
-ফাইল ছবি
ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কাতিহার হাটে শনিবার(১৫জুন) ইউএনও’কে বার’বার মৌখিক অভিযোগ করেও ঠেকানো গেল না অতিরিক্ত খাজনা আদায়।
সরকারী নির্ধারিত দর গরু ২৩০ টাকা,ছাগল ১৮০ টাকা খাজনার বদলে ইতিপূর্বে গরু ৫০০ টাকা,ছাগল ১৮০ টাকা হারে খাজনা আদায় করা হলেও। কোরবানী ঈদের শেষ হাট উপলক্ষে গরুতে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৫৫০ টাকা,ছাগলে আরো ২০ টাকা বাড়িয়ে ২০০ টাকা হারে খাজনা আদায় করা হয়েছে।
এ নিয়ে সাধারণ মানুষসহ এ প্রতিবেদক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউ্ওনও) রকিবুল হাসানের দৃষ্টিগোচর করলেও দীনব্যাপী এ হাটে প্রশাসনের কোন অভিযান হয়নি। বিনা বাধায় তাঁরা হাটের কাযর্ক্রম সমাপ্তি করে। হাজার হাজার টাকা অবৈধভাবে আদায় করেছে হাট ইজারাদার।
ইউএনও রকিবুল হাসান বলেন, বাচোর ইউনিয়ন ভুমি কর্মকর্তা রহমত আলীকে পাঠানো হয়েছিল। সে দাড়িয়ে থেকে সরকারী দরে খাজনার রশিদ গরু ছাগল ক্রেতাদের দিয়েছে। তবে ইউনিয়ন ভুমি কর্মকর্তা রহমত আলী মুঠোফোনে বলেন, তিনি কাতিহার হাট গিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু তিনি হাটের ভেতরে প্রবেশ করেননি। তার শরীরে জ্বর থাকায় কিছু সময় থেকেই তিনি চলে এসেছেন। কোর রশিদ তিনি দাড়িয়ে থেকে ক্রেতাদের দেননি।
শনিবার (১৫জুন) কাতিহার হাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,কাতিহার উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গরু’র হাট বসানো হয়েছে। প্রচুর গরু’র আমদানির পাশাপাশি মানুষেরও ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে।
সেখানে হাটের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, বড় সাইজের গরু থেকে মাঝারি সাইজের গরু’র প্রতি মানুষের নজর বেশি। বড় এবং ছোট সাইজের চেয়ে মাঝারি সাইজের গরু বিক্রি হয়েছে বেশি।
এদিকে পীরগঞ্জ উপজেলা থেকে গরু কিনতে আসা ইদ্রীস আলী বলেন, গরু কিনলাম ৭০ হাজার টাকায়। তাতে খাজনা নিলো ৫৫০ টাকা তিনি বলেন, কোরবানীর আগে এ হাটে খাজনা নিতো গরু প্রতি ৫০০ টাকা কিন্তু কোরবানী উপলক্ষে নাকি ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৫৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি এটাকে অরাজকতা বলে দাবী করেছেন। একইভাবে গোগর এলাকার সামাদ আলী বলেন, অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের বিষয়টি সকাল বেলাই উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছিল।
কিন্তু কোন দৃশ্যমান ব্যবস্থা হয়নি। এক দেড়-ঘন্টা ঘুরে ফিরে এক লাখ টাকায় গরু কিনে ৫৫০ টাকা খাজনা দিয়ে বাড়ী ফিরতে হচ্ছে তাদের। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, কোরবানী ইদকে কেন্দ্র করে পশুর হাটে এমন অরাজকতা হলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থায় নিচ্ছে না। এটি হাতাশাজনক।
একইভাবে ফরমান আলী ও আফসার আলী দুজনে দুটি খাসি ছাগল কিনেছেন। তারা বলেন, দুটি ছাগলে ৪০০ টাকা খাজনা নিলো হাট কর্তৃপক্ষ। আগে এ হাটে খাসির খাজনা নিতো ১৮০ টাকা করে । কিন্তু কোরবানী হাট উপলক্ষে নাকি ২০ টাকা বাড়িয়ে ২০০ টাকা করে খাজনা নেওয়া হচ্ছে বলে তারা জেনেছেন।
হাটের একাধিক পাইকারী ক্রেতারা বলেন, ৫০০ টাকা গরু প্রতি ১৮০ টাকা ছাগল প্রতি নেওয়ার অপরাধে এ হাটে একবার ১ লাখ টাকা অর্থদন্ড দেওয়া হয়। তারপরেও দর না কমানোয় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে গত ৮জুন মোস্তফা কামাল নামে এক খাজনা আদায়কারীকে ৭দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আর্নিকা আক্তার। ক্রেতা বিক্রেতারা বলছেন, প্রশাসন এত কিছু করেও কেন ইজারাদারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এদের খুটির জোর কথায় জানতে চাই? সাধারণ ক্রেতা বিক্রেতারা।
হাট সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, শনিবার কাতিহার হাটে কোরবানী উপলেক্ষে গরু আনুমানিক দেড় হাজার,ছাগল এক হাজারটি কেনাবেচা হয়েছে। তাতে গরু ক্রেতাদের বেশি টাকা দিতে হয়েছে প্রায় ৫ লাখ, ছাগলে প্রায় ১ লাখ টাকা। সে হিসাবে হাট ব্যবসায়ীরা কোরবানী উপলক্ষে অবৈধভাবে খাজনা আদায় করেছে প্রায় ৬লাখ টাকা।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য হাট ইজারাদার সারোয়ার হোসেন লিয়নকে হাটে না পেয়ে তার মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি তাতে সাড়া দেননি। তবে হাটের একজন অংশিদার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, সাংবাদিক ভাই প্রশাসনে ফোন দিয়ে লাভ নেই। কারণ সব কিছু ব্যবস্থা করেই কোরবানী ইদ উপলক্ষে খাজনা বাড়ানো হয়েছে।