
—ছবি মুক্ত প্রভাত
মাটির চুলায় লাকড়ি দিয়ে রান্না করছিলেন জুলেখা বেগম। তার সঙ্গেই চুলার পাড়ে বসেছিল দুই বছরের ছোট্ট শিশু মদিনা খাতুন। হঠাৎ জ্বালানি লাকড়ির একটি জ্বলন্ত অংশ এসে শিশুটির বুকে আঘাত করে। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে শিশু মদিনা। হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।
শিশু মদিনা গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজিপুর ইউনিয়নের পিঁপলা গ্রামের আব্দুস সামাদের কন্যা। নিজেদের বাড়িতেই সকালের খাবার রান্নার সময় মঙ্গলবার সাড়ে আটটার দিকে মায়ের কোলেই শিশুটির করুণ মৃত্যু হয়। শিশুর এমন করুণ মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না আব্দুস সালাম ও জুলেখা দম্পতি। শিশুটির জামাকাপড় হাতে নিয়ে বিলাপ করে কাঁদছেন।
শিশুটির মা জুলেখা বেগম বিলাপ করতে করতে বলেন, বড় আদরের মেয়ে ছিল মদিনা। রান্নার সময় প্রায়শই তার পাশে বসে থাকতো। এ দিন রান্নার সময় তিনি বাঁশের টুকরা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছিলেন। একপর্যায়ে আগুনে বাঁশের গিরা ফেটে গিয়ে মদিনার বুকে এসে লাগে। এসময় শব্দও হয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে তার বুকের ধন মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ে। শিশুটিকে তিনি বুকে জড়িয়ে হাসপাতালেও এনেছিলেন। কিন্তু শত চেষ্টার পরও মেয়েকে বাঁচাতে পারেননি। নিজের হাতের ওপর সন্তানের মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি।
গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত অর্থপেডিক্স চিকিৎসক শরিফুল ইসলাম বলেন, সকাল ৯টার দিকে শিশুটিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। শিশুটির বুকের বাঁ পাশে আঘাতের পোড়া চিহ্ন ছিল।
বাড়িরর বাড়ান্দায় আদরের মেয়ের লাশ সামনে রেখে মাথায় হাত দিয়ে বসেছিলেন আব্দুস সামাদ। মেয়ের মৃত্যুতে তিনি নিরব নির্বিকার হয়ে পড়েছেন। কখনো কখনো মেয়ের নাম ধরে ডুকরে কাঁদছেন।
তিনি বলেন, ‘চঞ্চল স্বভাবের ছিল মদিনা। গলা জড়িয়ে কত বায়না করতো। মদিনার মৃত্যু আমাকে সর্বশান্ত করে দিল। এখন আমি কি নিয়ে বাঁচবো।’
খুবজিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম দোলন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এভাবে শিশু মৃত্যুর ঘটনা খুবই বেদনা দায়ক। ফুটফুটে শিশু মদিনার মৃত্যুতে প্রতিবেশিরাও শোকাহত হয়ে পড়েছেন। শিশুর শোকে মাঝে মাঝে মূর্ছা যাচ্ছেন মা জুলেখা বেগম।
গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসমাউল হক বলেন, শিশুটির মৃত্যু নিয়ে পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।