নওগাঁর বদলগাছীতে এবার ছাগল বেপারিদের বিরুদ্ধে হামলা, ভাংচুর ও টোল আদায়ের টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। ছাগলের দাম বেশি বলায় গোলাপ নামের এক ক্রেতাকে মারপিট করে একাধিক বেপারী।
বিষয়টি নিয়ে আপোষ মিমাংসায় বসলে তারা হাট ইজারাদারসহ অন্যদের মারধর করে টোল আদায়ের টাকা ছিনতাই করে বলে ভূক্তভোগীদের অভিযোগ।
এঘটনায় হাটের ইজারাদার ফেরদৌস হোসেন বাদী হয়ে রবিবার ৭জুলাই কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার ৫ জুলাই দিনব্যাপী উপজেলার কোলা ইউনিয়নের কোলাহাটে।
এদিকে, হামলার ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ রবিবার ৭ জুলাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ভাইরাল হলে বিষয়টির বিচার দাবি করেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় ও অভিযোগ সুত্রে জানাযায়, উপজেলার কোলা ইউনিয়নের কোলাহাটে শুক্রবার ৫ই জুলাই বিকেলে পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার গনিপুর এলাকার গোলাপ নামের এক ক্রেতার সাথে ছাগল কেনা নিয়ে বিরোধ বাঁধে ছাগল ব্যবসায়ীর। তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে ওই ক্রেতাকে মারপিট করেন স্থানীয় ছাগল ব্যবসায়ী হারুন ও তার ছেলে সিজার।
ক্রেতাকে মারধরের ঘটনায় রাত সাড়ে ৭টার দিকে হাটের অফিস কক্ষে বিষয়টি আপোষ মিমাংসার জন্য দুই পক্ষকে নিয়ে সালিশ বৈঠকে বসেন স্থানীয় মাতব্বরসহ হাট-ইজারাদার। কিন্তু বৈঠক চলাকালে হঠাৎ ছাগলব্যবসায়ীরা উত্তেজিত হয়ে বিশৃঙ্খল সৃষ্টি করে।
এসময় কোলা গ্রামের আলমগীর আল ফারুক (৪০), আব্দুল কুদ্দুস (৪২), আজহার আলী (৫০), নন্দাহার গ্রামের রিংকু (৩৫), হারুন, সিজার হোসেন (২২), সুমন (৩০), মিঠুন (৪৫) , রাসেল হোসেন (৪০), শহিদুল ইসলাম (৫০), রায়হান হোসেন (৩৫) , সেতু (২২), ফিরোজ হোসেন (৩৫) , কয়াভবানীপুর গ্রামের ভোদন হোসেন (৫০)সহ আরও অজ্ঞাত নামা
কয়েকজন দলবদ্ধ হয়ে রড, লাঠি, শাবল ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হাটের অফিসে অতর্কিত হামলা ও ভাংচুর চালায়। হামলায় কোলা হাটের ইজারাদার ফেরদৌস হোসেন, আদায়কারী হোসেন আলী ও সাখাওয়াতকে বেধড়ক মারধর করে।
এছাড়া হাট থেকে টোল আদায়ের ৭লক্ষ ৫৫হাজার ৬২৫টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায় তারা। সেই সাথে তাদের হামলার কারণে হাটের অফিসের দরজা, চেয়ার সহ প্রায় ৮০হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি করে। এমনটাই জানান ভূক্তভোগী ও স্থানীয়রা।
ভুক্তভোগী ছাগল ক্রেতা গোলাপ বলেন, আমি কোলা হাটে গিয়ে একটি ছাগলের দাম ১৬ হাজার টাকা বলেছিলাম। কিন্তু বেপারিরা ওই ছাগলের দাম করেছিল ১৫হাজার টাকা, সেটা আমি জানতাম না।
সেই ছাগলের দাম বেপারির চাইতে বেশি বলেছি এটাই আমার অপরাধ। তার জন্য আমাকে বেপারিরা বেধড়ক মারপিট করেছে। তারপর বদলগাছী স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরি।
এঘটনায় হাট ইজারদার ফেরদৌস হোসেন বলেন, ক্রেতাকে মারপিটের ঘটনায় দুই পক্ষকে নিয়ে বিষয়টি আপোষ মিমাংসার জন্য ওই দিন সন্ধ্যায় বসা হয়। কিন্তু একটি প্রভাবশালী মহলের ইশারায় হঠাৎ আজাহারের নেতৃত্বে নন্দাহারের হারুন, সিজার, রাসেল, সুমন, মুকুল ও কয়েকজন ছাগল বেপারিসহ ২৫-৩০ জন লোক দলবদ্ধ হয়ে আমার হাটের অফিসে অর্তকিত হামলা চালায়।
হামলা করে আমাকে এবং হাটের শেয়ারদার রফিকুল ও তার ছেলে রনিসহ বেশ কিছু লোকজনকে মারপিট করে। এবং অফিস কক্ষ ভাংচুর করে টোল আদায়ের ব্যাগে থাকা সমস্ত টাকা তারা লুট করে নিয়ে যায়। এঘটনায় সুষ্ঠ বিচারের আশায় কয়েকজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছি।
এদিকে একাধিক বিবাদীর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাদের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
কোলাবাজার বণিক-সমিতির সাধারণ সম্পাদক লিটন বলেন, সেদিনের অফিসে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনাটি শুনেছি। আমাদের কেউ অভিযোগ দিলে বিষয়টি নিরসনের চেষ্টা করবো। আর ভূক্তভোগীরা আইনের আশ্রয় নিলে যারা দোষী তাদের ব্যবস্থা প্রশাসন নিবেন। তবে এ ঘটনায় সাধারণ কোনো ব্যাক্তি যেন ঝামেলায় না পড়েন এমনটাই আমি আশা করছি।
এ ব্যপারে কোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কোলা হাটের সভাপতি শাহীনুর ইসলাম স্বপন বলেন, হাটের এই ছাগল বেপারিরা একটা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। তাদের ছাড়া কেউ ছাগল কিনতে পারবেনা।
সেদিন অন্যায়ভাবে এক কৃষক ক্রেতাকে তারা মারপিট করেছে। এই বিষয়টি নিয়ে আপোষে বসলে তারা আবারও হামলা ও মারপিট করে। ঘটনার বিষয়ে সুষ্ঠ ব্যবস্থা হওয়া উচিৎ বলেও মনে করেন তিনি।
ঘটনা জানতে চাইলে আব্দুল কুদ্দুস মোবাইলে বলেন, আমি এই ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানিনা। এবং আমি সেখানে ছিলাম না। কিন্তু আমাকে হুকুমের আসামি বানানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। আমার আরেক ভাতিজাকেও আসামি করা হয়েছে। যদিও সে হাটে ছিল। কিন্তু ঘটনাস্থলে ছিলনা।
এ ব্যপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আব্দুল আলিম মোবাইলে জানান, কোলা হাটের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে।
থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুবুর রহমান মোবাইলে বলেন, এ ব্যাপারে থানায় একটি মামলা হয়েছে। আসামিরা আত্মগোপনে থাকায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায় নি। তবে অভিযান অব্যাহত আছে।