
তালা ঝুলছে সেচ প্রকল্পের ঘরে। একারণে সেচ পাম্প চালু করা যাচ্ছেনা। এভাবে টানা ২১ দিন সেচ পাম্প বন্ধ থাকায় সেচ নির্ভর ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কয়েক শ কৃষক। বীজতলা প্রস্তুত করতে না পারায় শঙ্কা দেখা দিয়েছে রোপা আমন চাষ নিয়েও।
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের ‘হালকা সেচ পাম্প’ প্রকল্পের আওতায় থাকা প্রায় ৬০০ বিঘাকৃষি জমিতে এমন সেচ সংকট চলছে। মূলতবিঘায় ৬ থেকে ৮শ টাকা সেচ খরচ বাড়ানোর বিষয় নিয়ে নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌলীর সাথে সেচ কমিটি এবং ক্ষুদ্র কৃষকদের দ্বন্দ্ব চলছে। ওই দ্বন্দ্বের জেরে অধিনস্ত কর্মচারীর মাধ্যমে সেচ পাম্পের ঘরে তালা ঝুলিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম।
ফসলের জমিতে সেচ না দেওয়ায় মাটি ফেটে চৌচির
সেচ প্রকল্পের সভাপতি আফাজ উদ্দিন বলেন, ১৯৯২ সাল থেকে এই সেচ প্রকল্পটি পরিচালনা করছে গ্রামের স্বনির্ভর কৃষক সমিতি। তবে এটি দেখভাল করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সম্প্রতি সেচ প্রকল্পের অবকাঠামোগত উন্নয়নের দোহাই দিয়ে চলতি মওসুমে বিঘায় ৬ থেকে ৮শ টাকা সেচ খরচ বাড়ানোর প্রস্তাব দেন নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম। অতিরিক্ত সেচ খরচের একটা অংশ ওই কর্মকর্তার নিজের জন্য দাবি করেন।
তিনি বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলীর দেওয়া সেচ বাড়ানো এবং উৎকোচ দেওয়ার প্রস্তাবটি প্রত্যাখান করে সেচ কমিটি। মূলত তখন থেকেই কৃষকদের সাথে নির্বাহী প্রকৌশলীর দ্বন্দ্ব শুরু হয়। একপর্যায়ে চলতি মাসের ৭ জুলাই অফিসের এসও রোজিনা আক্তারের মাধ্যমে সেচপাম্পের ঘরে তালা ঝুলানো হয়। মূলত তারপর থেকেই পানি সংকটে পড়েছেন এই প্রকল্পের ওপর নির্ভরশীল কৃষকেরা।
সেচ প্রকল্প সূত্রে জানাগেছে, নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রথম ‘বাঁশবাড়িয়া সেচ প্রকল্প’টি চালু করে ১৬৪-৬৫ সালে। সেসময় সেচ নির্ভর প্রায় ২ হাজার ৩০০ একর ফসলি জমি এই প্রকল্পের আওতায় ছিল। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে কৃষকদের সেচ প্রকল্পের অংশীদায়িত্ব দিয়ে গ্রামের ‘স্বনির্ভর কৃষক সমিতি’কে প্রকল্পটি হস্তান্তর করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সেই থেকে কৃষকদের ওই সমিতিই সেচ প্রকল্পটি পরিচালনা করছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, সেচ খরচ বৃদ্ধির মাধ্যমে ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নিয়ম ভেঙ্গে আগের কমিটি বাতিল করে সেচ প্রকল্প পরিচালনার জন্য নতুন একটি এ্যডহক কমিটি গঠন করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী। এ্যডহক কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিষয়টি উচ্চ আদালতের নজরে আনে ‘স্বনির্ভর কৃষক সমিতি’।
আদালত পূর্বের কমিটি বহাল রেখে সেচ স্বচল রাখার আদেশ দেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে রিট পিটিশন দায়ের করেন নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম চৌধুরী। কিন্তু আফিল বিভাগ পূর্বের কমিটিই বহাল রেখে সেচ কার্যক্রম চালানোর আদেশ দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কৃষকদের সাথে দ্বন্দ্বে জড়ান এই কর্মকর্তা।
সেচ প্রকল্পের আওতায় জমি থাকা রেজাউল করিম, সাইদুর রহমান, আসাদুজ্জামানসহ অন্তত বিশজন কৃষক অভিযোগ করে বলেন, সবশেষ তারা বিঘায় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা মূল্যে জমিতে সেচ দিয়েছেন।
কিন্তু বর্তমানে সেই খরচ বাড়িয়ে ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেন। এমন চড়ামূল্যে সেচ দিয়ে আবাদ করা কৃষকদের জন্য প্রায় অসম্ভব। তাই প্রস্তাবটি কৃষকদের পক্ষ থেকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
কৃষকরা জানান, তারা সেচ খরচ বাড়ানোর মাধ্যমে নির্বাহী প্রকৌশলীকে ঘুষ না দেওয়ায় কৃষকদের সেচ পাম্পের ঘরে তালা ঝুলিয়েছেন। মওসুম পেড়িয়ে গেলেও পানি না পাওয়ায় প্রায় ৬০০ বিঘায় রোপা আমন চাষ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তারা দ্রুত সেচপাম্পটি চালু এবং নির্বাহী প্রকৌশলীর বিচার দাবি করেন।
সেচ প্রকল্পের সভাপতি আফাজ উদ্দিন বলেন, টানা ২১ দিন পানি না পাওয়ায় ফসলি জমি ফেটে চৌঁচির হয়ে গেছে। দুই এক দিনের মধ্যে সেচ পাম্পটি চালু করা না গেলে এসব জমিতে রোপা আমন চাষাবাদ করা যাবে না।
বাগাতিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. ভবসিন্ধু রায় বলেন, সেচ প্রকল্পের ঘরে তালা দিয়ে সেচ বন্ধ রাখা দুঃখজনক। সময় মতো পানি না পেলে এই বিলে রোপা আমন চাষ করা সম্ভব হবে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাইমেনা শারমীন বলেন, বিষয়টি তিনি জানতেন না। তবে খোঁজ নিয়ে দ্রুত সেচ সুবিধা চালুর ব্যবস্থা করা হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম চৌধুরী অভিযোগ অস্বীকার করে বেলেন, সেম্পটির নিরাপত্তার স্বার্থে তিনি তালা দিয়েছেন। দুই এক দিনের মধ্যে তালা ঘুলে সেচের ব্যবস্থা করবেন তিনি।