
‘মা তুমি আর কেঁদো না, আমি মুক্ত হয়েছি। এখন আর কোনো সমস্য নেই। আমি এখন লিবিয়ান সেনাবাহিনীর হেফাজতে আছি।’ অঝরে কাঁদতে কাঁদতে ভিডিও কলে মা দুলি বেগমকে এভবেই মুক্তির কথা জানাচ্ছিলেন গুরুদাসপুরের প্রবাসী সোহান প্রামাণিক।
ছেলের মুক্তির খবরে কাঁদছিলেন সোহানের মা দুলি বেগমও। সোহান গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের বিয়াঘাট বাবলাতলা গ্রামের শাহজাহান প্রামাণিকের ছেলে। তার সাথে একই গ্রামের আরো তিন যুবক মো. সাগর হোসেন (২৪), নাজিম আলী (৩২) ও মো. বিদ্যুৎ হোসেন (২৬) অপহরণের শিকার হয়েছিলেন।
সূত্রমতে, টানা ১০ দিন জিম্মি থাকার পর রোববার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টার দিকে লিবিয়ার বেনগাজি শহর থেকে দেশটির সেনাবাহিনী ওই চার যুবককে উদ্ধার করে। উদ্ধারের পর পরই সেনাবাহিনীর হেফাজতে থেকে দুপুর ১টার দিকে পরিবারের কাছে নিজেদের মুক্তির খবর দেন যুবকেরা।
জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তারা পরিবারের কাছে বলেন, লিবিয়ার বেনগাজি এলাকাটি খলিফা হাফতারের নিয়ন্ত্রণে। খলিফা হাফতার অন্যতম প্রভাবশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির কমান্ডার। বেনগাজিসহ লিবিয়ার পূর্বাঞ্চল তার নিয়ন্ত্রণে। অপহরণের পর হাফতারের নিয়ন্ত্রিত এলাকাতেই তাদের আটকে রাখা হয়েছিল। সেখানে মুক্তিপণের জন্য ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তারা।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে সোহানের পিতা শাহজাহান প্রামাণিক মুক্তপ্রভাতকে বলেন, সন্তানকে বিদেশ পাঠাতে চড়া সুদে ঋণ নিয়েছেন। সেই ঋণ এখনো শোধ হয়নি। এরই মধ্যে রোববার খবর আসে লিবিয়ায় জিম্মি হয়েছেন কলিজার টুকরা সন্তান। মুক্তিপণ আদায়ে পাঠানো হয় নির্যাতনের ভিডিও। সন্তানের এমন করুণ পরিণতি দেখে বিলাপ করছিলেন তারা। সন্তানের জিম্মিদশার খবর শনিবার সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার পর রোববার তার সন্তানসহ আরো তিনজন উদ্ধার হয়েছেন। এখন তারা চিন্তামুক্ত হয়েছেন। কেটেছে উৎকণ্ঠা।
নির্যাতনের শিকার প্রবাসীদের পরিবার সূত্রে জানাগেছে, বিয়াঘাট বাবতলা গ্রামের শাজাহান প্রামাণিকের ছেলে মো. সোহান প্রামাণিক (২৫), মো. তয়জাল শেখের ছেলে মো. সাগর হোসেন (২৪), মৃত শুকুর আলীর ছেলে নাজিম আলী (৩১) ও হামলাইকোল গ্রামের এনামুল হকের ছেলে মো. বিদ্যুৎ হোসেন (২৭) ভাগ্য বদলাতে লিবিয়ায় যান দুই বছর আগে। সেখানে তারা বিভিন্ন কাজে শ্রমিক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। প্রায় দশদিন আগে তারা অপহরণের শিকার হয়েছিলেন। এরপর চারজনের পরিবারের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন অপহরণকারীরা।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা সালমা আক্তার মুক্তপ্রভাতকে বলেন, লিবিয়ায় জিম্মি চার যুবককে উদ্ধারের জন্য শনিবার প্রবাসী কল্যাণ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তথ্য পাঠানো হয়। মূলত সেখানে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে দেশটির সেনাবাহিনী চার যুবককে উদ্ধার করেছে।