
স্ত্রীর অমতে অস্বাভাবিক যৌন সম্পর্ক অপরাধ নয়; আদালতের রায় বিক্ষোভে উত্তাল ভারত
স্ত্রীর অমতে জোর করে অস্বাভাবিক যৌনতা অপরাধ নয়। ভারতের ছত্রিশগড়েরর হাইকোর্টের রায় পেয়েছে ৪০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি । তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্কে পর পরই তার স্ত্রী মৃত্যু হয়েছিল।
২০১৯ সালে নিম্ন আদালতে ওই ব্যক্তিকে অপরাধী বলে সাব্যস্ত করেছিলেন। অনিচ্ছাকৃত যৌনতার কারণে তার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছিল বলে তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়। নিম্ন আদালত দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিকে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছিল। গত সপ্তাহে উচ্চ আদালত তাকে তাকে খালাস দেন।
হাইকোর্টের বিচারপতির নরেন্দ্র কুমার ব্যাস গেল সোমবার ওই রায়ে বলেন, ভারতের বৈবাহিক ধর্ষণ অপরাধ বলে গণ্য হয় না। ফলে স্ত্রীর অসম্মতিতে যৌন সম্পর্ক স্থাপন অথবা অসম্মতিতে অস্বাভাবিক যৌনতার অভিযোগে কোন স্বামীকে অপরাধী সাব্যস্ত করা যায় না।
রায়ে এমন বক্তব্য দেশের বহু মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। সাধারণ মানুষ, আদালত কর্মী, আইনজীবীদের এক বড় অংশ নতুন ভাবে এটি নিয়ে ব্যপক প্রচার শুরু করছেন তারা। এব্যাপারে তারা বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধের আওতায় আনা হোক বলে দাবি করেন।
বিশিষ্ট আইনজীবী সুকৃতি চৌহান বলেছেন, এই মানুষটির মুক্তি মেনে নেয়া যাচ্ছে না। আইনের চোখে রায় ঠিক হতে পারে কিন্তু নৈতিকতার দিক থেকে তা জঘন্য। এই রায় আমাদের আইনের ব্যবস্থার অন্ধকার দিকটা ফুটিয়ে তুলেছে।
এই আইনজীবী আরও বলেন, এ্রই রায় আমার ভেতরটা নাড়িয়ে দিচ্ছে, সম্ভব হলে আইন বদল করা উচিত। ছত্রিশগড়ের আরেক আইনজীবীর প্রিয়াঙ্কা শুল্কা বলেছেন, এই ধরনের রায় এমন বার্তা পাঠায় যে তুমি স্বামী বলে যা কিছু করার কর তোমার অধিকার রয়েছে। এমনকি তুমি খুন করেও পার পেয়ে যাবে।
প্রিয়াংকা বলেন এমনটা এই প্রথম হলো না। তবে এবার আক্রোশ বেশি কারণ এই জঘন্য অত্যাচারী ব্যক্তির স্ত্রী মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর রাতে এক স্বামী তার স্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তিনি অস্বাভাবিক যৌনতায় মেতে উঠেন।
তারপর কাজে বেরিয়ে গেলে স্ত্রীর তার আত্মীয়দের সাহায্য নিয়ে হাসপাতালে যান। সেখানে কয়েক ঘন্টা পর তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে পুলিশের ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিজের জবানবন্দিতে ওই নারী বলেন স্বামীর জবরদস্তি অস্বাভাবিক যৌনতার ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
নিম্ন আদালত ওই নারীর জবানবন্দী ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের উপর নির্ভর করে রায় দেন। পোস্টমটেম রিপোর্টে বলা হয়েছিল অস্বাভাবিক জনতার তীব্রতা ওই নারীর পায়ুপথ ও তল প্যাট মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
আইনজীবী প্রিয়াংকা বলেন এটাই হাইকোর্টের রায় সামান্যতম সহানুভূতিটুকুও দেখা যায়নি। আমরা এই রায়ের সংস্করণ চাই। নারীর স্বাধীনতা ও জীবন সুরক্ষায় আইনের শতভাগ কার্যকারিতা আনা দরকার। যে আইনের প্রতি সবাই শ্রদ্ধাশীল থাকবে সে আইন একক না হয়ে বিস্তর হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
বর্তমানে পৃথিবীর ৩০ টি দেশে বৈবাহিক ধর্ষণ কোনো অপরাধ নয়। ভারত ছাড়া অন্যান্য দেশের মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান আফগানিস্তান ও সৌদি আরব। ভারতীয় দণ্ডবিধিতে ওই ধারা ১৮৬০ সালে চালু হয়েছিল। সেই ধারা বাতিল করার জন্য বহু আবেদন জমা পড়েছে। ধারা বাতিলের জন্য বেশকিছু জায়গায় ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছে। টকশোতে চলছে চরম আলোচনা সমালোচনা।
তবে বিট্রিশ সরকার ১৯৯১ সালে ওই ধারা বাতিল করে দিলেও ভারত সম্প্রতি যে নতুন ন্যায়সহিংসতা তৈরি হয়েছে তাতে ওই ধারার কোনো পরিবর্তন আনবে না। একারণেই ওই ধারা ওই রকম রাখা হয়েছে। সমীক্ষায় জানা গেছে ৩২ শতাংশ নারী তাদের স্বামীদের হাতে যৌন, শারীরিক ও মানসিকভাবে সহিংসতার শিকার হচ্ছেন এবং ৮২ শতাংশ শুধু যৌন হিংসতা শিকার হন।