পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্টে যে মানুষের হাত, সেই মানুষই পারে পুনরায় এই পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে একটি বাসযোগ্য পৃথিবী তৈরি করতে।
আজ ৫ই জুন–বিশ্ব পরিবেশ দিবস। পরিবেশ নিয়ে জনসচেতনতার লক্ষ্যে প্রতি বছর এই দিনে পালিত হয় দিবসটি। বিশ্ব পরিবেশ দিবস-২০২৪ এর প্রতিপাদ্য "করবো ভূমি পুনরুদ্ধার,রুখবো মরুময়তা। অর্জন করতে হবে মোদের খরা সহনশীলতা।" অর্থাৎ আমরা যে অবিচার করে ভূমি নষ্ট করেছি সেই ভূমির স্বাস্থ্য ফেরাতে হবে।
পানি,মাটি,বায়ুসহ পৃথিবীর দূষণকে রোধ করার সময় এখনই।বনভূমির পরিমাণ কমে যাওয়া, নদী দূষণ, মেরু অঞ্চলের বরফ গলা, তাপমাত্রা বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে চিন্তিত গোটা মানব জাতি। পরিবেশ রক্ষায় আমরা এখনই সচেতন না হলে পরবর্তী প্রজন্মকে একটি সুন্দর বাসযোগ্য পৃথিবী দিয়ে যেতে পারব না আমরা!
আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবসে পরিবেশ নিয়ে কি ভাবছে তরুণেরা, চলুন জেনে নেয়া যাক।
–টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে পরিবেশ রক্ষার বিকল্প নেই
ভবিষ্যৎ পৃথিবী ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দিন দিন পরিবেশের ক্ষতি করছি এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার করছি। সময়ের কালাতিক্রমে পরিবেশের ক্রমাগত বিপর্যয়ের কারণে আজ আমাদের মাতৃসম পৃথিবী নরক যন্ত্রণায় ভুগছে।
পরিবেশের আজকের এই বিপর্যয় আমাদের সামনে হঠাৎ করে দৃশ্যমান হয়নি। এটি শত শত বছরের আমাদের সামষ্টিকভাবে পরিবেশ হত্যাযজ্ঞের ফসল। পরিবেশ সংরক্ষণ একটি অতীব তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়, যা আমাদের পৃথিবীর ভবিষ্যৎ ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
'বিশ্ব পরিবেশ দিবস' উপলক্ষে শুধু নয়, সর্বদা প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার প্রতি সচেতনতা তৈরির গুরুদায়িত্ব সবার আগে নিজেকেই পালন করে যেতে হবে বলে আমি মনে করি। টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে এবং প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে পরিবেশ রক্ষা করতেই হবে।
হাসিন ইন্তেসাফ অর্প,
সাধারণ সম্পাদক,
অভয়ারণ্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
–আজ থেকেই শুরু হোক পরিবেশ রক্ষার ব্রত
প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রেখে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণ যেন একাত্ম হয়ে পৃথিবীর বুকে টিকে থাকে এটি নিশ্চিত করা জরুরি সবার আগে। পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় কিংবা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পারস্পারিক নির্ভরতার যে এক শৃঙ্খলে আমরা আবদ্ধ তা আমরা মানুষরাই ভুলে যাই সবার প্রথমে।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৪ এর প্রতিপাদ্য, "করবো ভূমি পুনরুদ্ধার,রুখবো মরুময়তা।অর্জন করতে হবে মোদের খরা সহনশীলতা।"
অর্থাৎ ভূমির স্বাস্থ্য ফেরাতে হবে আমাদের। মাটির মরুময়তা রক্ষায় নদী নাব্যতা বজায় রাখা এবং বৃক্ষরোপনের বিকল্প কিছু নেই। পরিবেশ দিবস উপলক্ষেই কেবল নয়,বর্ষাকালসহ বছরের যে সময়ে বৃক্ষরোপন ফলপ্রসু হবে সে সময়গুলোতে বৃক্ষরোপন সম্পর্কে সচেতনতা এবং প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে।
প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো,যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা বন্ধ করা,বৃক্ষরোপনে অংশগ্রহণ করাসহ আজ থেকেই শুরু হোক সাধ্যমতো ব্যক্তিগত সচেতনতার চর্চা আর তা ছড়িয়ে পড়ুক পৃথিবীময়। ধরনীর সন্তান হয়ে অনেক অন্যায় এবং অবিচার করেছি আমরা এবার সময় ধরনীমাতাকে রক্ষা করার মধ্যে দিয়ে ঋণ শোধের সামান্য সুযোগকে কাজে লাগানোর।
রাফিয়া জাহান শুচি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
–পরিবেশের সুস্থতাই আমাদের অস্তিত্ব
আমরা আমাদের সাময়িক সুখ ও সমৃদ্ধির জন্য প্রতিনিয়ত পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে চলেছি। বন উজাড়, নদী ভরাট করছি। অসহনীয় মাত্রায় গ্রীন হাউজ গ্যাস উৎপন্ন করছি। ফলস্বরূপূ পরিবেশের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা প্রতিনিয়ত মাটিূ পানিূ বায়ু অস্বাভাবিক ভাবে দূষিত করছি। ফলে আমাদের পরিবেশ বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। আমরা প্রতিনিয়ত যে অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করছিূ তা জীব এবং মানব সভ্যতার জন্য হুমকি স্বরুপ। এরকম চলতে থাকলে পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেতে পারে। জীব ও মানব সভ্যতার অস্তিত্ব রক্ষার্থেূ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুন্দর ও বাসযোগ্য পৃথিবী উপহার দিতেূ আমাদের পরিবেশ সংরক্ষণে সচেষ্ট হওয়া উচিত। পরিবেশের ভারসাম্য এবং সুস্থতাই আমাদের অস্তিত্ব এবং অস্তিত্বের ভিত।
আরমান আলী
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
–তরুণসমাজের অবদানই পরিবেশ রক্ষার সোপান
আমাদের বর্তমান সভ্যতা এবং প্রযুক্তির উন্নতির সাথে তাল মিলিয়ে পরিবেশগত ভারসাম্য ঝুঁকির মুখে পরেছে। আমরা আমাদের এই পৃথিবীকে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আদৌ কি বাসযোগ্য করে রেখে যেতে পারছি? আমাদের উচিৎ সুন্দর এই পরিবেশের ভয়াবহ আর্তনাদ অন্তর দিয়ে অনুভব করা। পরিবেশ বাঁচলে তবেই আমরা প্রাণভরে শান্তিতে দিনযাপন করতে পারবো। সুন্দর ও সতেজ প্রকৃতিই আমাদের বেঁচে থাকার যাবতীয় শক্তির জোগানদাতা।
তরুণসমাজের কর্তব্য হবে এই সত্য নিজেদের মধ্যে ধারণ করে তা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া। বাংলাদেশের বর্তমান পরিবেশগত বিপর্যয় এবং এর সঠিক পরিচর্যার জন্য সর্বস্তরের মানু্ষরে মধ্যে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে কাজ করতে হবে।
কংক্রিটের পৃথিবীতে পরিবেশ দূষণ করে স্রোতে গা ভাসিয়ে নয় বরং আমাদের রক্ষাকর্তা প্রকৃতিকে সুরক্ষিত রাখাই আমাদের দায়িত্ব হওয়া উচিত।
তাহসীন তাবাসসুম বৃষ্টি
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়