বছর আবহাওয়া শীতল থাকায় এসব এসি ফ্যান কম ব্যবহার হয়েছে। এ কারণে এই আষাঢ়ে ১ কোটি টাকার ওপরে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়েছে।