
মেডিকেল বিভাগ চালু
নওগাঁর বদলগাছী বাংলাদেশের ১ম জরুরী সেবা সহজীকরণে ভেটেরিনারি মেডিকেল বিভাগ চালু করলেন বদলগাছী উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ড.মোঃ নাজমুল হক।
মানুষের জন্য সরকারি হাসপাতাল গুলোতে জরুরী বিভাগের ন্যায় প্রাণিসম্পদের ক্ষেত্রে ভেটেরিনারি মেডিকেল সার্ভিসও জরুরী সেবারই অন্তর্ভুক্ত। যদিও এখন পর্যন্ত সরকারীভাবে ভেটেরিনারি সেবাকে জরুরী সেবা হিসাবে ঘোষণা দেওয়া হয় নি।
কিন্তু প্রত্যেকটি পশুপাখি এবং পোষা প্রাণী যে কোন সময় অসুস্থ হতে পারে, তাঁর জন্য জরুরী চিকিৎসা-অপারেশন ইত্যাদির প্রয়োজন হতে পারে। প্রাণীকূলের জীবনের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ নাজমুল হক, নিজ উদ্যোগে দেশে ১ম বারের মতো উপজেলা পর্যায়ে জরুরী সেবা সহজীকরণে ভেটেরিনারি মেডিকেল বিভাগ স্থাপন করেছেন।
বদলগাছী প্রাণীসম্পদ দপ্তরে প্রবেশ করতেই জরুরী সেবা সহজীকরণ ভেটেরিনারি মেডিকেল সার্ভিসে হট লাইন নম্বর সহ ৫ জনের মেডিকেল টিমের মাধ্যমে যে কোন ছুটির দিন, অফিস টাইমের আগে পরে, রাতের বেলা ভেটেরিনারি জরুরী সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। যে কোন সেবাগ্রহীতা জরুরী সেবার জন্য ছুটির দিন এসে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের সাথে যোগাযোগ করলেই কেউ না কেউ এসে জরুরী সেবা ডেস্কে বসে সেবা প্রদান করছে।
এছাড়াও ড.মোঃ নাজমুল হক বদলগাছী উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তা দ্বায়ীত্ব পাওয়ার পর থেকে প্রাণীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে নিরালস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি প্রাণীসম্পদের প্রাচীর নির্মান, গ্যারেজ, ফুলের বাগান দৃষ্টি নন্দন করতে সেবা গ্রহীতাদের কাছে সেবা পৌছে দিতে কাজ করছে। অফিসে ঢুকতে সিটিজেন চার্টার, আলট্রাসনোগ্রাম চেম্বার, এপিএ বোর্ড, এসডিজি বোর্ড, ডিজিজ ম্যাপ, রিসোর্স ম্যাপ, স্মার্ট বাংলাদেশ স্মার্ট লাইভস্টক বোর্ড ইত্যাদির মাধ্যমে তিনি পুরো ক্যাম্পাসকে নান্দনিক, সেবামূলক এবং সেবাকে জনগণের কাছে দৃশ্যমান করেছেন। তিনি সেবা সহজীকরণে হেল্প ডেক্স করেছেন। প্রতিটি রুমে কি কি সেবা পাওয়া যায় তা রুমের সামনে লেখা রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন ঔষধ,ভ্যাকসিনের মূল্য তালিকা দেওয়া রয়েছে।
চিকিৎসা সেবা নিতে চাংলা গ্রামের ফিরোজ বলেন, আমি আমার ছাগলের জন্য বিকেল সাড়ে ৪টায় প্রাণীসম্পদ অফিসে আসি। এসে সাথে সাথেই চিকিৎসা সেবা পেয়েছি। ছুটির পরেও চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে প্রাণীসম্পদ দপ্তর। ২৪ঘন্টা সেবা প্রদানে বদ্ধ পরিকর বদলগাছী প্রাণীসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল। তিনি বলেন, শুধুমাত্র একজন মানুষের জন্যেই বদলগাছীর মানুষ আজ দিনরাত সেবা পাচ্ছে। তিনি দ্বায়ীত্ব পাওয়ার পর হাতের নাগালে প্রাণী সম্পদের সেবা পৌছে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন।
১৯শে এপ্রিল ইদের ছুটির দিনে চিকিৎসা নিতে আসা জোসনা বলেন, আমি মুরগির খামারী। আমি আমার খামারের মুরগির হঠাৎ সমস্যা শুরু হওয়ায় পরামর্শ নেওয়ার জন্য বদলগাছী উপজেলা প্রাণীসম্পদে আসি। ইদের ছুটির দিন হওয়ার পরও আমি আমার মুরগির জন্য সেবা পেয়েছি। আমি সহ প্রায় ১৩জন সেই সময়ে সেবা পেয়েছে। আমি মনে করি মানুষের মতোই প্রাণীদের জন্যেও জরুরী বিভাগ চালু করা দরকার। দেশের প্রতিটি উপজেলায় এমন জরুরী সেবা সহজীকরণে ভেটেরিনারি মেডিকেল বিভাগ চালু করা হোক।
চিকিৎসা নিতে আসা ভাতশাইল গ্রামের মিজান বলেন, আমার গরু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে আমি টেনশনে পড়ি। গরুকে আনতে পারছিলাম না। আমি অফিসে এসে কাকে কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না। তখন হেল্প ডেক্স থেকে একজন বললো কি সমস্যা আপনার,আমি বললাম এই সমস্যা সাথে সাথে ভেটেরিনারি সার্জনের রুম দেখে দিয়ে বললো ঐ রুমে যান। ভেটেরিনারি সার্জনকে সব বলার পর উপ সহকারী প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তাকে আমার সাথে পাঠান।
ছাগলের চিকিৎসা নিতে আসা রশিদ বলেন, আমার ছাগলের পায়খানা হচ্ছে না তাই এখানে চিকিৎসা নিতে আসছি। আসার কিছু পরেই ডাক্তার এসে সেবা দিলেন। আগেও আমি এখানে এসেছি এতো তারাতারি সেবা পাইনি। আজ পেয়েছি। নতুন প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা আসার পর অফিসের চেহারাই পাল্টে গেছে। তিনি বদলগাছী প্রাণীসম্পদ দপ্তরকে মডেল প্রাণীসম্পদ দপ্তর হিসাবে তৈরি করতে কাজ করছেন।
এ ব্যপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ নাজমুল হকের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, শুধু জরুরী সেবা সহজীকরণে ভেটেরিনারি মেডিকেল বিভাগই নয়, তিনি অত্র দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালকে বাংলাদেশে একটি মডেল প্রাণিসম্পদ কমপ্লেক্স হিসাবে গড়ে তোলার জন্য নানা রকম উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তিনি উপজেলা পর্যায়ে অপারেশন থিয়েটার স্থাপন করেছেন। তিনি দেশে ১ম বারের মতো আলট্রাসনোগ্রাম চেম্বার এবং স্যাম্পল কালেকশন চেম্বার স্থাপন করেছেন।
তিনি এনিমেল শেড স্থাপন করেছেন। তিনি সেবা শাখাগুলোকে বিভাজন করে প্রত্যেক সেবাশাখার সামনে সেবার তালিকা দৃশ্যমান করেছেন। তিনি সিটিজেন চার্টার, এপিএ বোর্ড, এসডিজি বোর্ড, ডিজিজ ম্যাপ, রিসোর্স ম্যাপ, স্মার্ট বাংলাদেশ স্মার্ট লাইভস্টক বোর্ড ইত্যাদির মাধ্যমে তিনি পুরো ক্যাম্পাসকে নান্দনিক, সেবামূলক এবং সেবাকে জনগণের কাছে দৃশ্যমান করেছেন। তিনি আধুনিক কনফারেন্স রুম, গাড়ি রাখার জন্য গ্যারেজ, বাইক স্ট্যান্ড, ব্যাডমিন্টন কোর্ট, সীমানা প্রাচীর নির্মাণসহ একটি মডেল প্রাণিসম্পদ কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করেছেন।