
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদী সংলগ্ন গাবখান ইকো পার্কে এক প্রেমিকাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে প্রেমিক আলী ইমাম খান ওরফে অনু (৩২)। সে ঝালকাঠি জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। শহরের ফকির বাড়ী সড়কের বাসিন্দা মোঃ দিলদার হোসেন খানের ছেলে আলি ইমাম খান।
সে তার বাবার সাথে দলিল লেখকের কাজ করত। নিহত সায়মা পারভীন (২০), শহরের একই এলাকার টিনের ব্যাবসায়ী শাহাদাত তালুকদারের কন্যা। সে ঝালকাঠি সরকারী মহিলা কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। সোমবার সকাল আনুমানিক সারে ১০ টার দিকে এই হত্যার ঘটনা ঘটে। হত্যারপর অনু তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে স্ত্রী হত্যার কথা দাবী করে পুলিশের কাছে আত্মস্বমর্পণ করে।
প্রেমিকাকে হত্যার পর প্রেমিক আলি ইমাম খান অনু ঝালকাঠি সদর থানায় এসে পুলিশের কাছে আত্মস্বমর্পণ করে। এই ঘটনার সাথে সাথে অনুকে নিয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল ইকোপার্কে গিয়ে সায়মার মৃতদেহ উদ্ধার করে।
এসময় মেয়েটির বুকের বা পাশে ছুরিটি বিদ্ধ ছিল। তার শরিরে মোট ৪ টি ছুরি দিয়ে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ঘটনার সাথে সাথে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মহিদুল ইসলাম ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেছেন।
পুলিশ সুত্রে জানাযায়, সকাল আনুমানিক সারে ৯ টার দিকে অনু ইকোপার্কে আসে। এরপর মোবাইল করে প্রেমিকা সায়মাকে ইকোপার্কে আসতে বলে সায়মার আটকে রাখা মোবাইল ফোন নিতে আসার জন্য।
পৌনে ১০ টার দিকে সায়মা ঘটনাস্থলে এলে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে অনু প্রেমিকা সায়মাকে কুপিয়ে হত্যা করে চলে যায়। ঘটনাস্থলে মেয়েটির ভেনেটি ব্যাগের ভিতরে একটি নতুন ছুরি পাওয়া গেছে।
এই ঘটনার বিষয়ে আলি ইমাম খান অনু এই হত্যার দায় স্বিকার করে জানায়, এই ঘটনার সাথে অন্য কেউ জড়িত নয়। ২০২১ সালের পূর্ব থেকেই আমাদের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর আমাদের উভয়ের পরিবারের অজ্ঞাতে বিয়ে করি।
তবে পারিবারিক সমর্থন না পাওয়ায় সায়মাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘরে আনতে পারিনি। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে সায়মা গোপনে মামাতো ভাইয়ের সাথে পরকিয়ায় লিপ্ত হয়। গভীর রাতে অন্য ছেলেদের সাথে সে আপত্তিকর চ্যাটিংয়ে লিপ্ত হতো। এব্যাপারে গত দেড় বছর ধরে তাকে আমি অনেক বোঝানোর পরেও সে এ পথ থেকে ফিরে আসেনি। তাই আমি তাকে নিজ হাতে খুন করেছি।
নিহত সায়মার বাবা শাহাদাত তালুকদার পুলিশের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। এসময় ঘটনাস্থলে এসে মেয়ের লাশ দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। তিনি জানান, আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।
অনুর সাথে আপনার মেয়ের বিয়ে হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন বিয়ের কথা সম্পূর্ন মিথ্যা। আমি এই হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই।
ঘটনার বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মহিতুল ইসলাম বলেন, অনুকে গ্রেফতারের পরে তার কাছ থেকে জানতে পারি মেয়েটি তার স্ত্রী।
কিন্তু তাদের পরিবারের কেউ জানেনা তারা বিয়ে করেছে। তারা উভয়ই পরকিয়ার বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মেয়েটিকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে অনু। ছেলেটির উদ্দেশ্য ছিলো পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মেয়েটিকে হত্যা করা।
আমরা খবর পেয়ে সদর থানার ওসি নাসির উদ্দিন সরকারসহ ঘটনাস্থলে এসে সায়মাকে মৃত অবস্থায় পরে থাকতে দেখি। পুলিশ সুত্রে জানাযায়, সায়মার শরিরের পেটে ৩ টি এবং বুকে একটি ছুরির কোপের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
সদর থানার ওসি নাসির উদ্দিন সরকার বলেন, ঘটনাস্থলে মেয়েটির মৃতদেহের সুরতহাল করে ময়না তদন্তের জন্য ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এবিষয়ে মেয়েটির অভিভাবকের পক্ষ থেকে মামলার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।