
আমেরিকার শুল্কআরোপের জালে ভারত
ভারত গত সপ্তাহে মোটরসাইকেলে আমদানি স্বল্প কমিয়ে দিয়েছে। ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। অন্যদিকে ছোট মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে ওই শুল্ক শতাংশ কমিয়ে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে।
আমেরিকান হারলে ডেভিডসন মোটরসাইকেল প্রবেশের বিষয়টাকে আরও মসৃণ করার জন্য এটা একটা আগাম পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। দিল্লি আশা করছি সাম্প্রতিক পদক্ষেপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে শুল্ক সংক্রান্ত যে কোন রকম হুমকি এড়াতে সাহায্য করবে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় বার হোয়াইট হাউজে ফিরছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
প্রতিবেশী দেশ ও মিত্রদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের বিরুদ্ধে করা বাণিজ্য ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই প্রত্যাবর্তন কে চিহ্নিত করেছেন তিনি। ভারতের আশা তারা এই খেলাটায় কিছুটা হলে এগিয়ে রয়েছে। কিন্তু ভারতের দিক থেকে আমদানি স্বল্প হ্রাসের এই সিদ্ধান্তকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সন্তুষ্ট করতে পারবে?
দিল্লি ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর জিটিআরআই প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তবকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল উত্তরে তিনি বলেছিলেন কানাডা এবং মেক্সিকো আক্ষরিক অর্থে যুক্তরাষ্ট্রের দুই অঙ্গ তিনি ডোনাল্ড ট্রাম যদি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় তাহলে সহজেই ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন।
প্রসঙ্গগত গত মাসের শেষের দিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির টেলিফোনে কথা হয়েছিল। কথোপকথনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি পরিমাণে অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দিয়েছিলেন। ন্যায্য বাণিজ্য ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়ে ভারতের উপর চাপ অব্যাহত রেখেছিলেন।
প্রসঙ্গত প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম মেয়াদে মিস্টার ট্রাম ভারতের করেছিলেন সেই সময় হারলে ডেভিডসনের উপর ১০০% আমদানি স্বর্গকে গ্রহণযোগ্য নয় বলে ভারতের নিন্দা করেছিল।
ট্রাম্প-মোদি।—ছবি সংগৃহিত
অন্যান্য বাণিজ্য অনুশীলন বলতে ট্রাম্প যা মনে করেন, এই সমস্ত বিষয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন তিনি। এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তাকে বারবার ভারতের প্রসঙ্গ টেনে আনতেও দেখা গিয়েছে। অতীতের এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি ভারতকে সুল্কের রাজা বলে আখ্যায়িত দিয়েছিলেন। এছাড়া দুই দেশের মাঝে যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে ভারতের সে সম্পর্ক বড় অপব্যবহারকারী বলেও মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছিল তাকে।
ভারত তার শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ভোগ করে। ২০২৩ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ১৯০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। ২০১৮ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের৪০ শতাংশ থেকে বেড়ে ১২৩ বিলিয়নি পরিমাণ ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। পরিষেবা সংক্রান্ত বাণিজ্য ২২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬৬ বিলিয়ন পৌছেছে। ভারতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি পণের পরিমান হয়েছে ৭০ বিলিয়ন ডলারে।
এদিকে মোটরসাইকেলের পাশাপাশি একাধিক ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক কমিয়ে দিয়েছে ভারত। স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড ইনস্টিলিশন এর ক্ষেত্রে ওই শুল্কক্রমে শূন্য করে দেয়া হয়েছে।
ভারত ওই আমদানি শুল্ক শূন্য করে দেয়ার ফলে সেই মার্কিন রপ্তানি কারকটা উপকৃত হয়েছেন যারা ভারতে ২০২৩ সালে ৯ কোটি ২০ লাখ ডলার মরলে স্যাটেলাইট গ্রাউন ইন্সটিলশন সরবরাহ করেছিলেন। এছাড়া এছাড়া সিথেটিক ফ্লেভারিং এসেনসের ওপর ১০০ শতাংম কমিংয়ে ২০ শতাংশ করে দেয়া হয়েছে।
নির্বাচিত বর্জ্য এবং স্কেপ আইটেম গুলোর উপরেও শুল্ক তুলে দিয়েছে ভারত। এটা এমন একটা ক্ষেত্র যেখানে গত বছর ভারত মার্কিন রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৫০ কোটি ডলার। এদিকে ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে যে জিনিস আমদানি করা হয়েছিল সেই তালিকা শীর্ষে রয়েছে অপরিশোধিত তেল ও পেট্রোলিয়াম লিকুফাইয়েড ন্যাচারাল, গ্যাস বা এলএনজি, কয়লা, মেডিকেল যন্ত্রপাতি, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি মেটাল (ফেলে দিয়ে ধাতব পদার্থ) টার্বোজেট কম্পিউটার এবং বাদাম।
মিস্টার শ্রীবাস্তবের মতে ট্রাম ভারতের শুল্কনীতির সমালোচনা করলেও সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গিয়েছে সেটা নীতি পরিবর্তনে ইঙ্গিত দেয়। এটা বিভিন্ন খাতে মার্কিন রপ্তানি বাড়িয়ে তুলতে পারে। প্রযুক্তি অটোমোবাইল শিল্প ও বৈচিত্র আমদানিতে শুল্ক হ্রাসের সাথে ভারত বাণিজ্যকে সংস্থার করার উদ্দেশ্য পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে । যদিও বিশ্ব স্তরে বাণিজ্যিক পরিবেশ কিন্তু এখনো উত্তেজনা পরিস্থিতি অব্যাহত আছে। রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে ভারত পরিসর বেশ বিস্তৃত।
মিস্টার শ্রীবাস্তব বলেছেন, এই বৈচিত্রপণ্যের পরিসর ভারতের বিস্তৃত রপ্তানি ভিত্তিকে শক্তিশালী করে তোলা পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারত শক্তিশালী সম্পর্কে প্রতিফলিত করে। একসময় বিশ্বের সবচেয়ে সংরক্ষণ বাদী অর্থনীতির দেশ ছিল ভারত । ১৯৭০ এর দশকে আমেরিকান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জোসেফ গ্রিকো ভারতকে সবচেয়ে সীমাবদ্ধ জটিল বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়ন্ত্রণকারী ব্যাখ্যা ব্যবস্থা হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন।
বাণিজ্যের বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিৎ ধর মনে করেন , প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার আমেরিকান ফার্স্ট নীতির ওপর ভিত্তি করে উচ্চ আমদানি করের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে চান একই সঙ্গে বড় আকারের মার্কিন ঘাটতি বাণিজ্যপূর্ণ করতে চান।
ভারত ২০২৩ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বাদাম আপেল ছোলা মসুর ডাল এবং আখরোটের ওপর শুল্ক বাদ দিয়েছে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্ভবত আরও বেশি দাবি করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
মিস্টার ধর সতর্কতা করে বলেছেন ঠিক এখানেই আমরা কঠোর দরখাস্ত করবো এবং সেটা নিয়ে সমস্যা দেখা দিতে পারে। চীনের কথা মাথায় রাখলে দুই দেশের এই আসন্ন সংঘাত কমানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের কৌশল গত সম্পর্ক।
এই বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বিশ্বজিৎ ধর সাম্প্রতিক সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনথিভুক্ত ভারতীয় অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর প্রসঙ্গ টেনেও এনেছেন। তিনি ব্যাখ্যা করছেন ভারতের তরফে এই মার্কিন সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার ইচ্ছাটা কিন্তু একটা ইতিবাচক সংকেত পাঠিয়েছে।
পাশাপাশি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগত সুসম্পর্কের কারণেও কিছুটা সুবিধা বলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমন্ত্রনে চলতি মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হোয়াইট হাইজ সফরে যাওয়ার পর এই বিষয়ে কিছুটা স্পষ্টতা আসবে।