
—ছবি মুক্ত প্রভাত
চার দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা গেছেন সাংবাদিক মাসুমা আক্তার (৩০)। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন। গতকাল মঙ্গলবার ভোর সাড়ে চারটার দিকে নারায়ণগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি ‘এখন টেলিভিশনের’ রাজশাহী ব্যুরোর প্রতিবেদকের দায়িত্বে ছিলেন।
রাজধানীর বাবর রোডের মারকাজুল ইসলামে সকাল ১০টায় প্রথম জানাজা শেষে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে গ্রামের বাড়ি নাটোরের গুরুদাসপুরে পোঁছায় সাংবাদিক মাসুমার মরদেহ। সেখানে বিকেল সাড়ে ৫টায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে গুরুদাসপুর পৌর সদরের নারয়াণপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
নিহত সাংবাদিক মাসুমা আক্তার গুরুদাসপুর পৌর সদরের নারায়ণপুর মহল্লার অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আব্দুল জব্বারের মেয়ে। জীবদ্দশায় সাংবাদিক মাসুমা নর্থবেঙ্গল বিশ্বদ্যিালয় থেকে সাংবাদিকতা ও গণযোগযোগ বিষয়ে স্নাতক শেষ করেন। তিনি রাজশাহীর স্থানীয় অনলাইন গণমাধ্যম ‘বাংলার জনপদ’-এ কাজ করতেন। পরে ২০২৪ সালে সাংবাদিক মাসুমা ‘এখন’ টেলিভিশনের রাজশাহী ব্যুরোর প্রতিবেদক হিসেবে কাজ শুরু করেন। সংসার জীবনে মাসুমার ১২ বছর বয়সি একটি ছেলে রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, গত শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) স্বামির সঙ্গে কুমিল্লায় আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিলেন মাসুমা। পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার নূরজাহান হোটেলের সামনে দুর্ঘটনা কবলিত হন। সেখানে দাঁড়িয়ে তারা সিএনজির চালকের সাথে কথা বলার সময় যাত্রীবাহি একটি দ্রুতগামী বাস তাদের ধাক্কা দেয়। এতে সাংবাদিক মাসুমা আক্তার, তার স্বামী সৈকত ইসলাম ও সিএনজি চালক গুরুতর আহত হন।
স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে নেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য মাসুমা ও তার স্বামীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিউরো সার্জারি বিভাগের ২০০ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সঙ্গাহীন অবস্থায় লাইফ সাপোর্টে থাকা সাংবাদিক চারদিন ধরে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছিলেন। মৃত্যুর কাছে হেরে গিয়ে মঙ্গলবার চিরঘুমে চলে যান সাংবাদিক মাসুমা।
মাসুমার মা রেহেনা বেগম বিলাপ করতে করতে বলেন, মেয়ে মাসুমা তাকে প্রায়ই বলতেন-‘মা আমি এখন ভালো চাকরি করছি। সংসারে আর অভাব হবে না। মেয়েটিকেও মানুষ করতে পারবো।’ অথচ সন্তান রেখেই মারা গেলেন তার মেয়ে মাসুমা। এখন মাসুমার সন্তানের কি হবে।
নিহত সাংবাদিক মাসুমার পিতা আব্দুল জব্বার বলেন, দুই সন্তানের মধ্যে মাসুমা দ্বিতীয়। একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে তারা নিরব নির্বিকার। মাসুমার সন্তানও মাকে হারিয়ে ডুকরে কাঁদছে।
এদিকে সাংবাদিক মাসুমার মৃত্যুতে সাংবাদিক সমাজ, সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।