
—ছবি মুক্ত প্রভাত
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার পাঁকা বাজারের পরিচিত মুখ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অচিন্ত পাল, এখন এক অনিশ্চিত ও আতঙ্কময় সময় পার করছেন।
সম্প্রতি রাতের অন্ধকারে ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে তিনি যেমন অর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তেমনি মামলা করার পর থেকে নানা হুমকি-ধামকির মুখে পড়েছেন। ফলে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে চরম উদ্বেগে রয়েছেন এই সংখ্যালঘু ব্যবসায়ী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাঁকা বাজারে একটি মুদিখানার দোকানের পাশাপাশি বিকাশ, ফ্লেক্সিলোড ও অন্যান্য সেবা পরিচালনা করেন অচিন্ত পাল। ঘটনার রাতে, আনুমানিক সাড়ে দশটার দিকে দোকান বন্ধ করে যখন মাত্র কোয়ার্টার কিলোমিটার দূরের বাড়িতে ফিরছিলেন, তখন গেটের সামনে ওৎ পেতে থাকা একই এলাকার কয়েকজন যুবক তার ওপর হামলা চালায়।
প্রধান অভিযুক্ত ফাইসালসহ আরও কয়েকজন তার মাথায় আঘাত করে এবং সঙ্গে থাকা নগদ প্রায় দুই লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরিবারের সদস্যরা তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। পরে কোনো প্রতিকার না পেয়ে বাধ্য হয়ে তিনি বাগাতিপাড়া মডেল থানায় মামলা করেন।
মামলা করে নতুন বিপদ চেপে বসে তাকে। মামলার প্রধান আসামি ওই বাজারের নাইডগাড জয়নালের ছেলে ফাইসালকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি বরং আরও জটিল হয়েছে। অচিন্ত পালের অভিযোগ, মামলার পর থেকেই তার ওপর চাপ ও হুমকি বাড়ছে। অভিযুক্তদের আত্মীয়-স্বজন এবং এলাকার কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্যরা তাকে মামলা তুলে নিতে ভয় দেখাচ্ছে।
তিনি বলেন, “আমাকে মামলা তুলে নিতে বিএনপির স্থানীয় নেতা সুজন ও আরিফ সহ অন্যরা চাপ প্রয়োগ করে।আমি হিন্দু সংখ্যালঘু মানুষ, সারা জীবন শান্তিতে ব্যবসা করে এসেছি। এখন মনে হচ্ছে কেউ পাশে নেই। নিজের জীবনেরও নিরাপত্তা নেই।”
অচিন্ত পালের ছোট ভাই বলেন, “আমি দাদার পেছনে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ কয়েকজন এসে দাদার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর দাদা অসুস্থ হয়ে পড়ে।”
এ বিষয়ে বাগাতিপাড়া মডেল থানার ওসি (তদন্ত) রিয়াজুল ইসলাম জানান, “মামলার প্রধান আসামি ফাইসালকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।আর বাদিকে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।”
স্থানীয় বাজার কমিটির কয়েকজন সদস্যসহ সচেতন মহল জানান, “একজন দীর্ঘদিনের ব্যবসায়ীর ওপর এমন হামলা ও পরে মামলা তুলে নিতে হুমকি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। প্রশাসনের উচিত বাদিকে নিরাপত্তা প্রদান ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।”
অচিন্ত পালের কণ্ঠে আজ হতাশা, ভয় ও নিরাপত্তাহীনতার স্পষ্ট ছাপ। তিনি শুধু অর্থ ফেরতের দাবি করছেন না, চাইছেন নিজের অস্তিত্বের নিরাপত্তা। প্রশাসন ও সমাজ কীভাবে তার পাশে দাঁড়ায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।