-1683194816.jpg)
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে তদন্ত
দিন মজুর সাহারা বেগম এখন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরেই থাকেন। তবে এই ঘর পেতে তাকে দিতে হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। ইউপি চেয়ারম্যান শওকত রানা লাবুর নাম করে টাকা নিয়েছেন গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম।
শুধু সাহারা বেগম নন তার মতো আরো ৭ নারীর কাছ থেকে ঘর দেওয়ার বিনিময়ে ৫০ হাজার করে টাকা নেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। ওই ৭ নারী হলেন- লক্ষীপুর গ্রামের রেজাউল করিমের স্ত্রী আসমা বেগম, ছাইফুল হোসেনের স্ত্রী ইঞ্জিরা বেগম, মৃত-হাসমত আলীর স্ত্রী রাবিয়া বেগম, মৃত-আবেদ আলীর স্ত্রী রিজিয়া বেগম, মৃত-তারামিয়ার স্ত্রী হাবিয়া বেগম, আব্দুল হামিদের স্ত্রী সাহারা বানু ও ইয়াছিন আলীর মেয়ে বিউটি খাতুন।
এঘটনায় বুধবার (৩ মে) নজরুল ইসলামকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগি দুই নারী সাহারা বেগম (৫২) ও মমতা বেগম (৪৫)। ভুক্তভোগিদের বাড়ি উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামে। অভিযুক্ত নজরুল ইসলাম একই ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামের মৃত আমীর আলী মণ্ডলের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম ও সাবেক চেয়ারম্যান শওকত রানা লাবুর মধ্যে ঘনিষ্টতা ছিল। মূলত রাজনৈতিক কারণে সম্প্রতি তাদের মধ্যে দুরত্ব বাড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি সামনে আসে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে নাটোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নুর আহমেদ মাসুম গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঢেকে ওই ৭ নারীর জবানবন্দি নেন। এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রাবণী রায় ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসান সাকিল উপস্থিত ছিলেন। তবে অভিযুক্ত নজরুল ইসলাম জবানবন্দি দিতে আসেননি।
নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নুর আহমেদ মাসুম জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি নিয়ে তিনি তদন্ত করছেন। তদন্ত চলাকালীন বিষয়টি নিয়ে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ভুক্তভোগি ওই ৭ নারী দাবি করেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দিতে সাবেক চেয়ারম্যান শওকত রানা লাবুর নামে ৫০ হাজার করে টাকা নেন নজরুল ইসলাম। ঘর পাওয়ার পর টাকা ফেরত চাইলে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান নজরুল ইসলাম। একারণে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে নজরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার সকাল দশটার দিকে তার বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেন। সম্মেলনে তিনি লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করেন, মূলত নাজিরপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শওকত রানা লাবু আশ্রয়ণ প্রকল্পের কমিটিতে ছিলেন। নতুন চেয়ারম্যান আয়ুব আলী দায়িত্ব গ্রহণের পরও টাকার বিনিময়ে আগের তারিখ দেখিয়ে ভূমিহীনের প্রত্যায়ণ দিয়েছেন শওকত রানা লাবু। সেসব প্রত্যয়ণেই অভিযোগকারীরা চতুর্থ পর্যায়ে আশ্রয়ণের ঘর পেয়েছেন। রাজনৈতিকভাবে দলীয় পদ না পেয়ে তার বিরুদ্ধে দোষ চাপাচ্ছেন লাবু।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়ার নাম করে টাকা আত্মসাতের ব্যপারে মাস তিনেক আগে নজরুল ইসলামের নামে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন গোপিনাথপুরের আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী ময়না বেগম ও আলাল ব্যপারীর মেয়ে জয়নব। জয়নবের দায়ের করা মামলায় সম্প্রতি ১৭ দিন হাজতবাস করেন নজরুল ইসলাম। এরপর বুধবার (৩মে) মমতা ও সাহারা নামের দুই নারী বাদী হয়ে নজরুল ইসলামের নামে পৃথকভাবে আরো দুটি মামলা দায়ের করেন। এঘটনায় নজরুল ইসলামের সাংগঠনিক পদ প্রত্যহারের পর আবার তা বহাল রাখে উপজেলা আওয়ামী লীগ।
এদিকে ২০২১ সালের শেষের দিকে তখনকার ইউপি চেয়ারম্যান শওকত রানা লাবুর বিরুদ্ধেও সরকারি ঘর দেওয়ার নামে ১লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। সেসময় চন্দ্রপুর মাঝপাড়া গ্রামের জালাল উদ্দিনের দায়ের করা মামলায় ১৩দিন হাজত খাটেন তিনি। মামলাটি এখনো চলমান।
তবে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শওকত রানা লাবু আগের তারিখ দেখিয়ে ভূমিহীন প্রত্যয়ণ দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, নজরুল ইসলাম রাজনৈতিকভাবে তাকে হেয় করতে মিথ্যা বলছেন।