
—ছবি সংগৃহিত
ঢাকা-রাজশাহী রুটে চলন্ত বাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগি ওই নারী। তিনি বলেন- মোবাইল, টাকা পয়সা ডাকাতি হয়েছে। অথচ ধর্ষণের মিথ্যা খবর প্রচার করা হয়েছে। খবর প্রচারের আগে ঘটনার সত্যতা নিয়ে তার সাথে কেউ কথাও বলেননি।
ওই নারী বলেন- ধর্ষণের মিথ্যা খবর প্রচারের পর থেকে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। সামাজিকভাবে হেয় হচ্ছেন। যেটা ঘটেনি সেই দায় তার ওপর চাপানো হচ্ছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলে রাজশাহীগামী বাসে ডাকাতি হয়। সেই বাসের যাত্রী ছিলেন ওই নারী।
ওই নারী বলেন- ‘তারা সাভারের হেমায়েতপুর থেকে রাজশাহীগামী একটি বাসে উঠেছিলেন। বাসটিতে একদল ডাকাত উঠেছিল। ডাকাতেরা যাত্রীদের কাছ থেকে টাকাপয়সা নিয়ে নেয়। তাকে অন্তত ৬ থেকে ৭ বার তল্লাশী করে ডাকাতের দল। তার এক হাতে আঘাত ছিল। হাত থেকে সিটি গোল্ডের চুড়ি খুলে নেওয়ার সময় তিনি ব্যাথায় চিৎকার করেছেন। এতে অনেকেই ভুল ধারণা করেছেন যে-তার সাথে ধর্ষণের মতো কিছু হয়েছে। টাকাপয়সা গেলে তিনি দুঃখ পাননি, কিন্তু ধর্ষণের মিথ্যা খবর প্রচার হওয়ায় তিনি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছেন।
তিনি বলেন, ঘটনার পর তিনি নাটোরের বড়াইগ্রাম থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। সেখানে তিনি পুলিশের কাছে বলেছিলেন- তার হাতে আঘাত ছিল। তাই ডাকাতেরা চুড়ি খুলে নেওয়ার সময় তিনি চিৎকার করেছেন। তার জানা মতে- ওই বাসে কেউ ধর্ষণের শিকার হননি। মেয়েদের ওপর অত্যাচার হইচে, মেয়েদের তল্লাশী করা হয়েছে। কিন্তু ধর্ষণ হয়নি।
সম্প্রতি ওই নারী বিষয়টি খোলাসা করে জানিয়েছেন, ‘বাসে ডাকাতি হলো। অথচ আমার নামে ধর্ষণের কলঙ্ক দেওয়া হলো। এটা তো সত্যি ছিল না। আবার মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে— আমার স্বামী নাকি সেদিন আমার সঙ্গে বাসে ছিলেন। কিন্তু আমার স্বামীতো অসুস্থ্য হয়ে একবছর ধরে বিছানায় পড়ে আছে। দুর্ঘটনাকবলিত হওয়ায় তার পা ভেঙে গেছে। পুরো পায়ে রিং পরানো আছে। সে ঘরে থাকে। স্বামীকে মারধর করে আমাকে নাকি ধর্ষণ করা হয়েছে। এসব কথা মিডিয়াতে প্রকাশ হয়েছে। আসলে বাস্তব ঘটনা তো এটা নয়।’
বাসে ডাকাতির পর থেকে তাকে নিয়ে ছড়ানো মিথ্যা খবরের কারণে সামাজিকভাবে চাপে আছেন জানিয়ে ওই নারী বলেন, ‘এখন সমাজের কাছে আমার মুখ দেখানোই কঠিন হয়ে গেছে। শ্বশুরবাড়ির সবাই আমাকে খারাপ নজরে দেখছে। এভাবে চলতে থাকলে, আমি সমাজে মুখ দেখাবো কিভাবে। বেঁচে থাকার মতো পরিবেশ থাকবে না। আমার সঙ্গে যদি এমনটা ঘটতো, তাহলে আমি নিজেই এটা নিয়ে প্রতিবাদ করতাম। কিন্তু আমার সঙ্গে যেটা হয়নি, সেটা আমার ওপর চাপানো হচ্ছে। আমি অনুরোধ করছি, সকরেই যেন আমার পাশে দাঁড়ায়। আর কোনো নারী নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, এটা বলার আগে যেন সেই নারীর সাথে মুখে ঘটনা শোনেন। ভেবেচিন্তে কথা বলেন। সবার কাছে তার এই অনুরোধ।
ওই নারী বলেন, পরিবারে তারা দুই বোন । লিভার ক্যানসারে মারা গেছেন বড় বোনের স্বামী। তার স্বামীও সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে শয্যশায়ী রয়েছেন। পরিবারে টানাপোড়েন চলে। দুর্ঘটনার পর স্বামীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে টাকাপয়সা সব শেষ হয়ে গেছে। আর্থিকভাবে সাহয্য করার মতোও তাদের কেউ নেই। তাই পরিবসারকে সাহায্য করতে তিনি কীর্তন করেন,গান করেন। আগে তিনি গান করতে ভালো লাগা থেকে। কিন্তু এখন তিনি গান করেন সংসারের খরচ জোগানোর জন্য। তিনি বলেন, ‘আমরা গরিব ঘরের মেয়ে। আমাদের টাকাপয়সা না থাকলেও সম্মানটা বড় কথা। কিন্তু মিথ্যা খবর ছড়িয়ে পড়ায় সেই সম্মানটা যদি না থাকে, পৃথিবীতে বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে পড়ে।’
ধষণের শিকার হননি জানিয়ে ওই নারী জোর দিয়ে বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে বাইরে কথা হচ্ছে। ফলে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। সবাই বলছে—কিছু হয়েছে বলেই মিডিয়াতে এসেছে। এখন তো আমার কথা কেউ বিশ্বাস করছেন না। আমার সাথে সেদিন যারা বাসে ছিলেন, ‘তারা তো সব দেখেছেন। সব সত্যি জানেন। আমার ওপর ধর্ষণের মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিয়েছেন তার কাজটি ঠিক করেননি।’
পুলিশ জানিয়েছে, গত সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে ইউনিক রোড রয়েলসের (আমরি ট্রাভেলস) যাত্রীবাহি একটি বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। রাত ১১টায় ঢাকার গাবতলী থেকে বাসটি ছেড়ে যায়। দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বাসটি নিয়ন্ত্রণে নেন ডাকাতরা। তিন ঘণ্টা ধরে বাসটিকে বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে যাত্রীদের টাকাপয়সা ও মালামাল লুণ্ঠন করা হয়। এ সময় নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানিও করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওমর আলী নামের এক যাত্রী মির্জাপুর থানায় মামলা করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আহসানুজ্জামান জানান, ওই বাসে ডাকতি আর শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটলেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। ডাকাতির ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে আনা হয়েছে। অন্য আসমিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে।