
ভবন মালিকের খামখেয়ালিতে বিদ্যুৎ পৃষ্ট হয়ে সেই যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ
ছাদে উঠলেই মৃত্যু হবে জেনেও ছাদে উঠার সিড়ি পথ খোলা রেখেছিলেন ভবনটির মালিক শিক্ষক মতিউর রহমান। শুক্রবার (৩১ মে) সন্ধ্যায় সরেজমিনে গিয়ে সেখানে এই দৃশ্য দেখা যায়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ৩০ মে দুপুরের দিকে সেই ছাদে উঠতে গিয়ে বিদ্যুৎ পৃষ্ট হয়ে মর্মান্তিক ভাবে প্রাণ হারিয়েছেন আনিছুর (৪০) নামে এক যুবকের। ঘটনাটি ঘটেছে নওগাঁর
বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুর ইউপির গোয়ালভিটা গ্রামে। আর এঘটনায় ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী।
তাদের ধারণা বিল্ডিং মালিকের খামখেয়ালীপনায় এই মৃত্যু হয়েছে। নিহত আনিছুর রহমান গোয়ালভিটা গ্রামের প্যানাতা পাড়ার মোস্তফার ছেলে। সে পেশায় একজন ভ্যান চালক ও সবজি ব্যবসায়ী।
থানা পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ধান শুকনোর জায়গা না পেয়ে মতিউর রহমানের ভবনের উঠার পথ খোলা থাকায় আনিছুর ছাদে নিয়ে আসে। দুপুরের দিকে আনিছুরের স্ত্রী ডাক দিলে উঠে দাড়ানোর সময় শরীরের সাথে ১১কেভির বৈদ্যুৎতিক তার ঠেকা মাত্র আনিছুরের গায়ে আগুন ধরে যায়। উপস্থিত লোকজন আনিছুরকে উদ্ধার করে জয়পুরহাট আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে যাবার সময় রাস্তার মাঝে মৃত্যু হয় আনিছুরের। খবর পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে আসেন।
এদিকে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, যে ভবনে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে ভবনের ৩ফিট উপর দিয়ে বৈদ্যুতিক ১১কেভির তার গেছে। বিষয়টিন জানার পরেও কোন গুরুত্ব ছিলো না ভবন মালিক মতিউর রহমানের। একজনের মৃত্যুর পরও ছাদে উঠার পথটি খোলা অবস্থায় দেখা যায়। যে কোনো সময় আরও দূর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে স্থানীয়রা জানান।
অপরদিকে ওই ভবন মালিক মতিউর রহমানের ঘটনার পর থেকেই মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। তথ্য সংগ্রহকালে উপস্থিত রহিমা নামের এক বৃদ্ধা ও মঞ্জুল হোসেন বলেন, ১১কেভি বৈদ্যুতিক তার মতিউর রহমানের নির্মাণাধীন ভবনের উপর দিয়ে গেছে জানার পরেও বিল্ডিং টি অরক্ষিত অবস্থায় রাখে।
এই মৃত্যুর জন্য বিল্ডিং মালিক দায়ী। তারা আরও বলেন, বিল্ডিংয়ের কাজ শেষ না করেই হঠাৎ কাজ বন্ধ করে দেয়। আনিছুরের মৃত্যুর পর মতিউরের দুলাভাই মিজানুর এসে বিষয়টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়। এছাড়া আনিছুরের মৃত্যুর পর পুলিশ ও এলাকাবাসী সিড়ি পথটি বন্ধ করতে বলার পরেও এখনো পর্যন্ত ছাদে উঠার পথ খোলা রেখেছে।
এলাকাবাসী রেজাউল জানান, ইতিপূর্বে এই ভবন নির্মাণ করার সময় নির্মাণ শ্রমিকদের একজন বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হলে তারা কাজ ছেড়ে চলে যান। এমন অরক্ষিত জায়গায় এভাবে ছাদে ওঠার ব্যবস্থা রাখা মোটেও ঠিক করেনি ভবন মালিক। ভবন মালিক ইচ্ছে করেই সিড়ি বা ছাদে উঠার পথ বন্ধ করেনি।
গ্রামের লিটন বলেন, ঘটনাস্থলে মিজানুর এসে নিহতের পরিবারের সাথে কথা বলে মজলিস বা মিলাদের সময় লোকজনের খাওয়ার খরচ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। ফলে পরিবারের লোকজন মামলা করবে না বলে পুলিশকে লিখিত দেয়।
ভবন মালিক মতিউর রহমান বলেন, ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের নতুন রাস্তা হবে। আমার ভবনের কিছু অংশ রাস্তায় পড়বে বিষয় জানার পর কাষ্টডিয়ানের সাথে কথা বলে ভবনের কাজ বন্ধ করেছি। ভবনের ছাদে উঠার পথ খোলা রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বন্ধ রাখা উচিৎ ছিলো। ঘটনার পর বন্ধ করা হয়েছে বলে জানান।
এ ব্যাপারে বদলগাছী অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাবুবুর রহমান বলেন, পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় লাশের সুরতহাল রিপোর্ট করে নিহতের লাশ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ব্যপারে থানায় একটি ইউডি মামলা করা হয়েছে।