
—ছবি মুক্ত প্রভাত
চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ। সবেমাত্র আরাম করে বসেছি। ট্রেন ছুটছে আপন গন্তব্যে। মিনিট দশেক পর সিট খানার মালিকানা দাবি করে এক তরুণী আমাকে আসনটি ছেড়ে দিতে বললেন।
বললেন— এটা আমার সিট.….
বড্ড আগ্রহভড়ে তার টিকিটখানা দেখতে চাইলাম— দেখি আপনার টিকিটটা। না....এই আসনটি আপনার নয়। দয়াকরে পেছনের আসনে যান।
মাঘের কনকনে ঠান্ডা। কুয়াশার চাদরে মোড়ানো ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতে এভাবেই শুরু হলো আমার প্রথম ট্রেন ভ্রমণ। গন্তব্য কমলাপুর রেলওয়েস্টেশন থেকে পাবনার চাটমোহর স্টেশন।
হাসিমুখে পেছনের জানালা ঘেঁষা আসনটিতে বসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সেই তরুণী। মাথার ওপরের র্যাকে নিজের ব্যাগটি রেখেছেন। সময় তখন রাত ১০ টা বা তার আশেপাশে হবে। প্রকৃতিতে মাঘের শীত অনুভূত হলেও ট্রেনের ভেতর তেমন ঠান্ডা জেঁকে বসেনি। হঠাৎ ঠান্ডা পানি আমার মাথা বেয়ে শরীরের ডানপাশটা কিঞ্চিৎ ভিজিয়ে দিল। শীতের রাতে ততক্ষণে গায়ের আবরণ ফুলহাতা জামাটাও চুপসে গেছে। আচমকা ঠান্ডা পানির পরশ পেয়ে আমি রেগে লাল।
চেচিয়ে বলে উঠলাম—কে...কে কে? ওপাশ থেকে নরম স্বরে—ছরি...ছরি ছরি ছরি...আমি ইচ্ছে করে দেইনি।
পেছনে ঘুরে তাকাতেই দেখলাম সেই তরুণী, একসাথে ছরি বলে যাচ্ছেন। চোখে মুখে তার অনুশোচনার ছাপ। বুঝলাম- মাথার ওপরের র্যাকে যে ব্যাগটি তিনি রেখেছেন, সেই ব্যাগে ঠাঁই পাওয়া বোতলটির মুখ ফসকে তরুণীর খাবার পানি আমাকে আলতো করে ছুঁয়ে গেছে। তবু্ও বেশি কিছু বলার দুঃসাহস আমি করতে পারিনি। কেবল বললাম—.….ঠিক আছে। এরইমধ্যে যে আসনে আমি বসে আছি, সেই আসনের ভ্রমণকালীন প্রকৃত মালিক আমাকে আসন থেকে সরিয়ে দিলেন।
আসনটি ছেড়ে সামনেই দাঁড়িয়ে রইলাম। কোথা থেকে যেন মধ্য বয়সি এক ভদ্রলোক এসে আমারই পাশে দাঁড়ালেন। একপর্যায়ে তার হাতে থাকা পোটলাটিকে সিট বানিয়ে বসে পরলেন। আমাকে বললেন ফ্যান চালু করতে। বুঝলাম তার হাই-প্রেসার। ফ্যান চালু করে আমিও ফ্যানের নিচেই দাঁড়িয়ে রইলাম।
হঠাৎ কে যেন জিজ্ঞেস করলেন—'আপনার শার্ট শুকিয়েছে।' বাঁয়ে ঘুরে দেখলাম সেই তরুণী। তার তেষ্টা মেটানোর বোতলভর্তি জলটুকু আমাকে স্পর্শ করে গড়িয়ে পড়েছে শরীরজুড়ে। ....ও... আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আমার শার্টটি চুপসে গেছে। হ্যাঁ শার্টতো শুকিয়ে গেছে।
তিনি বললেন— কোথায় যাবেন? পবনার চাটমোহর স্টেশন। আপনি...? আমি তো— ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছিলাম। রাতেই রওনা দিলাম। আগামীকাল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এডমিশন দেবো। তাই এতো তাড়াহুড়ো করে যাওয়া। ও ও...
পরীক্ষা কেমন হলো..? খুব খারাপ হয়নি, তবে খুব ভালোও হয়নি। সুন্দর আগামীর জন্য তাকে শুভকামনা জানালাম। এভাবেই দুজনের মধ্যে কথোপকথন চলছে। পাতলা গরণের মুখখানা শ্যামলা বর্ণের। অদ্ভুত মায়া জড়ানো সেই মুখটির প্রেমে,তখনো নিজেকে জড়াইনি। তবে রসালো কথার ফুলঝুড়ি ছুটছে দুজনের কাছ থেকে।
বিভিন্ন বয়সি নারী পুরুষসহ আমার ভ্রমণকালীন সঙ্গী ছিলেন অন্তত ১০ জন। অচেনা এক তরুণীর সাথে এক তরুণের এমন বন্ধু সূলভ কথাবার্তায় তারা হতচকিয়ে গেলেন। আরো অবাক হলেন—দুজনের খাবার আদান প্রদান দেখে। দুজনের কথাগুলো বেশ আগ্রহ নিয়ে শুনছিলেন তরুণীর বাঁ পাশে বসা দুই ব্যক্তিও।
দরিদ্র আমি কোনো মতে একটা সেদ্ধ ডিম কিনে খাচ্ছিলাম। বিষম উঠতেই তরুণীর জুসটা আমাকে পান করতে দিলেন। বললেন— নিন জুস খেলে ভালো লাগবে। তার কথা মতো জুস নিয়ে পান করলাম। আমি তাকে সেদ্ধ ডিম দিতে চাইলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি। তাতে আমিও অবশ্য কিছু মনে করিনি।
একটু পরে...
ওই তরুণী বললেন— নিন চিপস খান। না থাক। প্লিজ নিন। না চিপসে খেতে মন চাইছে না।
চিপস না নিলে কিন্তু আমি মন খারাপ করবো, আপনি না খেলে আমিও খাবো না। ঠিক আছে দিন। চিপস খাওয়া যেমন তেমন গল্প হচ্ছিল বেশ। ট্রেনের সিট না থাকায় আমি দাঁড়িয়ে আর সিট থেকেও তিনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আামার সাথে গল্পে মেতেছেন।
এতোক্ষণও দুজনের নাম জানাজানি হয়নি। জিজ্ঞেস করলাম— আপনার নামটা। কিছু একটা বললেন ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। আবারো..জি বুঝিনি আরেকবার বলবেন। তরুণী আবারো নিজের নামটা বললেন ঠিকই কিন্তু আমি তা পরিস্কার করে বুঝতে পারলাম না।
তিনিও জিজ্ঞেস করলেন— আপনার নাম কী? মো. রাশিদুল ইসলাম। বুঝিনি আরেকবার বলুন। রাশিদুল ইসলাম। ও ও ও ও...
তরুণীর প্রশ্ন— কি করেন আপনি? সাংবাদিকতা। পেশার কথাটা শুনে বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন। বড় আগ্রহ ভরে তার বাঁ পাশে বসা এক যুবক এবং ৬৫ ছুঁই ছুঁই বয়েসর এক ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। বললেন, আমার বা আর ভাই। তাদের সঙ্গেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছি।
বি স্তারিত আসছে....