
গুরুদাসপুর (নাটোর): জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় এভাবেই পানির নিচে পড়েছে রোপা আমন ধান।-ছবি মুক্ত প্রভাত
মাঠের ধানে থোর গজিয়েছে। অনুকুল পরিবেশ পেলে দিন পনেরোর মধ্যে থোর ভেদ করে জমবে দুধসর। অথচ গত কয়েক দিনের বর্ষণেই রোপা আমন খেতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পুকুরের পাড়গুলো কৃত্রিম বাঁধ সৃষ্টি করেছে পানি নিস্কাশনের পথে। ফলে জলাবদ্ধতায় খেতেই পচন ধরেছে ধান গাছে।
গুরুদাসপুরের বামনকোলা ও গারিষাপাড়া বিলের ১শ বিঘা জমির ফসল এখন পানির নিচে। স্থায়ী জলাবদ্ধতার শঙ্কায় রোপা আমন ধান বাঁচাতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষকদের দাবি, এই বিলে অন্তত ২ হাজার বিঘা ফসলি জমি রয়েছে। তুলনামূলক উঁচু হওয়ায় এসব জমিতে বছরজুড়েই ফসল ফলানো যেত। কিন্তু ফসলি জমিতে অবৈধভাবে যত্রতত্র পুকুর খনন করায় বিলের পানি নিস্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এই সংকট তৈরি হয়েছে গত প্রায় ১৫ বছর ধরে। তখন থেকেই তিন ফসলি জমিতে বছরে একটি ফসল উৎপন্ন করতে পারছেন কৃষক। বেশিরভাগ সময় জমিগুলো পানিতে ডুবে থাকায় অন্য দুই ফসল চাষাবাদ করা সম্ভব হয়না।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, গত ১৩ বছরে গুরুদাসপুর উপজেলায় ফসলি জমি কমেছে ১ হাজার ৫১০ হেক্টর। কমে যাওয়া এসব জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খনন করা হয়েছে। এতে করে বর্ষ মওসুমে শুধু গাড়িষাপাড়া আর বামনকোলা বিল নয় উপজেলার অন্তত ২০টি বিলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। মারাত্মক ফসলহানির মুখে পড়েন কৃষকেরা।
বামনকোলা গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন জানান, বামনকোলা বিলের পাঁচ বিঘা জমিতে রোপা আমনের চাষ করেন তিনি। তাও জলাবদ্ধার শঙ্কায় দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়। অথচ একই জমিতে একসময় তারা বছরে তিন ফসল উৎপন্ন করতেন। পুকুর খননের ফলে পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ায় বছরের বেশিরভাগ সময় তার জমিটি পানির নিচে থাকে।
স্থানীয় কৃষক রফিক হোসেন, আবুল হোসেন, আসাদ মোল্লা, লেদু প্রামানিকসহ অন্তত ২০জন কৃষক ইত্তেফাককে জানান, পানি নিস্কাশনের স্থায়ী ব্যবস্থা করা হলে বিলের জমিতে তারা আগের মতো তিন ফসল চাষ করতে পারবেন। একারণে তারা উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করে সোমবার মানববন্ধন করেছেন। এতে গ্রামের শত শত কৃষক উপস্থিত হন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ বলেন, দুইটি বিলের অন্তত ১শ বিঘা জমির রোপা আমন ধান পানির নিচে রয়েছে। প্রতি বছরই এই দুই বিলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে ক্ষতির মুখে পড়েন কৃষক।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা আক্তার বলেন, কৃষকের স্বার্থে পানি নিস্কাশনের স্থায়ী ব্যবস্থা করে বিল দুটিকে তিন ফসল চাষের উপযোগী করে তোলার জন্য পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হবে।