
-ছবি মুক্ত প্রভাত
ঈদ মানে আনন্দ। তার সাথে বাড়তি উৎসব ঈদ মেলা। তবে এ মেলা দেশের সবস্থানে হয় না। এ দিক থেকে প্রায় ৫ শ’ বছর যাবত ঐতিহ্য ধারণ করে চলেছে রাজশাহীর বাঘাবাসী। ঈদের দিন থেকে শুরু হয় এ মেলা। চলে প্রায় সপ্তাহ ব্যাপী।
এ দিক থেকে (৭ মার্চ) সোমবার এ মেলাটি শেষ হলো। এ মেলায় শুধু বাঘাবাসী নয়, আশপাশের বিভিন্ন উপজেলার মানুষের মধ্যে ঈদ আনন্দের সঙ্গে বাড়তি আনন্দের খোরাক যোগায় মাজার কেন্দ্রীক “ওরশ মোবারক’’।
মেলায় বসে সার্কাস,নাগর দোলা, রাডার, ট্রেন ভ্রমন, দোলনা, হরেক রকমের খেলনা সমাগ্রী, দুর-দুরান্ত থেকে আগত মিষ্টির দোকান সহ হরেক রকম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্যমতে, ধর্মীয় এ মেলায় বিগত সময়ে অশ্লীলতার নামে জ্যান্ত পুতুল নাচ এবং যুয়ার আসর-সহ ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে অতিরিক্ত টোল আদায়ের নজির রয়েছে। তবে এবার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই মেলা। ফলে খুশি হয়েছেন ধর্মপ্রান মানুষ। প্রশংশিত হয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন ।
রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী ও পুরাকৃতী সমৃদ্ধ উপজেলা হিসেবে প্রসিদ্ধ বাঘা উপজেলার ঈদ মেলার ঐতিহ্য প্রায় ৫শ বছরের। মুলত: ঈদের ১০ দিন আগ থেকেই শুরু হয় মেলায় আয়োজন। প্রতি বছর মাজার পরিচালনা কমিটি এ মেলার দায়িত্ব বহন করে থাকেন।
মাত্র এক সপ্তাহের জন্য এ মেলাটি ইজারা প্রদান করা হলেও কোনো কোনো বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে এ মেলার স্থায়ীত্ব আরো বেড়ে যায়। তবে এবার স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারীতে (৭ মার্চ) সোমবার এ মেলাটি শেষ হলো। এ বছর এই মেলাটি ইজারা নিয়ে ছিলেন স্থানীয় যুবদল নেতা শফিকুল ইসলাম(শফি)।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, আব্বাসীয় বংশের হযরত শাহ মোয়াজ্জেম ওরফে শাহদৌলা (রাহ:) ও তার ছেলে হযরত আবদুল হামিদ দানিসমন্দ (রাহ:) এর সাধনার পীঠস্থান রাজশাহীর বাঘা।
আধ্যাত্মিক এ দরবেশের ওফাত দিবস উপলক্ষে প্রতি বছর ঈদ-উল-ফিতরে আরবি শওয়াল মাসের ৩ তারিখে ধর্মীয় ওরস মোবারক উৎসবকে সামনে রেখে বাঘা ওয়াকফ এস্টেটের উদ্যোগে বিশাল এলাকা জুড়ে আয়োজন করা ঈদের নামাজ ও ঈদ মেলা। যার কমতি নেই এবারও । এ মেলায় দুর দুরান্ত থেকে ঘুরতে আসেন আবাল বৃদ্ধ-বনিত। মেলাকে ঘিরে আয়োজন করা হয়, সার্কাস , নাগরদোলা, রাডার, মৃত্যুকূপ মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার খেলা ইত্যার্দি।
এছাড়া বিভিন্ন খেলাধূলারও আয়োজন করা হয়। এবারো একই নিয়মে সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। বসেছে হরেক রকম মিষ্টির দোকান। শুধু তাই নয়, মেলা প্রাঙ্গণে ওরস মোবারককে ঘিরে সারারাত ধরে মাজার এলাকায় চলেছে ভক্তদের জিকির ও সামা কাওয়ালি।
বিভাগীয় রাজশাহী শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিন-পূর্ব সীমান্ত ঘেঁষা মানুষ গুলোর আনন্দ বাঘার ঈদমেলাকে ঘিরে। তাই এই মেলা এখানকার মানুষের কাছে অনেক অবেগ এবং গভীর আগ্রহের। পুরনো স্মৃতির পটভূমিতে নতুন করে আঁচর কাটে ঈদমেলা।
বছর ঘুরে তাই এই দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকে সবাই। যাদের স্বজনরা সীমান্তের ওপারে থাকেন, তারাও বছরের নির্দিষ্ট এ সময়টা বেছে নেন একে-অপরের সঙ্গে দেখা করার। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাদের বসবাস তারাও ছুটে আসেন এ মেলায়।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, পাপ মোচন ও পূণ্য লাভের আসায় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ বাঘায় আসেন পবিত্র ওরস মোবারকে অংশ নিতে। ঈদের দিন মাজার কর্তৃপক্ষের আয়োজনে বিশাল জামাতে নামাজ আদায়সহ সু-বিশাল দিঘীতে গোসল এবং পরবর্তী সময় ৫ শ বছরের ঐতিহ্যবাহী শাহী মসজিদে নামাজ আদায় করেন পাপ মোচন করতে।
বাঘা মাজার পরিচালনা কমিটির সহ সভাপতি ও মেলা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাম্মি আক্তার বলেন, 'ঈদ মেলার জৌলুস প্রতি বছরই বাড়ছে। বাড়ছে লোক সমাগম। মূলত: বছরের এই সময়টির জন্য অসংখ্য মানুষ অপেক্ষা করে থাকেন। মেলা দেখতে আসেন পর্যটকরাও। এতে বাঘার ঈদ মেলা লাখো মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। আমরা মেলা কমিটি, থানা পুলিশ ,আনছার ও জেলা থেকে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োগের মাধ্যমে এবার শান্তিপুর্ণ ভাবে মেলাটি সু-সম্পন্য করতে পেরেছি।'