
—ছবি মুক্ত প্রভাত
নওগাঁর বদলগাছীতে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর পরিচালিত দুস্থ মহিলা উন্নয়ন(ভিজিডি) নতুন নাম ভালনারেবল উইমেন বেনিফিটের (ভিডব্লিউবি) আওতাধীন গরীব,অসহায় ও দুস্থ ২৬১জন উপকারভোগীর (২০২৩-২০২৪) দুই বছরের জমানো জনপ্রতি ২২০টাকা করে প্রতিমাসে জমানো সঞ্চয়ের টাকা নিয়ে লাপাত্তা পাহাড়পুর ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যােক্তা দুলাল হোসেন ও তার স্ত্রী সুইটি বেগম।
দুলাল হোসেন ও দুলাল হোসেনের স্ত্রী সুইটি বেগম পাহাড়পুর ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যােক্তা হিসেবে কর্মরত এবং দুলাল হোসেন বদলগাছীর পাহাড়পুর ইউনিয়নের গোয়ালভিটা গ্রামের সুজাউলের ছেলে ও সুইটি বেগম দুলালের স্ত্রী বলে জানাযায়।
জানাযায়,পাহাড়পুর ইউনিয়নের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর পরিচালিত দুস্থ মহিলা উন্নয়ন(ভিজিডি) নতুন নাম ভালনারেবল উইমেন বেনিফিটের (ভিডব্লিউবি) আওতাধীন ২৬১জন গরীব,অসহায়ও দুস্থ উপকারভোগীর টাকা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সাক্ষরিত শিডিউল মোতাবেক গত ২৬শে জানুয়ারী রবিবার থেকে ২৮শে জানুয়ারী মঙ্গলবার তারিখে দেওয়ার ঘোষনা দেওয়া হয়।
এর আগেই গত ২৪শে জানুয়ারী শুক্রবার সন্ধ্যায় উদ্যােক্তা বাড়িতে যায়এবং ২৫শে জানুয়ারী শনিবার সকাল থেকেই ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার বন্ধ পাওয়া যায়। উদ্যােক্তা দুলাল হোসেনের খোঁজ না পেলে এ ব্যপারে গত ২৭শে জানুয়ারি সোমবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি অভিযোগ দিয়েছেন পাহাড়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান কিশোর।
ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, গত টার্মে ছিলো হচ্ছে ডাচ বাংলা। বদলগাছী সকল উদ্যােক্তা বলতে সকল জেলার সকল উদ্যােক্তা স্ব স্ব উপজেলার ইউএনও সাথে তারা আলোচনা করে বলছে যেহেতু আমরা ইউনিয়ন পরিষদে কাজ করি আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং আছে। আমরা যদি দিতাম তাহলে লাভবান হতাম। এই কারনে তারা ইউএনও স্যারের অনুমতি নিয়ে এবং ইউএনও স্যারের নির্দেশনায় উদ্যােক্তার কাছে মানে যার যা এজেন্ট আছে সেই এজেন্ট ব্যাংকে জমা রাখতে বলে।
যেহেতু দুলাল এখানেই বসতো উদ্যােক্তা এজেন্ট হচ্ছে এনআরবির ওর ওখানে টাকা জমা দিয়ে আসতো কার্ডে লেখে দিতো আমরা চাল দিতাম।
এই ইউনিয়নে মোট ২৬১জন ভিজিডির উপকারভোগী আছে।তারা প্রতিমাসে ২০০থেকে ২২০ টাকা করে জমা রাখতো। ডেট হবার খবর জেনে আর সে ২৪তা শুক্রবার রাত থেকে নিখোঁজ হয়।
সরেজমিনে, গতকাল শনিবার ১লা ফেব্রুয়ারি বদলগাছীর পাহাড়পুর ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায় ঈউনিয়নের ডিজিটাল ইনফরমেশন সেন্টার (তথ্য সেবাকেন্দ্র) বন্ধ। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানায়ীরা জানান,গত ২৫শে জানুয়ারী শনিবার সকাল থেকে উদ্যােক্তার ঘর খোলেনি এবং এখনো পর্যন্ত বন্ধ। শুনেছি যে টাকা নিয়ে পালাছে। ৩নং পাহাড়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের কাছের মানুষ হওয়ায় মোঃ দুলাল হোসেন ও দুলাল হোসেনের স্ত্রী সুইটি বেগম বিরুদ্ধে কোন তদারকি করেননি ইউনিয়ন পরিষদ সচিব এবং উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফারুক আহম্মেদ।
এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইউনিয়নের ২৬১জন দুস্থ মহিলা উন্নয়ন(ভিজিডি) নতুন নাম ভালনারেবল উইমেন বেনিফিটের (ভিডব্লিউবি) আওতাধীন গরীব,অসহায়ও দুস্থ উপকারভোগীর টাকা উপকারভোগীর নিজস্ব একাউন্টে জমা না করে আত্মসাত করেছে।
স্থানীয় নাম প্রকাশে এক ব্যক্তি বলেন, দুলাল আর ওই যে চিংকু মেম্বার আছে না। চিংকু মানে বললে, চিংকু মানে করিম। ওর নাম করিম, করিম উদ্দিন চয়েন। ওদের বাড়ি পাশাপাশি। এতে চেয়ারম্যানও জরিত আছে তো। চেয়ারম্যান,মেম্বার এগুলা এদের হাত আছে।
উদ্যােক্তার ব্যপারে পাহাড়পুর ইউপি সদস্য করিম উদ্দিন চয়েন বলেন, ২৬১ জনের টাকা নিয়ে পালায়ে গেছে। সব বইয়ের ফটোকপি নিয়ে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার মাধ্যমে সঠিক তথ্য জানাতে পারবো।
কিছু এলাকাবাসীর অভিযোগ যে আপনি ঐ ছেলে কে পালাতে সাহায্য করেছেন এ ব্যাপারে করিম উদ্দিন চয়েন বলেন,যদি কেউ বলে। এডা ডাসা মিথ্যা কথা। একবারে মিথ্যা কথা। আমার সাথে তার কোন ঐ রকম অফিসিয়াল ভাবে ঐ রকম সম্পর্কে নাই।এখানে আমি কেন সাহায্য করবো। এখানে আমার স্বার্থ কোথায়।এটা হল বড় বিষয়। যদি এটা কেউ বলে উদ্দেশ্যপ্রণিত,এবং হিংসামুলক। আমার যে রাজনৈতিক কারিয়ার আছে এটা ক্ষুণ্ন করার জন্য তারা বলতে পারে। আমার যে ইমেজ তা ক্ষুণ্ন করার পায়তারা করতে পারে।
এ ব্যাপারে এনআরবিসি ব্যাংক সূত্র জানায়, পাহাড়পুর ইউনিয়নের ভিজিডির আওতাধীন দুইশত মতো ব্যাংকে একাউন্ট আছে। এই একাউন্ট গুলোতে নাম মাত্র টাকা জমা আছে যা একাউন্ট খোলার সময় রাখা হয়েছিলো।
ব্যাংকে টাকা জমা হচ্ছে কি তার তদারকি ব্যপারে জানতে চাইলে পাহাড়পুর ইউনিয়ন সচিব কাজী শাহাব উদ্দীন বলেন, আগে ঐ ভাবে কখনো প্রয়োজন পড়েনি। আগে প্রথম যখন ছিলো আগে এনজিও ও মহিলা বিষয়কের যৌথ্য স্বাক্ষরে আগে একাউন্ট থাকতো, তখন এনজিও লোক এসে সরাসরি টাকা নিতো। যার কারনে ঐ ভাবে তদারকি করা হয় না। আমরা শুধু দেখি সঞ্চয় দিচ্ছে কিনা গ্রাহকরা সঞ্চয় দিয়ে চাল নিচ্ছে কিনা। ব্যাংক যেহেতু এজেন্ট দিয়ে দিয়েছে ইউএনও স্যারের কর্তৃক নির্দেশনায়। সে ব্যাংকে কখন জমা করছে সেটা জানিনা।
এব্যাপারে পাহাড়পুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান কিশোরের কাছে উদ্যােক্তা কত টাকা নিয়ে চলে গেছে জানতে চাইলে বলেন, ভাতাভোগী মনে হয় ৭থেকে ৮লাখ হবে। ২৬১ জন সবাই তো প্রতিমাসে সবাই টাকা দেয় নি। প্রতিমাসে ২২০ টাকা করে জমা রাখার কথা ছিলো। এব্যাপারে একটি দরখাস্ত করা হয়েছে। এখনো মনে হয় মামলা রেকর্ড হয়নি।
দরিদ্র অসহায় ও দুস্থ মহিলাদের জমানো টাকা আত্মসাত করে লাপাত্তা এটার তদারকির বিষয়টা আপনার ছিলো এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফারুক আহম্মেদ বলেন, টাকা জমা নিয়ে লেখে দেয়। ২২০টাকা করে,ওটা দেখে চেয়ারম্যান মেম্বাররা চাল দেয়। প্রত্যকে মহিলার আলাদা আলাদা একাউন্ট আছে। আমরা তথ্য নিলাম ২০৩না ২০৪টা একাউন্ট হয়েছে। তাদের টাকা মেয়েদের নামে নাকি জমা হয়।আমরা যখন চিঠি দিলাম বিতরণের জন্য ঐ সময়ও যোগাযোগ সব ঠিক আছে। ২৬তারিখে গিয়ে দেখাগেলো সে নাই।
টাকা জমা হচ্ছে কিনা তদারকি ও খোঁজ নেবার দ্বায়িত্ব তো আপনার এ ব্যপারে জানতে চাইলে ফারুক আহাম্মেদ বলেন,উদ্যােক্তা চেয়ারম্যানের আপন বৎস।চেয়ারম্যানের আপন লোকছাড়া উদ্যােক্তা কমই আছে। উদ্যােক্তারা চেয়ারম্যানের আপনজন। এটার জন্য আমারাও দুঃখিত।
এ ব্যাপারে বদলগাছী থানা অফিসার ইনচার্জ শাহজাহান আলী বলেন, এ ব্যাপারে একটি অভিযোগ হয়েছে। ওকে ধরার জন্য লোক পাঠায়ছিলাম। শুনলাম সে নাকি বাহিরে চলে গেছে। এখনো মামলা হয় নি।
অর্থ লোপাট করার ব্যাপারে বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান ছনি মোবাইলে জানান, এ ব্যাপারে থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছি এবং এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।