অরুণ-বরুণের গলায় ‘মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে’, ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পারি দেব রে’। শহরের পথে পথে হৃদয়স্পর্শি এমন সব কালজয়ি গান গেয়ে বন্যার্তদের জন্য টাকা তুলছেন একদল তরুণ। মানুষকে করছেন উজ্জীবিত। অরুণ-বরুণ স্থানীয় ‘স্বরলিপি শিল্পী গোষ্ঠী’র সদস্য।
গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে গুরুদাসপুরের বিভিন্ন সড়কে ঘুড়ে গান গেয়ে গেয়ে শুরু হয় তাদের এই ত্রাণ সংগ্রহের কার্যক্রম। অরুণ-বরুণের সাথে একদল তরুণের কেউ-ই পেশাদার শিল্পী নন। তারা শখের বসে গান চর্চার পাশাপাশি গুরুদাসপুর ও আশপাশের নানা অনুষ্ঠানে গান গেয়ে থাকেন।
গুরুদাসপুর উপজেলার স্বরলিপি শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম সহায়তা সংগ্রহের দলনেতার দায়িত্ব পালন করছেন। মূলত দেশের ১২ জেলায় বন্যায় ৫০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব জেলার অনেক মানুষ খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে ভীষণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। বন্যাদুর্গত এসব মানুষকে সহায়তা করার জন্য পথে পথে গান গেয়ে টাকা তুলছেন গুরুদাসপুরের এই কণ্ঠশিল্পীরা। স্বরলিপি শিল্পী গোষ্ঠী ছাড়াও এ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছে লালন পরিষদ খুবজীপুর, নজরুল প্রগতি সংঘ, গুরুদাসপুর যুব ক্রীড়া একাডেমির মো. মিজানুর রহমান, বাউলশিল্পী ঈমান আলী, সাগর সূত্রধর, গোলাম মোস্তফা, শরিফুল ইসলাম, বরুণ দাস প্রমুখ।
সহায়তা সংগ্রহ কার্যক্রমের আরেক উদ্যোক্তা মিজানুর রহমান জানান, বানভাসি মানুষের জন্য নানাভাবে সহায়তা সংগ্রহ চলছে। সাংস্কৃতিক মানুষ হিসেবে তাঁরাও তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এ জন্য উপজেলার সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা বৈঠক করে পথে প্রান্তর, হাটবাজারের জনগুরুত্বপূর্ণ জায়গায় গান গেয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করে তহবিল সংগ্রহ করছেন।
স্বরলিপি শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম জানান, ভূপেন হাজারিকার কালজয়ী গান ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’, ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পারি দেব রে’ এমন সব মানবিক ও আশাজাগানিয়া গান গেয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করে যাচ্ছেন তারা। শুক্রবার দুই জায়গায় গানের আসর বসিয়ে বেশ কিছু টাকাও সংগ্রহ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে উপজেলার নানা জায়গায় এ কার্যক্রম চালাবেন তাঁরা। গান গেয়ে সংগ্রহ করা টাকা উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারি ত্রাণ তহবিলে জমা দেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা আক্তার জানান, বন্যার্তদের জন্য শিল্পীদের পথে পথে গান গেয়ে সহায়তা সংগ্রহের এমন আয়োজন তাকে মুগ্ধ করেছে। দেশের নানা সংকটে শিল্পীরা পাশে থেকেছেন, বানভাসি মানুষের এ বিপর্যয়ে তাঁদের কার্যক্রম সব মানুষকে সম্পৃক্ত করবে। তাঁদের আয়োজন বন্যার্ত মানুষের জন্য কিছুটা হলেও সহায়ক হবে।