
—ছবি লেখকের
সব পরীক্ষার রিপোর্ট চলে আসছে।আরাশ আর ভাইয়া সব কাগজ পত্র নিয়ে প্রফেসর স্যার এর রুমে। স্যার তাদের বসতে বলে রিপোর্ট নিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগলেন। স্যার এর কপালে চিন্তার ভাজ ক্রমশ বাড়ছে। আরাশের বুকের ভেতরে ঝড়। সব দেখার পর ডাক্তার দুজনকেই ঠান্ডা মাথায় সব কিছু বোঝাতে শুরু করলেন। একিউট মাইলয়েড লিউকেমিয়া। লাস্ট স্টেজ।
দুজনেই অনেক অনুরোধ করা শুরু করেছে। কিছু একটা করা যায় কিনা। একজনের আদরের ছোট বোন। আর আরেকজনের পুরো পৃথিবী । বিনা মেঘে বজ্রপাত। সবকিছু এলো মেলো এক মূহুর্তে। ডাক্তার সব ট্রিটমেন্ট এর কথা বলে দিয়েছে। তবে তেমন কোন আশার বানী শোনাতে পারেনি।
দু চোখে এক রাজ্যের হতাশা, হৃদয়ে এক ব্যাথার পাহাড় নিয়ে দুজনে পুষ্পিতার কাছে আসছে।। তাকে ওয়ার্ড থেকে কেবিনে শিফট করা হয়েছে। ভাইয়া মাথায় হাত রাখতেই দেখে জরে পুরে যাচ্ছে তার শরীর। সে বলল এরি মধ্যে একবার বমি করেছে সে। মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়েছে। ভাইয়া আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি।পুষ্পিতার পায়ের কাছে গিয়ে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাদতে শুরু করে। এ কান্নার কোন শান্তনা নেই।
এ ব্যাথার কোন ব্যাথানাশক নাই। এ যন্ত্রনা নেভানোর মত কোন কিছুই নেই দুনিয়ায়। আরাশ ভাই বোনের এ দৃশ্য দেখতে পারছেনা। সে কেবিনের বাইরে চলে আসছে। পুষ্পিতা হকচকিয়ে যায়। ভাইয়া এমন শিশুদের মত কাদছে কেন? তবে সে যেটা ধারণা করেছে সেটাই কি সত্যি? পুষ্পিতার মাথা ঘুরছে। দুজনের চোখে জলধারা বইছে। সমস্ত রুমে কোন শব্দ নেই। শুধু পৃথিবীর এক নিষ্পাপ সম্পর্কের দুটি হৃদয় ভেংগে চুরে চুরমার হয়ে যাচ্ছে নিশব্দে।
আরাশ কেবিনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে এক টুকরো আকাশের দিকে চেয়ে আছে নিস্পলক। এ দৃষ্টির কোন সীমানা নেই। এ হৃদয় ভাংগার কোন বিশেষ্য,বিশেষন কিছুই নেই। এ আগুন নেভেনা কোন জলে। এ হারানোর বেদনা ছড়িয়ে বিলীন হয় সবুজ ঘাসে,পথের ধুলোয়, রাতের আকাশের লক্ষ তারায়,পার ভাংগা নদীতে, প্রথম প্রেমে পড়া কোন কিশোর কিশোরীর অন্ধ আবেগে।
আরাশের বুকের মাঝে সাত সমুদ্র সমান নোনাজল,দু চোখে মরুভূমির শুস্কতা। তার পুষ্পিতা হারিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি রক্ত কনা থেকে। তার জীবনের কাছ থেকে পুরো জীবন টা নিয়ে। বিনিময়ে এক রাশ হাহাকার, অসীম শূন্যতা দিয়ে। সে রুমে আসে।
ভাইয়া কিছুটা সাভাবিক হয়। চোখ দুটো মুছে আরাশ কে চেয়ার এ বসতে বলে। সে কিছুক্ষণ এর জন্য বাসায় যাবে। বাবা মাকে এখনি কিছু জানাতে চায়না। সে শেষ চেষ্টা করবে। দরকার হলে দেশের বাইরে নিয়ে যাবে। তার পুতুলের মত বোনকে সে এভাবে হারিয়ে ফেলতে পারেনা। ভাইয়া পুষ্পিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আরাশ কে রেখে বের হয়ে যায়।
আরাশ মাথা নিচু করে আছে। এই প্রথম পুষ্পিতা আরাশের মাথায় হাত রেখে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে বলে। এই মায়াভরা মুখটা ছেড়ে তাকে চলে যেতে হবে, এই ব্যাথার তীব্রতা কতটা ভয়ংকর? এ প্রশ্নের উত্তর কোথায় লেখা থাকে? কোন গ্রন্থে,কোন মহাকাব্যে? কোন সোনার কাঠি রূপার কাঠির ছোয়ায় এ চিরনিদ্রার দুঃসপ্ন সম্বিত ফিরে পায়?
কে জানে? কেউ জানেনা।
(চলবে....)
২৪.১০.২১
রাজ