
—ছবি মুক্ত প্রভাত
"জাল নিবন্ধন সনদে ১৮বছরে চাকুরি; ৩০লাখ টাকা আত্মসাত শিক্ষিকা ফাতেমা বেগমের।"
জাল শিক্ষক নিবন্ধন সনদে ১৮বছর ধরে চাকুরী করার অভিযোগ উঠছে নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার কোলা বিজলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ফাতেমা বেগম মুক্তার বিরুদ্ধে।
১৮ বছরে জাল শিক্ষক নিবন্ধন সনদে সরকারি কোষাগার থেকে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা বেতন-ভাতা উত্তোলন করেছে। জাল নিবন্ধন সনদে চাকুরী ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় সবুজ হোসেন নামে এক ব্যক্তি নওগাঁ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর এ ব্যপারে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
স্থানীয়ভাবে ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে কীভাবে এমন অনিয়ম অব্যাহত থাকলো, আর শিক্ষা ব্যবস্থার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এতোদিন কী করছিল?
এর আগে কর্মস্থলে না এসেই মাসে পর মাস বেতন তোলার অভিযোগ উঠে এই শিক্ষিকা ফাতেমা বেগম মুক্তার বিরুদ্ধে।এ নিয়ে ২০২৪ সালের ৯ই জুন প্রতিদিনের সংবাদে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। ফাতেমা বেগম মুক্তার স্বামী আবু খালেদ বুলু ছিলেন উপজেলা ফ্যাসিস্ট উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি থাকায় সব ধামাচাপা পড়ে যায়।
জাল নিবন্ধন সনদে চাকুরী করার অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষক ফাতেমা বেগম মুক্তা নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগের বদলগাছী উপজেলার সভাপতি আবু খালেদ বুলুর স্ত্রী। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের বদলগাছী উপজেলার সভাপতি আবু খালেদ বুলু ক্ষমতা দেখিয়ে জাল নিবন্ধন সনদে স্ত্রীর চাকরী দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁর জেলার বদলগাছী উপজেলার কোলা বিজলী বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফাতেমা বেগম ২০০৬ সালে পাস করা একটি জাল শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দিয়ে সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে
নিয়োগ নিয়েছেন। ওই শিক্ষিকার শিক্ষক নিবন্ধন সনদের রোল নাম্বার দিয়ে খোঁজ করলে এনটিআরসিএ এর ওয়েবসাইটে সনদধারীর কোনো তথ্য আসে না। শুধুমাত্র ওই সনদের তথ্যই আসে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ফাতেমা বেগম মুক্তা কোলা বিজলী উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০০৮ সালে নিয়োগ নিয়ে এমপিওভুক্ত হয়ে তখন থেকে এ পর্যন্ত তিনি চাকরি করে সরকারি কোষাগার থেকে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা বেতন-ভাতা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন। এরমধ্যে তিনি গত ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে উচ্চতর স্কেলে বেতন নেন।
তার স্বামী ফাসিস্ট দল আওয়ামীলীগের উপজেলা সভাপতি হওয়ায় তিনি একটি জাল শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দিয়ে সবার অগোচরে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সহযোগিতায় চাকরি করে যাচ্ছেন।
সেই সনদ যাচাই করা হলে তার শিক্ষক নিবন্ধন সনদটি জাল বলে প্রমাণিত হবে। তার নিয়োগ কালীন শিক্ষক নিবন্ধন সনদ এর রোল নম্বর ২১০১০১১৭ এবং নিবন্ধন নম্বর ৬১০৪২২৮। সেই সনদের আবশ্যিক বিষয়ে প্রাপ্ত নম্বর ৪৩ এবং ঐচ্ছিক বিষয়ের প্রাপ্ত নম্বর ৪০। এবং তার ইনডেক্স নং জ১০৩৬৫৮৯।
এ ব্যপারে তথ্য চাইলে কোলা বিজলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পার্থ কুমার মন্ডল বলেন, আমার জানামতে তার সনদের কোন সমস্যা নেই।
এ ব্যপারে কোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান এডহক কমিটির সভাপতি ফিরোজ সরকার বলেন, আমি নতুন কমিটির সভাপতি হয়েছে আমি এ ব্যাপারে কিছু জানিনা। যদি জাল নিবন্ধন সনদ হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, আমি এই বিষয়ে ২২শে জুলাই একটি অভিযোগ পেয়েছি। সে অনুসারে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে তার সকল সনদের কপি জমা দিতে বলা হয়েছে। তার শিক্ষক নিবন্ধন সনদ যাচাই করে যদি জাল প্রমানিত হয় তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।