
ঝালকাঠি আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছে বাসিন্দারা- ছবি মুক্ত প্রভাত
ঝালকাঠির ৮টি আশ্রয়ন প্রকল্পের অধিকাংশ ঘর বসবাসের অযোগ্য হওয়ায় এখানকার বাসিন্দারা অন্যত্র চলে যেতে শুরু করেছে। অসহায়, দরিদ্র ও ভূমিহীন ৪৫০ টি পরবারকে এসব ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ ২০০৬ ও ২০০৭ সনে নির্মানের পর ঘর গুলোর আর কোন মেরামত না করায় এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পরেছে। কমিউনিটি সেন্টার ভেঙ্গে থাকায় নেই চিত্তবিনোদনের কোন ব্যবস্থাা। নেই কোন কবরস্থাান। কেহ মারা গেলে যেতে হয় শহরে দাফন দিতে।
ঝালকাঠি সদর উপজেলার কিস্তাকাঠি আশ্রায়ন প্রকল্প বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে এবং সরেজমিনে দেখা যায়, সুগন্ধা, বীষখালি ও গাবখান ৩ নদীর মোহনায় অবস্থিাত এ আশ্রায়নে নেই কোন সাইক্লোন শেল্টার। ২০০৬ সনে ৬০ পরিবার এবং ২০০৭ সনে আরো ২৫০ ও ১৪০ সহ মোট ৪৫০ টি পরিবার এখানে থাকার সুযোগ পায়। অধিকাংশ ঘরের টিন নষ্ট হয়ে গেছে। ২৫ টি টিউবয়েলের মধ্যে সচল ৮টি। বাকি গুলো অকেজ প্রায় ৩ বছর ধরে।
ঘরের টিন নষ্ট হওয়ায় পলিথিন দিয়ে বর্ষার পানি ও রোদ থেকে বাঁচার চেষ্টা বছরের পর বছর। রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী। ১৮০ টি টয়লেট সব কটি ব্যবহারের অযোগ্য। তাই নিজেরাই বিকল্প ব্যবস্থাা করে নিয়েছে। কিছু পুরাতন টয়লেট জোড়াতালি দিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব টয়লেটের ময়লা দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পরায় পরিবশে দুষিত হচ্ছে। ৩টি কমিউনিটি সেন্টার পরিত্যাক্ত অবস্থাায় পরে আছে। কবরস্থাান নেই। বাসিন্দাদের কেহ মারা গেলে দূর্ভোগের শেষ নেই। নদী পার হয়ে বা সড়ক পথে ৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে শহরের কবরস্থাানে যেতে হয়। বেশির ভাগ যাতায়াতের একমাত্র উপায় খেয়া নৌকা। ড্রেন নেই। নিস্কাশনের কোন ব্যবস্থাা না থাকায় পানি জমে থাকে।
আশ্রায়নের বাসিন্দা রিকসা চালক বারেক ও আনিচ হাওলাদার জানান, দীর্ঘ ১৬ বছরে আমাদের নির্মিত ঘর টয়লেট সংস্কার করা হয়নি। আমরা কোন মতে দিন আনি দিন খাই অবস্থায় দিনাতিপাত করি, ঘর সংস্কার করতে পারছিনা। প্রতিটি ঘরে পলিথিন দিয়ে রোদ পানি কোন মতে সামাল দিচ্ছি। আরেক বাসিন্দা মমতাজ বেগম (৭০) জানান, স্বামি সন্তান নেই। বিধবা হয়ে প্রতিদিন কিছু কাঁচা তরকারি বিক্রি করে চলি। কিভাবে ঘরের চাল ঠিক করব। রাতে মহিলারা ভেঙ্গে যাওয়া বাথরুমে যেতে ভয় পাই।
ইতিমধ্যেই চলে গেছে অনেক বাসিন্দা। আরো অনেকেই যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এদের মধ্যে দিনমজুর সোলায়মান হাং (৬৫) আশ্রায়ন ছেড়ে গাবখান ফেরিঘাট এলাকায়, বাসিন্দা নান্না মিয়া (৫০) অতুল মাঝি খেয়াঘাট, দিনমজুর বাসিন্দা মোনায়েম (৪০) বন্দাঘাট, বাসিন্দা রুস্তুম হাং (৭০) কলেজ খেয়াঘাট, দিনমজুর খোদেজা বেগম (৪৫) শশানঘাট, দিনমজুর মরিয়ম বেগম (৫০) পালবাড়ি এলাকায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
এ বিষয়ে কিস্তাকাঠি আশ্রয়ন প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক মো. মন্টু খলিফা জানান, এই ঘর নির্মানের পর কোন সংস্কার না করায় নরবরে হয়ে পরছে। তিন নদীর মুখে আমরা থাকায় ঝড় বন্যায় নিরাপদ স্থাানে আশ্রয় নিতে পারিনা। ১৪০ পরিবারের দক্ষিণ পশ্চিমাংশে নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। আমদের এই সব সমস্যার কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদ, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সর্বত্র আবেদন করেও সুফল পাচ্ছিনা।
এই আশ্রয়নে ৫৩ হিন্দু পরিবার থাকলেও এখানে নেই তাদের নূন্যতম সুযোগ সুবিধা। হিন্দু বাসিন্দা শুরেস মিস্ত্রি, শংকর মালাকার, অমূল্য বেপারি, সবিতা রানী জানান, তাদের জন্য ২টি টিউবয়েল থাকলেও অকেজ। কবছর আগে নির্মিত চলাচলের একমাত্র পোলটি নরবরে হয়ে পরেছে। দীর্ঘ দিন ধরে এই সম্প্রদায়ের পূজার জন্য একটি দূর্গা মন্দিরের দাবি পূরণ হয়নি।
সরেজমিনে চরভাটারকান্দা আবাসিক প্রকল্প-২ এর আশ্রয়নে গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। এখানে ২৬০ পরিবারের মাথা গোজার ঠাই হলেও এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পরেছে।
এ আশ্রয়নের সভাপতি মো. নয়ন খান বলেন, সরকার আমাদের এখানে বসতি স্থাাপন করে দিলেও দীর্ঘ সময়ে কোন সংস্কার না করায় সব নষ্ট হয়ে গেছে। টিন মরিচা পরে ছিদ্র হওয়ায় পলিথিন দিয়ে থাকতে হচ্ছে। গড়মে কোন রকম হলেও শীত ও বর্ষায় থাকার কোন উপায় নেই। নিরুপায় হয়ে ইতিমধ্যেই এখান থেকে চলে যেতে শুরু করেছে অনেকেই। আরব আলী (৫৫) এখান থেকে ঝালকাঠির কাটপট্টি এলাকায় চলে গেছে। জেলে ইউনুস খান (৪৫) এখান থেকে নেমে শশুর বাড়ি আশ্রয় নিয়েছে। দোকানদার সোহাগ মোল্লা (৪২) চাচার বাড়িতে গিয়ে উঠেছে। শ্রমিক কবির হাং (৫৫) অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। বাসিন্দা শ্রমিক হালিম হাওলাদার (৪৫) এখান থেকে গিয়ে শহরের সদর হাসপাতালের পিছনে আশ্রয় নিয়েছে।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনুজা মন্ডল জানান, পুড়াতন আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর টয়লেট মেরামতের জন্য ৩ মাস আগে বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ পর্যন্ত বরাদ্দ আসেনি। বরাদ্দ এলে সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।