
গুরুদাসপুর (নাটোর): আহত নজরুল ইসলাম।-ছবি মুক্ত প্রভাত
গুরুদাসপুরের গোপিনাথপুর এন ইউ এস দাখিল মাদরাসার নৈশ্যপ্রহুরী পদের নিয়োগ আটকাতে নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সকাল দশটার দিকে মাদরাসা চত্বরে ওই হামলা চালানো হয়। এঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে হামলার শিকার হয়েছেন— গুরুদাসপুরের মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিম আক্তার, ডিজি প্রতিনিধি মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ওমর ফারুক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম (৫০)। এরমধ্যে গুরুত্বর আহত অবস্থায় নজরুল ইসলামকে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পর পরই ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক জানান, আহত নজরুল ইসলামের মাথার ডান পাশে ৩ সে.মি এবং বাম হাতের একটি আঙ্গুলের মাথা কেটে গেছে। এছাড়া বাম কানের নিচেও কেটে গেছে। তাছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে চিলে যাওয়ার চিহৃ রয়েছে।
মাদরাসা সূত্র জানিয়েছে, মাদরাসায় শূণ্য পদে একজন নৈশ্যপ্রহুরী নিয়োগদানের লক্ষ্যে ২৫ জানুয়ারি দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই পদে চাকরির জন্য গোপিনাথপুর গ্রামের রমিজুল ইসলালাম রান্টু, মো. বকুল হোসেন, মিজানুর রহমান ও সৌরভ হোসেন নামের চার প্রার্থী আবেদন করেন। আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ৫ সদস্যের নিয়োগ বোর্ড গঠন করা হয়। মূলত ডিজি প্রতিনিধির দেওয়া পূর্ব নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী শুক্রবার (১৬ জুন) বেলা ১১টার দিকে মাদরাসার একটি কক্ষে চাকরিপ্রার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছিল।
নিয়োগ বোর্ডে ছিলেন— পরিচালনা কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম, ডিজি প্রতিনিধি ওমর ফারুক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি স্থানীয় শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিম আক্তার, সদস্য সচিব সুপার আব্দুল কুদ্দুস ও শিক্ষক প্রতিনিধি সাহিদা খাতুন।
গুরুদাসপুর (নাটোর): হাসপাতালের বেডে আহত নজরুল ইসলাম।-ছবি মুক্ত প্রভাত
মাদাসার সুপার আব্দুল কুদ্দুস বলেন, নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের উপস্থিতিতে মাদরাসার একটি কক্ষে পরীক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছিল। নাজিরপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান শওকত রানা লাবুর লোকজন হঠাৎ করেই সেখানে প্রবেশ করে, পরীক্ষার্থীদের খাতা ছিনিয়ে নেন। বাধা নিষেধ করলে লবুর লোকজন নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালান। এতে তিনি নিজেও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন।
পরিচালনা কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম হাসপাতালে শুয়ে জানান, তাকে উদ্দেশ্য করে হামলা চালান সিরাজুল, হাফিজুর, সুরুজ, আব্দুল খালেক, রুহুল কুদ্দুস সুমন ও সমুন। প্রথমে মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করা হয়। একপর্যায়ে লোহার রড দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথারিভাবে মারপিট করা হয়। এতে তিনি কিছু সময়ের জন্য জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
তিনি বলেন, মূলত ওই নৈশ্যপ্রহুরী পদে নিজের পছন্দের লোক নিয়োগের জন্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শওকত রানা লাবু সুপারকে চাপ দিয়েছিলেন। সুপার তা মানেননি। একারণে নিয়োগ বন্ধ করতে তার লোক দিয়ে নিয়োগ বোর্ডের ওপর হামলা চালিয়েছেন।
তবে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শওকত রানা লাবু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শুক্রবার তার স্ত্রীর জানাজা ছিল। মূলত স্ত্রীর মৃত্যু তিনি শোকাতুর। অথচ রাজনৈতিকভাবে তার ওপরে দোষ চাপানো হচ্ছে।
গুরুদাসপুর মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিম আক্তার জানান, বিধি মেনেই তারা ওই প্রতিষ্ঠানে নৈশ্যপ্রহুরী নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে গিয়েছিলেন। পরীক্ষাচলাকালীন অতর্কিতভাবে নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের ওপর হামলা চালানো হয়।
নিয়োগ বোর্ডের ডিজি প্রতিনিধি মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের হিসাব সহকারি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, প্রায় ২০ পরীক্ষা অতিবাহিত হওয়ার পর ১০/১৫জন পরীক্ষা বন্ধ করতে বলেন। একপর্যায়ে পরীক্ষা স্থহিতও করা হয়। তারপরও নিয়োগবোর্ডের সদস্যদের আটকে রেখে মারধর করেন অভিযুক্তরা।
গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনোয়ারুজ্জামান বলেন, ঘটনার পর পরই মাদরাসা গিয়েছিলেন তিনি। এসময় কিছু আলামতও জব্দ করা হয়। মামলা হলেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।