
জনবল সংকটে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। রোগীর তুলনায় ডাত্তার ও নার্স অপ্রতুল থাকায় অসন্তষ্ট চিকিৎসা প্রার্থীগণ। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল খাতা কলমে ৫০০শয্যা হলেও এখানে জনবল সরবারহ আছে ২৫০ শয্যার।
অপরদিকে ৫০০শয্যার হাসপাতাল হলেও এক্সট্রা বেডে রোগী থাকে প্রায় ডবল। এতো অধীক রোগী হওয়ায় সেবা দিতে হিমসিম খাচ্ছে নার্স ও ওয়ার্ডবয়রা। প্রাপ্ত তথ্যে জানাযায়, সামেক হাসপাতালে মোট মঞ্জুরীকৃত নার্সিং পদের সংখ্যা ২৬১ জন।
যার বিপরীতে কর্মরত আছে মোট ২২৪ জন। আর ৩৭টি পদ এখন পর্যন্ত শূন্য আছে। শূন্য পদের মধ্যে আছে সেবা তত্ত্বাবাধায়ক একজন, সিনিয়র স্টাফ নার্স ৩০জন, মিডওয়াইফ ছয়জন।
এর মধ্যে প্রধান সেবা তত্ত্বাবাধায়ক একজন ও মিডওয়াইফ ছয়জনের পুরা পদই খালি। উপ সেবা তত্ত্বাধায়ক প্রধান সেবা তত্ত্বাবাধায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। কর্মরত সিনিয়ার স্টাফ নার্সদের মধ্যে আবার মাতৃকালিন ছুটিতে আছেন ১৩জন আর বিএসসি জন্য ছুটিতে আছেন ১৯জন মোট ৩২জন। সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ২৪৫জন সিনিয়র স্টাফ নার্সের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১৮৩জন।
পরিসংখ্যানে জানাযায়, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে আউটডোরে ৩০ থেকে ৩৫জন ও জরুরী বিভাগে ৩৫ থেকে ৪৫জন রোগী ভর্তি হয়। সেক্ষেত্রে প্রতি তিনদিনে প্রায় একশ রোগী ভর্তি থাকে হাসপাতালটিতে।
হাসপাতালটিতে সংক্রামক, মেডিসিন, সার্জারি, অর্থপেডিক্স, গাইনী, শিশু মেডিসিন, শিশু সার্জারী, আইসিইউ, সিসিইউ, হেমো ডায়ালাইসিস ইত্যাদি বিভাগ আছে।
হাসপাতালটিতে নার্সদ্বয় তিন শিফ্টে ডিউটি করেন। সেক্ষেত্রে ১৮৩জন তিন শিফ্ট করলে প্রতি শিফ্টে ৬১জন সিনিয়র স্টাফ নার্স কর্মরত থাকেন। যাদেরকে প্রায় ১৩টি বিভাগে ভাগ করলে প্রতি বিভাগে সিনিয়র স্টাফ নার্স মাত্র ৪জন ভাগে পরে।
এরমধ্যে আবার বিশেষ ছুটিতে থাকেন গড়ে প্রতি সপ্তায় কমপক্ষে পাঁচ থেকে দশজন। এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে একটি ওয়ার্ডে যদি বিশজন রোগী থাকে তবে প্রতি পাঁচজন রোগীর বিপরীতে একজন নার্স কর্মরত থাকেন। যেটা মোটেও মানানসই না।
বিশেষ করে আইসিইউ, সিসিইউ, এইচডিইউ, সার্জারী বিভাগে যখন রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায় তখন নার্সদের সামাল দেওয়া অনেক কষ্টসাদ্ধ হয়ে পড়ে। এতেকরে রোগীরা কাঙ্খিত বা প্রত্যশিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখাযায় প্রত্যশিত সেবা না পাওয়ায় রোগীর স্বজনেরা নার্সদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন। অনেক সময় অনাকাঙ্খিত ঘটনারও সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে মারাযাওয়া রোগীর স্বজনেরা মোটেও পরিস্থিতি বুঝতে চান না।
বিষয়টি সম্পর্কে সামেক হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার কুদরত ই খুদা জানান, জেলা পর্যায়ে আমাদের এই প্রতিষ্ঠানটি অনেক বড় হওয়ায় অন্যান্ন হাসপাতাল ক্লিনিক অপেক্ষা এখানে রোগীর চাপ অনেক বেশী। খাতা কলামে ৫০০ শয্যা হলেও এখানে শীত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে প্রায় শহস্রাধীক রোগী ভর্তী থাকে। তাছাড়া আমাদের এখানে আইসিইউ, সিসিইউ, কিডনি রোগীদের জন্য ডায়ালাইসিস ইউনিটের সেবা থাকায় মূমুর্ষ রোগীর চাপ এখানে অনেক বেশী থাকে।
তাছাড়া প্রাইভেট ক্লিনিকসহ আসপাশের জেলা সরকারি বে-সরকারি হাসপাতাল অপেক্ষা আমাদের এখানে চিকিৎসা সেবা খরচ অনেক কম হওয়ায় তুলনামুলক রোগীর চাপ বেশী। এতেকরে রোগীর তুলনায় নার্সের সংখ্যা কম হয়ে গেছে। যে কারণে রোগীরা তাদের কাঙ্খিত বা প্রত্যাশিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সামেক হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার কুদরত ই খুদা জানান, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা দীঘদিন মন্ত্রনালয় ও অধিদপ্তরে যোগাযোগ করে আসছি। কিন্তু প্রত্যশিত ফল পাচ্ছি না। এব্যাপারে আমি যথেষ্ট আন্তরিক। ‘আমি এই জেলার মানুষ, এটি আমার প্রত্যাশার ফসল, এখানকার রোগীরা প্রায় অধিকাংশই আমার পরিচিতজন। তাই এই প্রতিষ্টানের প্রতি আমার আন্তরিকতা একটু বেশি।’