
দিন শেষে মেলে স্বল্প মজুরী
বেলচা হাতে, মাথায় পাথর বোঝাই ডালী, ফেলা হচ্ছে এক স্তুপ থেকে আরেক স্তুপে। ঘুম থেকে উঠে এভাবেই চলছে দিনের দশ ঘন্টা। সূর্যের প্রখর তাপদাহে শ্রমিকের নিরবিচ্ছিন্ন এ শ্রমের ৮৫ টাকা মুজুরী মুহুর্তেই ম্লান করে দিচ্ছে কোন রকমে বেঁচে থাকার সাধটুকু।
যুগ যুগ ধরে মুজুরী বৈষম্যের শিকার শ্রমিকরা এভাবেই প্রতিদিন শুরু করে তাদের কর্মযজ্ঞ। পৃথিবী জুড়ে মে দিবসে শ্রমিকের অধিকার আদায়ে কর্ম বিরতি থাকলেও জীবিকার তাগিদে ছুটে চলা এসব শ্রমিকরা জানে না মে দিবস কি...? মে দিবস উপলক্ষে মিছিল, মানবন্ধন-সমাবেশ আরো কত আয়োজন চলছে শ্রমিকদের। কিন্তু সেসব আয়োজনের কোন গল্পই পৌঁছায় না এসব শ্রমকিদের কানে। ‘১লা মে’ গুরুদাসপুর বাসষ্ট্রান্ডে পাথর বহনের কাজ করতে দেখা গেল এমনি কয়েকজন দিন মুজুর শ্রমিককে।
কাছে গিয়ে জানাগেল, গুরুদাসপুরের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আনোয়ার এন্টার প্রাইজ এর প্রকল্পে কাজ করছেন এসব শ্রমিক। শ্রমিকরা জানান, আজ (সোমবার) মে দিবস হলেও তাদের ছুটি নেই। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠনের কাজ দ্রুত শেষ করতেই ছুটির দিনেও তাদের কাজ করতে হচ্ছে। ওই প্রকল্পের এক শ্রমিক বলেন, মে দিবসে তাদের ছুটি থাকার কথা ছিল। কিন্তু উপজেলা শ্রমিক ইউনিয়ন হতে অনুমতি নিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তাদের কাজ করতে বলেছেন।
গুরুদাসপুর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জয়েনউদ্দিন মিস্ত্রী বলেন, মে দিবসে সকল শ্রমিকের ছুটি রয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধীকারী আনোয়ার হোসেন এ দিন কাজ করার জন্য অনুমতি চাওয়ায় তাকে কাজ করতে বলা হয়েছে।
কর্মরত শ্রমিক আরিফা, আকলিমা, রওশন ও মিজানুর রহমান বলেন, এখানে কাজ করছেন ৩জন মহিলা আর ৫জন পুরুষ শ্রমিক। পুরুষ শ্রমিকদের শ্রেণি ভিত্তিকভাবে ২শ টাকা থেকে ৫শ টাকা হলেও নারী শ্রমিকদের মুজুরী ৮৫ টাকা।
ষাটর্ধো শ্রমিক আফেজান বেগম বলেন, ছুটি বুঝিনা। পেটের দায়ে কাজ করতে এসেছি। সারাদিন শ্রম দিয়ে মুজুরী পাই ৮৫ টাকা। ওই টাকায় পেটের খোরাক জোগানোই কঠিন। তবুও বেঁচে থাকার জন্য কাজ করতে হচ্ছে।
মেসার্স আনোয়ার এন্টার প্রাইজের স্বত্বাধীকারি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতির অনুমতি নিয়েই শ্রমিকদের কাজ করতে বলা হয়েছে। তাছাড়া শ্রমিকরাও কাজ করতে ইচ্ছুক ছিল।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, কোনভাবেই মে দিবসে কাজ করার বিধান নেই। এব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেওয়া হবে।