
উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ). বক্তব্য রাখছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।-ছবি মুক্ত প্রভাত
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান এমপি বলেছেন, সরকার চরমপন্থি, সর্বহারা, বনদস্যু ও জলদস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনে তাদের পরিবারকে পূণর্বাসনের ব্যবস্থা করেছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবতা ও উদারতার কারণে।
প্রধানমন্ত্রীর নিদের্শনায় র্যাব ইতোমধ্যেই সুন্দবনের বনদস্যু ও জলদস্যুদের প্রায় ৪৫০ পরিবারের পূর্ণবাসনের ব্যবস্থা করেছেন। এখনও তাদের এই বিশেষ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এর ধারাবাহিকতায় আজ উত্তর ও দক্ষিণ জনপথের চরমপন্থিদের আত্মসমর্পণের এই বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে র্যাব-১২ কার্যালয়।
উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ). স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করেন চরমপন্থিরা।-ছবি মুক্ত প্রভাত
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রোববার সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুলে র্যাব-১২ কার্যালয় চত্বরে চরমপন্থি সর্বহারাদের আত্মসমর্পণ উপলক্ষে র্যাব আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
তিনি বলেন, আশির দশক থেকেই দেশের উত্তর অঞ্চলে বিশেষতঃ চলনবিল নাটোর, গুরুদাসপুর, সিংড়া, বাঘমারা ও পাবনা অঞ্চলে সর্বহারাদের অপকর্ম ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
১৯৯৬ সালে প্রথম এদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিম উদ্যোগ গ্রহন করেন। এরপর থেকে এই জনপদে অপরাধ জগতের লোকজন স্বাভাবিক জীবনে ফেরায় আগ্রহী হয়ে ওঠে।
আসাদুজ্জমান খান বলেন, ইতোমধ্যে র্যাবের মাধ্যেমে আত্মসমর্পণকারী সর্বহারা ও জলদস্যুদের পরিবারকে ১ লাখ টাকা করে অনুদান দিয়ে তাদের পরিবারে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছে সরকার।
এখন তারা স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করছেন। তিনি দেশের অপরাধ জগতে থাকা সকল বিপথগামীদেরকে দ্রুত আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে পূণর্বাসনের সুযোগ গ্রহণ করতে আহবান জানান।
র্যাবের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন বিপিএম (বার) পিপিএম এর সভাপতিত্বে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে অন্যানের মধ্যে সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বেনজীর আহামেদ এমপি, বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সবিচ (জননিরাপত্তা) আলীম হোসেন, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল বাতেন, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রসাশক মীর মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত ডিআইজি মারুফ হোসেন পিপিএম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থিদের পক্ষ থেকে টাঙ্গাইলের সাইদুল ইসলাম, রাজবাড়ীর ফারুক শেখ এবং চরমপন্থী শাহজাহান মিয়ার স্ত্রী নাজমা আক্তার বক্তব্য রাখেন। এরা তাদের বক্তব্যে তাদের অন্ধকার জীবনের দুঃখ, দুর্দশা ও চরম নিরাপত্তাহীন জীবনের গল্প শোনান।
উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ). স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করেন চরমপন্থিরা।-ছবি মুক্ত প্রভাত
বর্তমানে তারা আলোর পথে এসে জীবনকে নতুন করে গড়ার প্রতিশ্রুতি দেন। সেই সাথে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল মামলা প্রত্যাহার করে নেবার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন।
অনুষ্ঠানের মাঝে চরমপন্থিদের পক্ষ থেকে ৫ জন সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে তাদের অস্ত্র তুলে দেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান অনুষ্ঠান শেষে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে কথা বলেন।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদেরকে আত্মসমর্পণকারী বিপথগামীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ও আত্মসমর্পণকারীদের পূণর্বাসনে তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
আত্মসমপর্ণ অনুষ্ঠানে মেহেরপুর, রাজবাড়ী, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, নাটোরের মোট ৩১৫ জন চরমপন্থি সর্বহারা আত্মসমর্পণ করেন। এসময় তাদের পক্ষ থেকে ২১৩টি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক ও দেশীয় অস্ত্র জমা দেওয়া হয়।