সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি খরচ দিয়েও ধানের জমিতে সুবিধামতো সেচ পাচ্ছেন না কৃষক। পানির অভাবে ফেটে চৌঁচির হয়েছে ক্ষেত। অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার মিলছেনা। এমন পরিস্থিতিতে নাটোরের সিংড়ার আগপাড়া শেরকোল বিলের ২৪২ বিঘার ইরি ধানের ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষীরা।
কৃষকরা জানিয়েছেন, আগপাড়া শেরকোল বরেন্দ্র বহুমুখী সেচ প্রকল্পের অধীনে অন্তত ২৪২ বিঘা জমিতে ইরি ধানের আবাদ করেছেন কৃষক। মূলত কৃষকের সাথে সেচ পরিচালনা কমিটির লোকজনের দ্বন্দ্বের কারণে লোডশেডিংসহ নানা অযুহাতে ধানে ঠিকমতো সেচ দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নাম ভাঙ্গিয়ে কৃষকদের ভয় দেখানো হচ্ছে। পরিচালনা কমিটির কাছ থেকে মোটা অংকের উৎকোচ নেওয়ায় কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না নাটোর বরেন্দ্র উন্নয়ন অফিসের সহকারি প্রকৌশলী আহসান করিম।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, আগপাড়া শেরকোল বিলের কৃষকদের কথা বিবেচনা করে ২০১১ সালের দিকে বরেন্দ্রোর অধিনে সেচের স্কীম চালু করেন স্থানীয় কৃষক রফিকুল ইসলাম। সেসময় বিঘায় ধান উৎপন্ন হতো ২৭ থেকে ২৮ মণ হারে। স্থানীয় আল আমিন, নয়ন, জাহাঙ্গিরসহ বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক প্রভাবখাটিয়ে স্কীমটি দখলে নেওয়ার পর থেকে পানির অভাবে ধানের ফলন নেমে এসেছে ১২ থেকে ১৫ মণে।
শেরকোল ইউনিয়নের দায়িত্বেরত উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ বলেন, স্থানীয় কৃষকদের সাথে সেচ পরিচালনা কমিটির সমস্য দেখা দিয়েছিল। একারণে সেচ সংকটে পড়েছিল কৃষক। কিন্তু বেশ কিছুদিন আগে উর্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে সেটির সমাধান করা হয়। এরপর থেকে ঠিকমতোই সেচ দেওয়ার কথা। তিনি জরুরী ভিত্তিতে ধানের ক্ষেতে গিয়ে কৃষকদের সাথে সেচের বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন।
বরেন্দ্র সূত্র বলছে, সবশেষ ২০২২ সালে আগপাড়া শেরকোল বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পের সেচ পরিচালনা কমিটির অনুমোদন দিয়েছে বরেন্দ্র (বিএমডিএ)। ওই কমিটিতে সভাপতি পদে রয়েছেন জাহাঙ্গির আলম, অপাটের পদে আল আমিনসহ নয়ন ইসলাম, ইব্রাহীম, জহুরুল ইসলাম, রাকিব হাসান ও আসমত রয়েছেন। চার মাস মেয়াদী ধানে সেচ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিঘায় সরকারি মূল্য নির্ধাণ করা হয়েছে ২ হাজার ২শ টাকা।
ওই বিলে ধানচাষী নুরুল ইসলাম ও রাশিদুল ইসলাম বলেন, চলতি মওসুমে তারা প্রায় ৭০ বিঘা জমিতে ইরি ধানের আবাদ করেছেন। গত মাস থেকে রোপন করা ধানে কেবল শীষ গজাচ্ছে। অথচ গুত্বপূর্ণ এই সময়ে ক্ষেতে পানি দিচ্ছেনা সেচ পরিচালনা কমিটির সদস্যরা। ফলে ধানের ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় পড়েছেন তারা।
আজিমুদ্দিন, শাহাজান, শমসের আলীসহ অন্তত ২০ জন কৃষক বলেন, সরকার নির্ধারিত ২ হাজার ২০০ টাকা সেচ খরচ দেওয়ার পরও বিঘায় অতিরিক্ত ৪০০ টাকা বেশি নিয়েছেন সেচ পরিচালনা কমিটির সদস্যরা। তারপরও দিনে একবার সেচ পাম্প চালু করে স্বল্প সময় সেচ দেওয়া হচ্ছে। একারণে সেচের চাহিদা মেটানো যাচ্ছেনা। এভাবে চলছে মওসুমের শুরু থেকেই। এতে করে পর্যাপ্ত পানি না পেয়ে লালচে হয়ে গেছে ধান গাছগুলো।
তারা বলেন, মূলত অতিরিক্ত লাভ করতেই সেচপাম্প বন্ধ রাখা হচ্ছে। এনিয়ে কৃষকদের সাথে সেচের লোকজনের দ্বন্দ্ব চলছে। অনিয়মের প্রতিবাদ করলেই মারধরের হুমকি দিচ্ছেন সেচ পরিচালনা কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গির, অপারেটর আল-আমিনসহ অন্যরা। বরেন্দ্র অফিসে অভিযোগ দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সেচপরিচালনা কমিটির অপারেটর আল-আমিন বলেন, কোনো কৃষকের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়নি। তাছাড়া সমস্যার কারণে কয়েকদিন ঠিকমতো সেচপাম্প চালাতে পারেননি তিনি। একারণে সাময়িকভাবে সেচের সংকট হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
সিংড়া কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার ফরিদ জানান, ওই ডিপ নিয়ে একটু সমস্যা আছে। সোমবার বিকালের মধ্যেই সমস্যার সমাধান করে পুরোদমে সেচ ব্যবস্থা চালু করা হবে।
নাটোর বরেন্দ্র উন্নয়ন অফিসের সহকারি প্রকৌশলী আহসান করিম মোবাইল ফোন না ধরায় তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যাযনি।