
গভীরনলকুপ
*ভূগর্ভস্থ্য পানির স্তর নিচে নামছে
* তিন উপায়ে সমাধানের উদ্যোগ
* ১৮ সোলার পিএসএফ চালু
* ৫২ টির টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন
ভূগর্ভস্থ্য পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ঝালকাঠি শহর ও গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ হস্ত চালিত নলকূপে পানি পাওয়া যাচ্ছেনা। কোথাও নতুন নলকূপে পানি উঠলেও লবনাক্ততার কারণে তা খাবার অনুপযোগী। বিকল্প উপায়ে খাবার পানি সমস্যা দূর করতে সরকার সৌর শক্তি চালিত পিএসএফ (পন্ডস স্যান্ড ফিল্টার) প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছে। যদিও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ বলছে এ অবস্থায় মটর চালিত গভীর নলকূপের কোন বিকল্প নেই।
মাটি থেকে ১৮ ফিট নীচে থাকার কথা থাকলেও পানির স্তর ২২ থেকে ৩১ ফুট নেমে গেছে। এতে সুপেয় পানি সংকটে পরেছে হাজার হাজার মানুষ। ইতিমধ্যেই জেলার ২টি পৌরসভায় ৮০ % এবং ইউনিয়ন সমূহে ৩৫% নলকূপ অকেজ হয়ে পরেছে। ঝালকাঠি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানাযায়, পানির স্তর নেমে যাওয়ায় সরকার ইতিমধ্যেই জেলায় ৩ টি উপায়ে পানি সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে। এগুলো হচ্ছে প্রতিটি ৮৬ হাজার টাকা ব্যয়ে হস্ত চালিত গভীর নলকূপ স্থাপন, ৫০ হাজার টাকায় রেইন ওয়াটার হারভেষ্টিং এবং সাড়ে ৭ লাখ টাকায় সোলার পিএসএফ পদ্ধতি। উল্লেখিত হস্ত চালিত গভীর নলকূপ স্তর সমস্যার কারণে বর্তমান পরিস্থিতিতে কার্যকর নয়। তাই এর সাথে সাবমারসেবল মটর যুক্ত করতে পারলে নলকূপ গুলো অচল হবার আশংকামুক্ত হবে। এ ক্ষেত্রে হারভেষ্টিং পদ্ধতি খরচ কম হলেও কার্যকর।
কিন্তু তা বৃষ্টির পানির উপর নির্ভর করতে হবে। তৃতীয় পদ্ধতি পিএসএফ ব্যায় বহুল হওয়ায় বরাদ্দ জটিলতায় বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। এ পদ্ধতির মাধ্যমে কমপক্ষে ১০ টি পরিবার জীবানু মুক্ত সুপেয় পানি পান করতে পারবে।
সূত্র জানায়, সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় সাড়ে ৮ হাজার নলকূপের জন্য ৮শ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। এরমধ্যে গত বছর ৭৮০ টি এবং রাজস্ব খাতে আরো ১৫০টি নলকূপ ঝালকাঠি জেলায় বরাদ্দ দেয়া হয়। চলতি বছর একই প্রকল্পে জেলায় মোট নলকূপ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩৮৪ টি । জানাগেছে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের নলকূপ বসানোর কাজ সমাপ্ত হলেও পানির স্তর নিচে নামায় সে গুলো ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পরার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই চলতি বছরের বরাদ্দ নলকূপ হাউজিং করে সাবমারসেবল মটর করলে স্তর নিচে নামলেও পানি পাওয়া যাবে। এ জন্য প্রকল্প শুরুর আগেই কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ ছাড়াও স্তর নেমে যাবার কারণে জেলার সুপেয় খাবার পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সরকারের আরো একটি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। এটি হলো উপকূলীয় জেলা সমূহে বৃষ্টির পানি সংরক্ষনের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা। ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে জেলার ৩টি উপজেলায় ৫ হাজার ৪শ টি প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। এর মাধ্যমে ৬ মাসে ৩ হাজার লিটারের ট্যাংকিতে পানি সংরক্ষন করে বাকি ৬ মাস সুপেয় পানি পান করা যাবে। পাশাপাশি ১৮ টি সোলার পিএসএফ স্থাপন করে চালু করা হয়েছে। আরো ৫২ টির টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের ঝালকাঠি সদর উপজেলার উপসহকারি প্রকৌশলী অমিত কর্মকার জানান, উপজেলায় ৫ হাজার নলকূপ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে স্থাপন করা হয়েছে। এরমধ্যে গত ৫ বছরে ১৩শ টি নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু পানির স্তর নিচে নামার করণে এসব নলকূপ হুমকীর মুখে পরেছে। কিছু দিন আগে পোনাবালিয়া আশ্রয়ন প্রকল্পে স্থাপন করা ৪টি নলকূপে পানি পাওয়া যায়নি।
জেলায় পানির স্তর নিচে নেমে নলকূপ অকেজ হবার বিষয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার এরশাদুজ্জামান মৃদুল বলেন, পানির স্থর নিচে নামায় হস্ত চালিত নলকূপে পানি উঠছেনা। এতে ক্রমান্বয়ে সুপেয় খাবার পানির সংকট প্রকট আকার ধারন করছে। তাই হস্ত চালিত গভীর নলকূপের সাথে সাবমারসেবল মটর স্থাপনের কোন বিকল্প নেই। এর মাধ্যমে ৭০ ফুট গভীরতা থেকে পানি উঠানো সম্ভব। তাই ভবিষ্যতে নলকূপের সাথে সাবমারসেবল মটর স্থাপনের মৌখিক প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।