দেশে চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে বন্যার্তদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠনসহ বিভিন্ন বিভাগ, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সংগঠন মিলিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক সংগঠন। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুইটি দল বন্যার্তদের জন্য ত্রাণসামগ্রী নিয়ে পৌঁছেছেন বন্যা কবলিত স্থানে।

জানা যায়, দেশের এমন ক্রান্তিলগ্নে ইবি শিক্ষক ও কর্মকর্তা সমিতি একদিনের বেতনের টাকা জমা দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ক্যাম্পাস সহ ক্যাম্পাসের বাইরে আশেপাশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা সদরে ত্রাণ সংগ্রহ করে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি তারুণ্য সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, প্রায় প্রতিটা জেলা কল্যাণ সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬ টি বিভাগ আলাদা আলাদা করে ত্রাণ সংগ্রহ করে একত্রিত করছেন।

এছাড়াও সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরে গান গেয়ে পথচারীদের থেকে ত্রাণ সংগ্রহ করছেন একদল শিক্ষার্থী। পাশাপাশি ক্যাম্পাস থেকে নিজ খরচে পার্শ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, যশোর, মাগুরা এবং পাবনা জেলায় অবস্থান করে দিনব্যাপী ত্রাণ সংগ্রহ করে রাত্রে ক্যাম্পাসে ফিরে একত্রিত করে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। 

এদিকে সমন্বিত ত্রাণ থেকে একটা অংশ এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন হল এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে সংগৃহীত কাপড় চোপড় নিয়ে আজ রওনা দিবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল।

বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের থেকে জানা যায়, প্রত্যেকটা বিভাগ তাদের এলমনাই এবং বর্তমান শিক্ষার্থীদের থেকে অনলাইন মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ/নগদ/রকেট/উপায়) এর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে যাচ্ছে। তাদের পরিকল্পনা রয়েছে বন্যা পরবর্তী যে সংকট দেখা দিতে পারে তখন যেনো নিজেদের সংগৃহীত অর্থ দিয়ে পূনর্বাসনে সহায়তা করতে পারেন।

এ বিষয়ে ইবি পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুকান্ত দাস বলেন, জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ইশ্বর। আমরা আমাদের জায়গা থেকে বন্যার্তদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। এখানে বিষয়টি হলো আমরা অর্থ দান করছি না। আমরা আমাদের ভাই বোনদের জন্য সমব্যথী। ওখানে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সমন্বয়ক তানভীর মন্ডল বলেন, আমাদের ক্যাম্পাস থেকে বিভিন্নভাবে ভাগ হয়ে নানা উপায়ে ত্রাণ সংগ্রহ করছে শিক্ষার্থীরা। কোনো কোনো বিভাগ অনলাইনে মোবাইল ব্যাংকিং, কেউ কেউ আবার সারাদিন মাঠে থেকে ত্রাণ সংগ্রহ করে যাচ্ছে। আমাদের জানামতে প্রায় ৫০ টিরও বেশী সংগঠন ত্রাণ সংগ্রহ করছে। আমাদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চাচ্ছি সবাইকে একত্রিত করে একটি বিশাল এমাউন্টের অর্থ কালেক্ট করে একসাথে আগানোর। ফলে আমাদের সবারই যে উদেশ্য সেটি সফল হবে আশাকরি এবং বন্যার্তদের জন্য ভালোকিছু করতে পারবো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিদ হাসান মুকুট বলেন, আমরা মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমাদের একদিনের বেতনের টাকা বন্যার্ত মানুষের সহায়তার জন্য দিব। আগামী মাসের বেতনের টাকা ছাড় হলেই আমাদের সমিতির ফান্ডে টাকা টা জমা করবো। এরপর ফান্ডের একটা চেক প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিল বরাবর জমা দিয়ে আসবো। সবমিলিয়ে আনুমানিক ৭/৮ লক্ষ টাকা হবে। আশাকরি আমাদের সাহায্যটা তাদের উদ্ধারকাজে ও পুনর্বাসনে অবদান রাখবে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. মামুনুর রহমান বলেন, আমরা শিক্ষক সমিতির সকল শিক্ষকের একদিনের বেতন বন্যার্তদের জন্য দান করবো। ব্যাংক কার্যক্রম চালুর প্রথম কার্যদিবসেই আশাকরি আমরা আমাদের অর্থ প্রধান উপদেষ্টা তহবিলে পাঠাতে পারবো।