
—ছবি মুক্ত প্রভাত
একটি মারামারি মামলা থেকে আমেরিকা প্রবাসী সন্তান রাসেল হোসাইনের নাম বাদ দিতে মোবাইল ফোনে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবির ঘটনায় গুরুদাসপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু জাফর মৃধাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাটোরের পুলিশ সুপার।
বুধবার সকালে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন জানান,‘অভিযোগটি পাওয়ার পর মঙ্গলবারই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় ওই পুলিশ সদস্যকে রাতেই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া গুরুদাসপুর থানা থেকে প্রত্যাহার করে নাটোর পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে মোবাইলে কথোপকথনের মাধ্যমে ঘুষ দাবির একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ছড়িয়ে পড়া ওই অডিওতে কথোপকথনের এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্য আবু জাফরকে বলতে শোনা যায়- ‘মামলা থেকে নাম বাদ দিতে, সম্পূর্ণ কমপ্লিট করতে ৫ লাখ টাকার নিচে হবে না। আপনি জানেন চার পাঁচটা দপ্তরে টাকা দিতে হবে। আমি তো একা নাম কাটতে পারবো না। নাম বাদ দিতে গেলে এসপি স্যার, সার্কেল স্যার, ওসি স্যার আমাকে ডাকতে পারে। ঈদের আগে আপাতত ১ লাখ টাকা দিবেন। আসামীর বাড়িতে পুলিশ যাবেনা। আমি মামলার আয়ু আমিও যাবনা। মনে করলে একবারেও টাকা দিতে পারেন। কত টাকা দিতে পারবেন বলেন। হলে হবে না হলে নাই। মামলা থেকে নাম বাদ দিতে গেলে আমি একা পরবো না।’
ঘুষ চাওয়ার ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরে নাটোরের পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলা গোলাম রাব্বি। গোলাম রাব্বি গুরুদাসপুর পৌর সদরের আনন্দ নগর মহল্লার রবিউল করিমের ছেলে। ঘুষ দাবির ওই অডিও ক্লিপে গোলাম রাব্বির সঙ্গে সোমবার (২ জুন) বিকালে এবং রাতে এসআই আবু জাফরকে দুই দফায় ৫ মিনিট কথা বলতে শোনা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে- প্রবাসী রাসেল হোসাইন উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের খাকড়াদহ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ রবিউল করিমের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকায় থাকেন। তবে গুরুদাসপুর পৌর সদরের চাঁচকৈড় বাজারে ‘রাশ আবরান স্টাইল শপিং মল’ নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার।
ওই প্রতিষ্ঠানেই ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করেন গোলাম রাব্বি। রাসেলের সাথে পুরনো কোন্দলের জেরে সম্প্রতি ইটভাটা ব্যবসায়ী ফরিদ মোল্লার ছেলে রুবেলকে মারধর করা হয়। রুবেল আমেরিকা প্রবাসী রাসেলেরই বন্ধু। ওই ঘটনার জেরে রাসেলকে ১ নম্বর আসামি করে গুরুদাসপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ফরিদ মোল্লা। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান গুরুদাসপুর থানার এসআই আবু জাফর মৃধা। মামলা থেকে রাসেলের নামটি বাদ দিতে চেষ্টা তদবির করছিলেন তার স্বজনেরা।
গোলাম রাব্বি জানান, প্রবাসী রাসেলের পক্ষ থেকে মামলার বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছিলেন। কয়েকদিন ধরেই এসআই জাফর বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি দেখাচ্ছিলেন। দেশে এলে রাসেলকে গ্রেপ্তারের হুমকিও দিচ্ছিলেন। সবশেষ সোমবার ৫লাখ টাকা দাবি করেন এসআই। সেই প্রস্তাবে তারা রাজি হননি। কৌশলে এসআইয়ের কথোপথনটি রেকর্ড করেছেন। সেসব প্রমাণাদিসহ প্রতিকার পেতে তিনি জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
আমেরিকা প্রবাসী রাসেল হোসাইন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানান, বিদেশে থেকেও তিনি মারামারি মামলার আসামি হয়েছেন। অথচ নাম কাটতে পুলিশ কর্মকর্তা ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছেন। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে ঘুষের প্রস্তাব পেয়ে লজ্জিত এবং ব্যথিত। তিনি ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে এসআই আবু জাফরের মতো দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তার বিচার দাবি করেন।
অভিযুক্ত এসআই আবু জাফর মৃধা ঘুষ দাবির বিষয়টি অস্বীকার করে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘মামলা থেকে নাম কাটার বিষয়ে আমি কারো কাছে টাকা চাইনি। এসব অভিযোগ সত্য নয়।’
গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসমাউল হক ‘বিষয়টি নিয়ে এসপি সাহেবের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। অডিও ক্লিপে ওসির নামটিও উঠে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই।’
নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন জানান,‘অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’