-1686401066.jpg)
গুরুদাসপুর (নাটোর): মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।-ছবি মুক্ত প্রভাত
ভূয়া দলিয়ে গুরুদাসপুরের হাঁসমারি ফোরকানিয়া মাদরাসার জমি দখলে নিতে এলাকাবাসীর নামে মামলা দায়ের করেছেন সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। মাদরাসার শিক্ষকসহ গ্রামের ২০জন সাধারণ মানুষকে মামলাটিতে আসামি করা হয়েছে। মিথ্যা মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী।
আাজ শনিবার সকাল দশটার দিকে গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের হাঁসমারি ফোরকানিয়া মাদরাসার সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৫‘শর বেশি মানুষ।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের কথা চিন্তা করে হাঁসমারি ফোরকানিয়া নামে একটি দ্বিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করা হয় ১৯৬৮ সালে। মাদরাসাটির নামে ভিটাসহ প্রায় ৫ বিঘার মতো কৃষি জমিও রয়েছে। দ্বিনি শিক্ষার পাশাপাশি ২০০৩ সালের দিকে ওই প্রতিষ্ঠানে সতন্ত্র এবতেদায়ি পর্যায়ের শিক্ষা চালু করা হয়। দীর্ঘ বছর ধরে একই সাথে দুই শাখার শিক্ষা কার্যক্রম চলে আসছিল।
গুরুদাসপুর (নাটোর): মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।-ছবি মুক্ত প্রভাত
মাদরাসার জমিদাতা আজিমুদ্দিন জানান, ১৯৬৯ সালে তিনি ফোরকানিয়া মাদরাসার নামে জমি দান করেছিলেন। অথচ সাইফুল ইসলাম জমিটি দখলে নিয়ে এবতেদায়ি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করতে হামলা-মামলাসহ গ্রামবাসীকে নানাভাবে হয়রানি করছেন।
স্থানীয় মনিরুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান, মোহাম্মদ আলী, খুরদেশ আলমসহ অন্তত ৫০ জন অভিযোগ করেন, বেশকিছুদিন আগে ফোরকানিয়া ও এবতেদায়ি মাদরাসার দুই শাখার সভাপতি করা হয় স্থানীয় সাইফুল ইসলামকে। সাইফুল ইসলাম সভাপতি হওয়ার পর তার আত্মীয়দের এবতেদায়ি শাখায় চাকুরি দেন। একপর্যায়ে ফোরকানিয়া মাদসার কার্যক্রম বন্ধের চাপ দেন এলাকাবাসিকে। ওই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এলাকাবাসির সাথে সাইফুল ইসলমের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। দ্বন্দ্বের জেরে এলাকাবাসি সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি পরিবর্তন করে স্থানীয় আশরাফুল ইসলামকে সভাপতির দায়িত্ব দেন।
হাঁসমারি ফুরকানিয়া মাদরাসার বর্তমান সভাপতি আশরাফুল ইসলাম জানান, নানা অনিয়মের কারণে সাইফুল ইসলামকে সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। একারণে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ফুরকানিয়া মাদরাসার ৮.৫ শতাংশ জমি ১৯৭০ সালের তারিখ দেখিয়ে হাঁসমারি সতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসার নামে জাল দলিল প্রস্তুত করেন। সরকারি বালামে সাইফুলের দলিলের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, হাঁসমারি সতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসার নামে করা দলিল বলে সাইফুল ইসলাম প্রতিষ্ঠানটি দখলের চেষ্টা করেন চলতি বছরের ১৫ মার্চ। ওইদিন দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পড়ে সাইফুল ইসলামের পক্ষে স্থানীয় লুৎফর রহমানের ছেলে নয়ন পারভেজ বাদী হয়ে গুরুদাসপুর থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় গ্রামের আশরাফুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম, আবদুস সালাম, জাহিদুল ইসলাম, আজিমুদ্দিন, আবদুল মান্নানসহ ২০ জনকে আসামি করা হয়েছিল। আসামিরা জামিনে রয়েছেন।
ফোরকানিয়া মাদরাসার শিক্ষক জাদিুল ইসলাম জানান, গ্রামের কবরস্থান, ঈদগাহ এবং মাদরাসার কমিটিতে থেকে ধর্মীয় এসব প্রতিষ্ঠানে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেছেন সাইফুল ইসলাম। সবশেষ মাদরাসার অর্থআত্মসাত, জমি দখলে নিতে জাল দলিল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিভক্ত করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে সাইফুল ইসলামকে বাদ দিয়ে বিধি মোতাবেক ফোরকানিয়া ও এবতেদায়ি মাদরাসার সভাপতি পরিবর্তন করে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
তবে অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নিয়োগ বাণিজ্য, জাল দলিলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জমি দখলের চেষ্টাসহ যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, তা প্রতিহিংসা পরায়ণ। প্রকৃতপক্ষে মাদরাসা নিয়ে দ্বন্দ্বের ফলে তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করা হচ্ছে। মূলত বিধি মোতাবেক তিনিই ওই প্রতিস্ঠানের সভাপতি।