
—ছবি মুক্ত প্রভাত
বগুড়ার ধুনট উপজেলায় কালেরপাড়া ইউনিয়নে বকচর এলাকায় ২০০ বছর ধরে আয়োজন করা হচ্ছে এমন মাছের মেলা। অনেকে আবার এই মেলাকে জামাই মেলা হিসেবে চিনে থাকেন। মেলায় কোন জামাই ও শ্বশুর কত বড় মাছ কিনলেন, সেটি নিয়ে চলে একধরনের প্রতিযোগিতা।
বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, চারদিকে ফসলের মাঠ। কেউ ধান রোপণ করছেন, কেউবা সবজি। মাঝের একটি ফাঁকা মাঠে বসেছে মাছের মেলা। সকালে নানা স্থান থেকে সেই মেলায় মানুষ ছুটে আসছে।
এর আগে ট্রাক, পিকআপ ও রিকশায় মাছ ব্যবসায়ীরা বড় বড় মাছ নিয়ে হাজির হয়েছেন মেলায়। দুপুরের মধ্যে দূরদূরান্ত থেকে আসা মাছের ক্রেতাদের ভিড়ে কোথাও যেন থাকার জায়গা নেই। তার মধ্যে সমানতালে চলছে মাছের বেচাবিক্রি।
প্রতিবছর মাঘ মাসের তৃতীয় সপ্তাহের বুধবার এ মেলা বসে। দিনটির জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকে মানুষজন। এদিন এলাকার প্রতিটি বাড়িতে থাকে নতুন–পুরোনো অতিথি দিয়ে ভরা। বকচর সহ আশপাশের গ্রামে যারা বিয়ে করেছেন, সেসব জামাই এই মেলার মূল ক্রেতা।
জামাইরা সবচেয়ে বড় মাছ কিনে খুশি মনে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যান। আবার জামাইদের আপ্যায়ন করতে শ্বশুরপক্ষও মেলা থেকে মাছ কিনে নিয়ে যান বাড়িতে। ব্যবসায়ীরা থরে থরে সাজিয়ে রেখেছে মাছ। কেউ মাছ কিনেছেন, কেউবা দেখছেন আর ছবি তুলছেন। মেলায় কোনো কোনো মাছের ওজন ২০ থেকে ৫০ কেজি। মাছ ছাড়ও মেলায় বিক্রি হয় হরেক রকম পণ্য।
মাছ ব্যবসায়ী নরেন চন্দ্র দাস জানান, তিনি ৩০ বছর ধরে মেলায় মাছ বিক্রি করছেন। এবার তিনি ৪০ কেজি ওজনের একটি বাঘাইড় মাছ নিয়ে এসেছেন। মাছটির দাম চাইছেন ৮০ হাজার টাকা। ক্রেতাদের মধ্যে একজন মাছটির দাম বলছেন ৪৫ হাজার টাকা।
মেলায় আসা হোসেন আলী জানান, মেলা উপলক্ষে প্রতিবছর শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসেন। মেলা থেকে বড় আকারের মাছ কেনার চেষ্টা করেন। এবার ২০ কেজি ওজনের বাঘাইড় সহ ৫০হাজার টাকার মাছ কেনা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, মেলাটির প্রচলন কত বছর আগে শুরু হয়েছে, এর সঠিক তথ্য কেউ বলতে পারে না। তবে গ্রামের মুরব্বিরা জানান, ২০০ বছর আগে এই মেলার প্রচলন শুরু হয়েছে। এটি মাছের মেলা হলেও মানুষ এটাকে জামাই মেলা হিসেবে চেনে। মেলা উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন অনেকে।