
—ছবি মুক্ত প্রভাত
বিস্তৃর্ণ চলনবিলের যতদুর চোখ যায় হলুদের সমারহ। গত ৫ বছরে এই অঞ্চলে বেড়েছে সরিষার আবাদ ও উৎপাদন। চলতি মওসুমে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ৩০ কোটি টাকার সরিষা উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।
তবে আবাদ-উৎপাদন বাড়লেও কৃষক পর্যায়ে সরিষার দাম নিয়ে অসন্তোষের কথা বলেছেন চাষীরা। ভোজ্য তেল উৎপাদনকারী এই ফসলের দাম বৃদ্ধিতে সরকারের নজরদারির দাবি কৃষকদের।
কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মওসুমে চলনবিলের রাজশাহী ও বগুড়া অঞ্চলেই ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৬৮২ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। এরমধ্যে রাজশাহীতে ৬৫ হাজার ৯৭০, নওগাঁয় ৬০ হাজার ১০০, নাটোরে ৯ হাজার ১১৫, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩০ হাজার ৮১৫, বগুড়ায় ৩৭ হাজার ৫০২, জয়পুরহাটে ১৪ হাজার ১৬৫, পাবনায় ৪৪ হাজার ৮৯০ এবং সিরাজগঞ্জ জেলায় ৮৭ হাজার ১২৫ হেক্টর সরিষা চাষ করেছেন কৃষক। মণ প্রতি ২ হাজার ৭০০ থেকে ৩ হাজার টাকা গড় মূল্যে প্রায় ২ হাজার ৩০ কোটি টাকা দাঁড়ায়।
আঞ্চলিক কৃষি অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য বলছে, গত ৫ বছরে চলনবিল অঞ্চলে সরিষার আবাদ বেড়েছে ১ লাখ ৫৪ হাজার ১০৬ হেক্টর ও উৎপাদন বেড়েছে ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯০ মেট্রিকটন। অর্থাৎ ২০১৯-২০ মওসুমে রাজশাহী অঞ্চলের নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সরিষা আবাদ ছিল ৭৬ হাজার ৪৫১ হেক্টর। সেই আবাদ বেড়ে চলতি মওসুমে ১ লাখ ৬৬ হাজার হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। একই সাথে ওই মওসুমে বগুড়া অঞ্চলের জয়পুরহাট, পাবনা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলায় মোট আবাদ ছিল ১ লাখ ১৯ হাজার ১২৫ হেক্টর। এখন সেই আবাদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮২ হেক্টর।
কৃষি অফিসের হিসেব মতে, রাজশাহী অঞ্চলের চার জেলায় ২০১৯-২০ মওসুমে সরিষার উৎপাদন ছিল ১লাখ ৬৪ হাজার ৬০ মেট্রিকটন এবং বগুড়া অঞ্চলের চার জেলায় ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫৪৬ মেট্রিক টন। বর্তমানে উৎপাদন বেড়ে রাজশাহী অঞ্চলে ৩ লাখ ৫ হাজার ৪০ মেট্রিকটন এবং বগুড়া অঞ্চলে ৩ লাখ ৩ হাজার ৫৫১ মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে।
এই অঞ্চলের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, চলতি মওসুমে বিঘায় সাড়ে ৭ থেকে সাড়ে ৮ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে সরিষা চাষে। উৎপাদন ভালো হলো প্রতি বিঘায় ৬ থেকে সাড়ে ৬ মণ হারে ফলন পাওয়া যাবে। বিগত ৫ বছরে কৃষকরা সরিষার গড় বাজার মূল্য পেয়েছেন ২ হাজার ৫শ থেকে ৩ হাজার ৫শ টাকা পর্যন্ত। তবে গত মওসুমে দাম কিছুটা বেড়ে ২ হাজার ৮শ থেকে ৩ হাজার ৯শ টাকা পর্যন্ত পাওয়া গেছে।
চলনবিলের কৃষক আমিন উদ্দিন, বাবু শাহ, মজনু প্রামাণিকসহ শতাধিক চাষি বলেন, তারা প্রতি বছরই সরিষা আবাদ করেন। এই আবাদে তুলনামূলক কম পরিশ্রম হয়। চলনবিল অঞ্চলে তারা বৃহৎ আকাড়ে সরিষা আবাদ করলেও কাঙ্খিত বাজার মূল্য পাচ্ছেন না। অথচ বর্তমান বাজারে সরিষার ভোজ্য তেলের ব্যপক চাহিদা রয়েছে। একারণে তেলের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ সে অনুযায়ী কৃষক পর্যায়ে সরিষার দাম বাড়েনি। তারা চাষী পর্যায়ে সরিষার মূল্য বৃদ্ধির দাবি জানান।
কৃষিবিদ হারুনর রশীদ বলেন, চলনবিলে দিগন্তজোড়া হলুদের অপরূপ গালিচা বিছিয়েছে উফশী ও স্থানীয় জাতের সরিষা ফুল। সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে কৃষকের সরিষা ক্ষেতে ভিড় জমাচ্ছেন সৌন্দর্য্য পিপাসুরা। সরিষা ফুল যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ছড়াচ্ছে তেমনি দেশের ভোজ্য তেলের ব্যাপক চাহিদাও মেটাচ্ছে।
আঞ্চলিক কৃষি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শফিউদ্দিন বলেন, কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপকভাবে সরিষা আবাদ বৃদ্ধিতে কাজ করা হচ্ছে। প্রতি বছরই চলনবিলে সরিষার আবাদ বাড়ছে। সরিষা আবাদ বাড়লে আমদানি নির্ভর সয়াবিন তেলের চাহিদা কমবে। একারণে সরিষার আবাদ, উৎপাদন এবং মানসম্মত ভোজ্য তেল উৎপাদনে তারা চাষি পর্যায়ে কাজ করছেন।