
—ছবি মুক্ত প্রভাত
সাতক্ষীরা উপকূলে বাড়ছে লবন সহিষ্ণু ধানের চাষ। এখানে চাষাবাদ বাড়লেও সংকট দেখা দিয়েছে মিঠাপানির। সরকারি খাল-জলাশয়গুলো মিঠাপানি সংরক্ষণের উপযোগী করা হলে উপকূলে ধান চাষে নতুন দিগন্তের সূচনা ঘটবে।
উপকূলের কৃষকরা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে বোরো চাষের জন্য আগাম প্রস্তুতি শুরু করেছেন কৃষকরা। জমি প্রস্তুত, বীজতলা তৈরির কাছে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। মাঠে রয়েছে পাকা আমন। আমন কাটার পরই শুরু হবে বোরো ধানের আবাদ।
স্থানীয় কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় লবনসহিষ্ণু জাতের ধান চাষ করে ভাল ফলন পেয়ে কৃষকের আগ্রহ আরো বেড়েছে। গত বোরো মৌসুমে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১৯০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে বোরো চাষ হয়েছিল ২২০০ হেক্টর জমিতে। সেবার ফলনও ভাল হয়েছিল। চলতি মৌসুমে ৩৫০০ হেক্টর জমিতে বিনা-১০, ব্রি-৬৭ ও হাইব্রিড জাতের বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামের কৃষক জবেদ আলী মুক্ত প্রভাতকে জানান, তিনি প্রতিবছর ১ একর জমিতে বোরো ধানের চাষ করেন। চলতি মৌসুমে দেড় একর জমিতে বোরো ধান চাষ করবেন। সে অনুযায়ী বীজ সংগ্রহ করেছেন।
তিনি আরো জানান, উপকূলের বুকচিরে বয়ে যাওয়া সরকার খাল-জলাশয়গুলো মাছচাষের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। ইজারাপন্থা বাতিল করে এসব খাল-জলাশয়গুলো চাষাবাদের জন্য উন্মুক্ত করা গেলে উপকূলেও কৃষি বিপ্লব ঘটতে পারে।
সূত্র মতে, উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগরেই রয়েছে ১২০টির অধিক খাল-জলাশয়। ঝড়-বৃষ্টির পানি এসবখালে সংরক্ষিত থাকে। অথচ খালের সেই পানি মাছচাষিদের কাছে ইজারা দেওয়া হয়। এতে চাষাবাদের জন্য মিঠাপানির সংকটে পড়েন চাষীরা।
কৃষকদের দাবি, খাল-জলাশয়গুলো পুনঃখনন করে মিঠাপানি সংরক্ষণ করা হলে কৃষকরা শুষ্ক মৌসুমে সহজেই কম খরচে বোরো ধানসহ মৌসুমভিত্তিক ফসল উৎপন্ন করতে পারেন।
কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্য বলছে, উপকূলের এসব ফসলি জমিতে বর্তমানে লবনাক্তার প্রকোপ থাকলেও লবন সহিষ্ণু ধান চাষ করে কৃষকরা সফল হচ্ছেন কৃষকেরা। বর্তমানে জমিতে ৩ থেকে ৪ পিপিটি পরিমাণ লবন রয়েছে।
জেলেখালী গ্রামের বোরো চাষি নিরঞ্জন মণ্ডল মুক্ত প্রভাতকে বলেন, তিনি উপকূলের মতো জমিতে বোরো ধান চাষ করে ভালো ফলন পাচ্ছেন। কিন্তু বোরো চাষে সেচ দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশি দুশ্চিন্তায় পড়তে হচ্ছে। মিঠাপানির অভাব থাকায় দুর্ভোগ বাড়ছে। সরকারি খাল-জলাশয়গুলো খনন করে মিঠাপানি সংরক্ষণের উপযোগী ও উন্মুক্ত করা হলেও সেই পানিতে কৃষকরা ধানসহ নানা ধরণের ফসল চাষ করতে পারবেন।
এদিকে শ্যামনগর উপজেলা চিংড়ী চাষ প্রবন এলাকা হলেও চিংড়ীতে বেশী লাভবান না হওয়ায় কৃষকরা আমন, বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসল চাষে ঝুঁকে পড়ছেন। মুন্সিগঞ্জ, কৈখালী, কাশিবাড়ি, ঈশ্বরীপুর, রমজাননগর, ভূরুলিয়া, নুরনগর, শ্যামনগর সহ অন্যান্য ইউনিয়নে বোরো আবাদের ব্যাপক হারে বাড়ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হুদা মুক্ত প্রভাতকে বলেন, বোরো চাষিদের বেশি বেশি জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। কমাতে হবে অতিরিক্ত ইউরিয়ার ব্যবহার। সেই সাথে লবনাক্ততার পরিমাপ মাপার জন্য সংশ্লিষ্ট অফিসে যোগাযোগ করার অনুরোধও জানান তিনি।
মুক্ত/আরআই