
গুরুদাসপুর (নাটোর): সামসুল হকের নেতৃত্বে বাগানের লিচু বিক্রি করা হয়।-ছবি মুক্ত প্রভাত
এতিম দুই শিশু শেরিন শিমরাহ শাবাহাত রাইম ও ছেলে শাফাকাত শুফাইক রোরি’র পৈত্তিক সম্পদ দখলে নিতে প্রায় ১০টির বেশি মামলা দায়ের করেছে প্রতিপক্ষ। শুধু মামলা করেই খ্যান্ত হননি, আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ১০ লাখ টাকায় বাগানের লিচুও বিক্রি করেছেন।
মূলত শিশু দুটির স্বজনদের পক্ষে সামসুল হক নামের এক ব্যক্তি ওই সম্পদ দখলে নিতে এসব মামলা দায়ের করেছেন। সপ্তাহখানেক আগে তিনিই আদালতের দেওয়া ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে লোকবল নিয়ে বাগানের লিচু বিক্রি করেছেন। এসব ঘটনা ঘটেছে গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের মামুদপুর গ্রামে। সামছুল হক মামুদপুর গ্রামের মরহুম দবু মোল্লার ছেলে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে- দুই শিশু শেরিন শিমরাহ শাবাহাত রাইম ও ছেলে শাফাকাত শুফাইক রোরি’ প্রয়াত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরিদা দম্পতির সন্তান। তারা একই গ্রামের বাসিন্দা।
স্থানীরা জানান, প্রয়াত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম সাবেক পুলিশ সদস্য ইফসুফ আলীর ছেলে। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শফিকুল ইসলাম ২০১৮ সালে মারা যান। বছরখানেক পর মারা যান মা রাবেয়া বেগম।
এরপর পরই বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ইউসুফ আলী নিজ নামীয় প্রায় ৫০ কোটি টাকার সম্পদ এতিম নাতি-নাতনিকে বঞ্চিত করে তিন মেয়ের নামে লিখে দেন। কিন্তু বিপত্তি বাধে প্রয়াত শফিকুল ইসলামের মায়ের সম্পদ নিয়ে।
স্থানীয়রা জানান, স্ত্রী রাবেয়া বেগম মারা যাওয়ার পর রাজশাহীতে মেয়ের বাড়িতে থাকতে শুরু করেন ইফসুফ আলী। সেসময় নিজের জমাজমি মেয়েদের নামে লিখে দেন। একপর্যায়ে স্ত্রীর রেখে যাওয়া প্রায় ৫০ কোটি টাকার সম্পদও দখলে নেন। সামসুল হক নামের এক ব্যক্তি এসব জমাজমি দেখভাল করেন।
ইউসুফ আলীর পূত্রবধূ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরিদা পারভিন রানু জানান, চাকুরির কারণে দুই সন্তান নিয়ে তিনি ঢাকায় থাকেন। সেই সুযোগে তার পৃত্তিহারা দুই সন্তানকে বঞ্চিত করতে প্রভাবখাটিয়ে সামসুল হক নামের এক ব্যক্তিকে ব্যবহার করে সব সম্পদ দখল করেছেন তার শ্বশুর ইফসুফ আলী।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, এতিম ওই দুই শিশুর জমি দখলে নিতে সিভিল ক্রিমিনালসহ ১০টির বেশি মামলা দায়ের করেছেন সামসুল হক। এসব মামলায় প্রতিপক্ষ করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরিদা পারভিন ও তার সহযোগিদের। সবশেষ ইফসুফ আলীর পক্ষে আদালতের ১৪৪ ধারার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জোরপূর্বক ৩০ বিঘার লিচু বাগান প্রায় ১২ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন সামসুল হক।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরিদা পারভিনের পক্ষে এতিম শিশুর চাচাতো ভাই সোহেল মুন্না সম্পদ উদ্ধারে কাজ করছেন। তিনি জানান, দাদি রাবেয়ার নামীয় মামুদগ্রামের একটি বাড়ি, ৩০ বিঘার লিচু বাগান, উপজেলার যোগেন্দ্রনগরের ১৫ বিঘার ফসলি জমি, পৌর সদরের চাঁচকৈড় বাজারের গোদিঘর এবং নারিবাড়ীর মিল-চাতাল দেখভালের জন্য স্থানীয় সামসুল হককে তত্বাবধায়ক হিসাবে রেখেছেন ইফসুফ আলী। এছাড়া ঢাকার একটি ফ্ল্যাট এবং রাজশাহীর একটি বাড়ি দখলে রেখে এতিম শিশু দুটিকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
অথচ উত্তরাধীকারসুত্রে নাতি-নাতনি এসব সম্পদের বেশিরভাগ অংশের বর্তমান মালিক (মৃত দাদীর সম্পত্তি)। কিন্ত ইউসুফ আলী প্রয়াত স্ত্রীর সম্পদ ওয়ারিশ মোতাবেক বন্টন না করে জবর দখল করছেন।
তবে ইউসুফ আলীর তত্বাবধায়ক সামসুল হক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, লিচু বাগানসহ বেশ কিছু জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। প্রতিপক্ষের মামলায় নিজেও হাজত বাস করেছেন। এবার তারা লিচু বাগনটি বিক্রি করতে পেরেছেন। মূলত সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ইউসুফ আলীর নির্দেশে এসব জমি দেখভাল করছেন তিনি।
ইউসুফ আলী বলেন, নাতি-নাতনি ছোট হওয়ায় সম্পদ বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছেনা। সময়মতো ওয়ারিশদের সব সম্পদ বুঝিয়ে দেবেন তিনি।