
রোবার রাতে ভ্যানচালক তাজেম মোল্লাকে কম্বল দিচ্ছেন ইউএনও সালমা আক্তার।-ছবি মুক্ত প্রভাত
হিম শীতল বাতাসে যুবথুবু অবস্থা। কুয়াশার চাদরে মোড়ানো প্রকৃতি। প্রকৃতির এমন কত শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে রাতে ঘুরে ঘুরে শীতার্তদের কম্বল দিচ্ছেন গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালমা আক্তার।
রোববার রাতে উপজেলার চলনালী গ্রামে দুস্থ- অসহায়, দরিদ্রদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে কম্বল বিতরণ করতে দেখা গেল এই কর্মকর্তাকে।
কম্বল পাওয়ার পর হাসিমুখে ছামিদ সরকার (৭৫) বলেন, তিনি পেশায় ভ্যানচালক। ভ্যান চালিয়ে যা হয়, তাতে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকাই কঠিন। পৌষের হাড় কাঁপানো শীতে কাঁথা জড়িয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শীত নিবারণ হয়নি। প্রচণ্ড ঠান্ডায় তারা ঠিকমতো ঘুমাতে পারেননি। অর্থাভাবে লেপের ব্যবস্থাও করা সম্ভব হয়নি। ইউএনওর দেওয়া কম্বল পেয়ে তিনি ভীষণ আনন্দিত। রাতে অন্তত স্ত্রীকে নিয়ে কম্বলমুড়িয়ে শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, পথে, বাজারে ভ্যান-রিকশাচালক, নৈশপ্রহুরীদের কম্বল দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া মাদরাসার শিক্ষার্থী, গ্রামের অসহায়দের কাছে নিজেই কম্বল পৌঁছে দিচ্ছেন ইউএনও। দুইদিনে গুরুদাসপুর পৌর শহর ছাড়াও ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রত্যন্ত পাড়া গাঁয়ে অন্তত ৫ শ মানুষকে কম্বল দেওয়া হয়েছে।
গুরুদাসপুর (নাটোর): উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা আক্তারের দেওয়া কম্বলে নারীবাড়ি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা।
গুরুদাসপুর পৌর সদরের নারীবাড়ি মাদ্রাসার সাধারণ সম্পাদক দিল মোহাম্মদ বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এই মহতি উদ্যোগকে তিনি সাধুবাদ জানান। কম্বল পেয়ে মাদ্রাসার আবাসিক শিক্ষার্থীরা বেশ আনন্দিত এবং উচ্ছ্বাসিত। শিক্ষার্থীরা নির্বাহী কর্মকর্তার জন্য দোয়া করেছে।
উপজেলার সাবগাড়ি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল্লাহ জানান, তারাও গ্রামের সাধারণ মানুষদের জন্য নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তালিকা জমা দিয়েছেন। পাঁচ গ্রামের অন্তত ৫০ জন দুস্থকে শীত নিবারণের জন্য কম্বল দেয়ার ব্যবস্থা করায় তিনি নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ।
দরিদ্র নাছিমা বেগম (৫০) বলেন, কিছুদিন আগে আগুনে বাড়ির সব পুড়ে গেছে। টাকার অভাবে লেপ কিনতে পারেননি। একারণে মেয়েকে নিয়ে শীতের রাতগুলো নির্ঘুম কাটছিল। আজ তিনি কম্বল পেয়েছেন। এখন আর শীতে কষ্ট করতে হবে না। আরামে ঘুমাতে পারবেন।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. সালমা আক্তার বলেন, প্রকৃতিতে এখন হাড় কাঁপানো শীত। এই শীতে গরম কাপড় পড়েও শীত নিবারণ করা কঠিন। ছিন্নমূল মানুষের জন্য শীতের এই দিনগুলো খুবই কষ্টের। তাই তিনি রাতে ঘুরে ঘুরে অসহায়দের কাছে কম্বল পৌঁছে দিচ্ছেন। তার এই কম্বল বিতরণ অব্যাহত থাকবে।