
হতাশা ও সম্ভাবনা নিয়ে ফিরছেন ট্রাম্প; বড় পরিবর্তন আসবে যুক্তরাষ্ট্রে
আজ দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউসে ফিরছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাজনীতি ও অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে ধারণা করা হচ্ছে। এই এজেন্ডা মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির খুঁটিনাটি পরিবর্তনের পাশাপাশি আমেরিকার সীমানার বাইরে বসবাস করা কোটি মানুষের জীবনেও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবে।
প্রধান প্রধান আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলোর ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হতে পারে তার ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হলো— শুরুতেই আসে ইউক্রেন প্রসঙ্গ। নির্বাচনী প্রচারণা সভায় বিভিন্ন বক্তব্য ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার বলছেন যে তিনি রাশিয়া—ইউক্রেন যুদ্ধ একদিনের মধ্যে শেষ করতে পারবেন। যদিও সেটি কিভাবে করবেন তা কখনো কখনোই খোলাসা করেননি।
তিনি রাশিয়া—ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে যে কোটি কোটি ডলার অনুদান দিয়েছে মিস্টার ট্রাম্প সবসময় সেটির সমালোচক ছিলেন। ১০০ দিনের মধ্যে এই যুদ্ধ থামানোর পরিকল্পনা রয়েছে তার। সম্প্রতি বলছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন তার সাথে দেখা করতে চান এবং ট্রাম্পের সহযোগীরা ওই বৈঠকে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
নেটো প্রসঙ্গঃ যুক্তরাজ্য ফ্রান্স জার্মানির সভা প্রতিষ্ঠিত দেশের সামরিক জোট নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনএবং ন্যাটো বহুদিন ধরেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের চক্ষুশূল ছিলেন।
প্রথম ধাপে প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন হুমকি দিয়েছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্রকে নেটো থেকে প্রত্যাহার করে নেবেন। যদি ন্যাটোর সদস্যরা তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নিজ নিজ দেশের জিডিপি ২ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় না করে ।
তাদের জাতীয় আয়ের ৫% প্রতিরক্ষায় বরাদ্দ করে বর্ণনা অনুযায়ী তার লক্ষ্য হলো ন্যাটোর উদ্দেশ্য ও মূলনীতির পূর্ণ মূল্যায়ন যুক্তরাষ্ট্রকে জোট থেকে তিনি কখনোই সরিয়ে নেবেন কিনা। এসব নিয়ে বিশ্লেষকদের দ্বিমত আছে কিন্তু অনেক বিশ্লেষক মনে করেন জোটের সদস্য হিসেবে থেকেও ন্যাটোর প্রতি গুরুত্ব কমিয়ে দিতে পারেন মিস্টার ট্রাম্প ।
গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার পরই প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে যোগ দিচ্ছেন। তবে দীর্ঘমেয়াদি এই যুদ্ধ পাকাপাকিভাবে বন্ধ করতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য অনেক কঠিন হবে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমবার প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ইসরাইলে পক্ষে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছিলেন এর মধ্যে ছিল জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে দাবি
করা এবং তেল আবিব থেকে মার্কিন এম্বাসি জেরুজালেম সরানোর সিদ্ধান্ত ছাড়াও ইরানের বিরুদ্ধে তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন। অনেকের মতে মিস্টার ট্রাম্পের নীতির কারণে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি পরিস্থিতি কিছুটা অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে ফিলিস্তিনিরা।
চীন প্রসঙ্গেঃ ট্রাম্প প্রথম ধাপের ক্ষমতায় থাকাকালীন চীনের সাথে একপ্রকার বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। এই দফায় তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্য আমদানি ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কর আরোপ করবেন।
নতুন প্রেসিডেন্ট জলবায়ু পরিবর্তনের ধারণা হিসেবে এর বিরোধী হিসেবে পরিচিত গৃহ এনার্জি বা পরিবেশ বান্ধব জ্বালানির ধারণাকে এর আগে জালিয়াতি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। প্যারিস চুক্তি থেকে তিনি আবারও যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেবেন বলে মনে করেন।
অভিবাসন যথাযথ অনুমোদন ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অধিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রতিশ্রুতি ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের। এবারের নির্বাচনে প্রচারণায় একটি অন্যতম প্রধান অংশ হোয়াইট হাউজে বসে প্রথম দিন থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিতারিতকরণ কর্মসূচি শুরু করবেন। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের জন্ম নিলেই যে মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব অর্থাৎ জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব বিধান সেই নীতিরও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যেতে পারে।
গ্রীনল্যান্ড ও পানামা খালঃ
গ্রীনল্যান্ড কিনতে চেয়ে পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নিতে চেয়ে মন্তব্য করে ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। আগের দফা প্রেসিডেন্ট থাকার সময় মিস্টার ট্রাম্প গ্রীনল্যান্ড কিনে দিতে চাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। অন্যদিকে পণ্য মালামাল পরিবহনের পথ পানামা খাল অতিরিক্ত ব্যয় ব্যবহার এবং এই পথ দিয়ে পণ্য পরিবহনের খরচ কমানোর জন্যই যুক্তরাষ্ট্র পানামা খালের দখল নেবে বলে মন্তব্য করেছিলেন।