
নতুন এই প্রজননকেন্দ্রে ঘড়িয়াল আনা হয়েছে।—ছবি মুক্ত প্রভাত
দেশের প্রথম ঘড়িয়াল প্রজননকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে রাজশাহীতে। প্রজননের উদ্দেশ্যে গাজিপুর সাফারি পার্ক থেকে একজোড়া ঘড়িয়াল জুটিকে আনা হয়েছে নতুন এই প্রজননকেন্দ্রটিতে। এখন অপেক্ষা প্রজনন মওসুমের। ঘড়িয়ালের যে জুটিকে আনা হয়েছে এখনো তাদের নাম দেওয়া হয়নি।
ঘড়িয়ালের প্রজননকাল ডিসেম্বর থেকে জুলাই পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে টেডিং, ডিম দেওয়া ও বাচ্ছা ফুটায় ঘড়িয়ালরা। আগামী প্রজনন মওসুমকে কেন্দ্র করে সব ধরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ বলছে, দেশের প্রচলিত কুমিরের প্রজননকেন্দ্র কেবল সুন্দরবনেই রয়েছে। কিন্তু ঘড়িয়াল প্রজননকেন্দ্র ছিলনা। তবে রাজশাহীতে দেশের প্রথম ঘড়িয়াল প্রজননকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। ঘড়িয়াল মূলত লম্বা তুন্ডযুক্ত বিরল প্রজাতির শান্ত স্বভাবের উপকারী জলজ সরিসৃপ প্রাণি। তবে বাংলাদেশে ঘড়িয়াল এখন মহাবিপন্ন বন্য প্রাণী। ফলে এটিকে বন্য প্রাণি (সংরক্ষন ও নিরাপত্তা) আইন ২০২২ এর অন্তর্গত রক্ষিত প্রজাতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দেশে এতোদিন এর প্রজননকেন্দ্র ছিলনা। নতুন প্রজননকেন্দ্রটির সামনে ঘড়িয়াল সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য লেখা রয়েছে। দেওয়া হয়েছে সতর্কতাও।
ঘড়িয়াল প্রজননকেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়েছে রাজশাহীর জিয়া শিশুপার্ক সড়কের বন বিভাগের পবা নার্সারির রেসকিউ সেন্টারে। গত সোমবার দেশের প্রথম এই ঘড়িয়াল প্রজননকেন্দ্র্রটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসেন চৌধুরী।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বন বিভাগের প্রকল্প পরিচালক ও উপপ্রধান বন সংরক্ষক গোবিন্দ রায়, বন বিভাগের ঢাকা অঞ্চলের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন সংরক্ষক মো. ছানাউল্ল্যা পাটওয়ারী, বগুড়া সামাজিক বন অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. সুবেদার ইসলাম, রাজশাহী সামাজিক বন বিভাগ ও বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রফিকুজ্জামান শাহ্, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এ এম সালেহ রেজা, আইইউসিএন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর এ বি এম সরোয়ার আলম।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এতো দিন রাজশাহী কেন্দ্রীয় উদ্যানের পুকুরে দুটি ঘড়িয়াল ছিল। এই দুটি ঘড়িয়ালই ছিল মেয়ে। ২০১৭ সালের ১৩ আগস্ট দুজনের সঙ্গী পরিবর্তন করা হয়। মেয়েটির নাম রাখা হয় ‘পদ্মা’ আর ছেলে ঘড়িয়ালটির নাম দেওয়া হয় ‘গড়াই’।
রাজশাহী চিড়িয়াখানার কিউরেটর ও ইনজার্চ ফরহাদ উদ্দিন বলেন, ঘড়িয়াল এখন বিলুপ্তির পথে। প্রায় ৮ বছর আগে রাজশাহীর কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার আবদ্ধ জায়গায় বিলুপ্তপ্রায় ঘড়িয়াল প্রজননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এই দীর্ঘ সময়ে বারবার পানিতে ডিম দেওয়ায় ডিম নষ্ট হয়েছে। ফলে প্রজনন ব্যর্থ হয়েছে। একারণে এবার তাঁরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন—মেয়ে ঘড়িয়াল পদ্মাকে নতুন প্রজননকেন্দ্রে আর ছেলেটিকে গাজীপুরে দেবেন।
আইইউসিএনের মুখ্য গবেষক এ বি এম সারোয়ার আলম বলেন, দেশে এর আগে কোথাও ঘড়িয়ালের ‘ক্যাপটিভ ব্রিডিং’ হয়নি। রাজশাহীতে যদি প্রজনন সফল হয়, তাহলে এটি হবে বিরল ঘটনা।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, উপমহাদেশীয় এই কুমির গঙ্গা ছাড়াও উপমহাদেশের অন্যান্য বড় নদীতেও বাস করতো। বাংলাদেশে পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও সেগুলোর শাখায়ও একসময় প্রচুর ঘড়িয়ালের আবাস ছিল। কিন্তু আবাসস্থল ধ্বংস হওয়ার কারণে বাংলাদেশে প্রজননক্ষম ঘড়িয়াল বিলুপ্তির পথে। এরা সাধারণত মাছ, জলজ প্রাণি, পোকামাকড়, ব্যাং ও কাকড়া খেয়ে বেঁচে থাকে। এদের আয়ুকাল হয় ৫০ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত। ঘড়িয়ালের মূল আবাসভূমি গঙ্গা নদী বলে এর বৈজ্ঞানিক নামকরণও হয়েছে গঙ্গার নামে।
রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রফিকুজ্জামান শাহ্ বলেন, আগের প্রচেষ্টায় প্রজনন ব্যার্থ হলেও এবার তারা ঘড়িয়াল প্রজনন নিয়ে আশাবাদি। আগামী প্রজনন মওসুমকে সামনে রেখে সব ধরণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।