
—ছবি মুক্ত প্রভাত
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. শরীফুল ইসলামের বিরুদ্ধে বেসরকারি এতিমখানার ক্যাপিটেশন গ্রান্ট প্রদানের ক্ষেত্রে জনপ্রতি এক হাজার টাকা করে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং উদ্বেগজনক।
এই অভিযোগ শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের নয়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মরহুম আব্দুল বারী মল্লিক হাফিজিয়া মাদ্রাসা এতিমখানা, ফিংড়ি কাছারি বাড়ি হাফিজিয়া এতিমখানা, শিমুল বাড়িয়া এতিমখানা, ভালুকা চাঁদপুর এতিমখানা, আইফুল বেগম মেমোরিয়াল কমপ্লেক্স ও এতিমখানাসহ ২৭টি এতিমখানার অন্তত ৬৭৭ জন এতিম শিশুর জীবন-জরুরি অর্থ বরাদ্দকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে এই অনিয়মের জাল।
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে চেক প্রদানকালে ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি নিয়ে চলছে নানান আলোচনা-সমালোচনা। এদিকে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে অভিযোগকারী প্রতিষ্ঠান সমূহের কর্মকর্তাদের নিকট থেকে সিলসহ স্বাক্ষর করিয়ে রেখেছেন ঐ কর্মকর্তা।
প্রবাদে আছে, ‘ ঠাকুর ঘরে কে, আমি কলা খাই নি’ সমাজসেবা অফিসার শরীফুল ইসলামের কান্ড অনেকটা এই প্রবাদের সাথে মিল আছে। উনি বলছেন, ‘অনৈতিকভাবে কারও নিকট কোন অতিরিক্ত টাকা চাওয়া হয়নি, বা নেন নি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি অতি সতর্কভাবে নিজের অপরাধ নিজেই ফাঁস করে দিচ্ছেন।
সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় যোগদানের আগে খুলনার কয়রা উপজেলায় কর্মরত থাকাকালীন সমাজসেবা অফিসার মোঃ শরীফুল ইসলামের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ও তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। সম্প্রতি সাতক্ষীরায় যোগদানের পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অনৈতিকভাবে অর্থ গ্রহণের বিষয়টি সুস্পষ্ট।
অভিযোগকারী এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, সমাজসেবা বিভাগের মতো একটি সংস্থার কাজ হওয়া উচিত সমাজের সবচেয়ে দুর্বল জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানো। অথচ এখানে ঘটেছে ঠিক তার উল্টো। সরকারি সহায়তা গ্রহণ করতে গিয়েও এতিমখানা কর্তৃপক্ষকে অর্থ প্রদান করতে বাধ্য হওয়াটা শুধুই দুর্নীতি নয়, এটি একটি মানবিক অপরাধও। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন দুর্নীতির গভীরতা ও নিষ্ঠুরতা স্পষ্ট হয়েছে, অন্যদিকে প্রশ্ন উঠেছে- এই অবিচার বন্ধে কার্যকর তদারকি কোথায়? একজন কর্মকর্তা কীভাবে দিনের পর দিন এতিমদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ থেকেও ভাগ বসানোর সাহস পায়?
ভুক্তভোগীদের দাবী, এই অভিযোগের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক এবং দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক। শুধু চাকরিচ্যুতি নয়, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
তা না হলে, প্রশাসনিক দুর্নীতির এ দুষ্টচক্র কখনোই ভাঙবে না। সমাজসেবার নাম করে যারা দুর্নীতিকে পুঁজি করে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করছে, তাদের বিচারের মুখোমুখি করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আর সমাজের পক্ষ থেকে আমাদের দায়-এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে একসঙ্গে দাঁড়ানো।
উল্লেখ্য, বেসরকারি এতিমখানা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সমাজসেবা অধিদফতর হতে সহযোগিতা প্রদান করা হয়। দরিদ্র এতিম শিশুদের মানবসম্পদে পরিণত করতে সরকারি উদ্যোগে বেসরকারি এতিমখানা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বর্তমানে নিবন্ধকৃত ৪,০১২ টি বেসরকারি এতিমখানায় নূন্যতম ১০ জন এতিম অবস্থান করে এই রকম প্রতিষ্ঠানকে র্সবোচ্চ ৫০% এতিমের জন্য ক্যাপিটেশন গ্রান্ট দেওয়ার সুযোগ বিদ্যমান রয়েছে। ২০১৯-২০২০ র্অথ বছর হতে নিবাসিদের মাথাপিছু মাসিক ২,০০০ টাকা করে সরকারি অনুদান দেওয়া হয়, যার বিভাজন: খাদ্য বাবদ ১,৬০০ টাকা, পোষাক বাবদ ২০০ টাকা এবং চিকিৎসা ও অন্যান্য বাবদ ২০০ টাকা।