চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন ও তার ভাইসহ তিনজনকে দিনে দুপুরে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। অপহৃত দেলোয়ার হোসেন নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী। অপহরণের এই ঘটনায় আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী লুৎফুল হাবীবকে দায়ি করা হচ্ছে।
লুৎফুল হাবীব সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলকের শ্যালক। সবমিলিয়ে সোমবার সকাল থেকে ৫ ঘন্টায় তিন ব্যক্তিকে অপহরণ করা হয়েছে।
তবে এব্যাপারে লুৎফুল হাবীবের মুঠোফোনে একাধিকার ফোন করলেও তিনি ফোন না ধরায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ভুক্তভোগীদর পরিবার ও থানা সত্রে জানিয়েছে, লুৎফুল হাবীব সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়ারম্যান পদে এককভাবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন।
গত রোববার পর্যন্ত তাঁর কোনো প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। কিন্তু গতকাল সোমবার সকালে মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য নাটোর শহরে আসেন দেলোয়ার হোসেন। তিনি অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে নাটোর স্টেশন এলাকার একটি কম্পিউটারের দোকানে বসেছিলেন।
এসময় দেলোয়াররের বড় ভাই কলম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক এবং কলম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুন্সি ব্যাংকে জামানতের টাকা জমা দেওয়ার জন্য বের হন। এই দুই ব্যাক্তি কোড নম্বর জানতে নাটোর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে দাঁড়ান। হঠাৎ করেই কয়েকজন যুবক একটি কালো
মাইক্রোবাসে করে এসে তাদের ঘিরে ধরেন। একপর্যায়ে জোর করে ওই মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান। এর পর থেকে অপহৃত ব্যক্তিদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পাওয়ায় প্রার্থী দেলোয়ার ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে ঘটনাটি জানান।
তবে বেলা ৩টা ৩২ মিনিটে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাসান ইমাম ফোনে জানান, নিখোঁজ দুই আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে তিনি মাইক্রোবাসে করে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
আলাউদ্দিন মুন্সি জানান, আওয়ামী লীগের ওই দুই নেতাকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাসান ইমাম গাড়িতে করে নিয়ে এসেছেন। তবে পুলিশ অপহৃতদের উদ্ধার করতে পারেনি।
এদিকে সোমবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে দেলোয়ার হোসেন তার অন্য ভাইকে নিয়ে জেলা নির্বাচন কার্যালয়েম নোনয়নপত্রের প্রতিলিপি জমা দিতে যান। এসময় একই মাইক্রোবাসে করে দুর্বৃত্তরা আবরো জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে আসেন।
একপর্যায়ে প্রার্থী দেলায়ার হোসেনকে কিলঘুষি মারতে মারতে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে হারিয়ে যান। দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণের সময় নির্বচান কার্যালয়ের সামনে একজন সাংবাদিকও উপস্থিত ছিলেন।
উপস্থিত সাংবাদিক কামাল হোসেন জানান, প্রার্থী দেলোয়ারকে মারতে মারতে গাড়িতে তুলে নিয়ে যান সিংড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহন আলীসহ কয়েকজন যুবক। এ ব্যপারে মোহন আলী মোবাইল ফোন না ধরায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সিংড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম জানান, তিনি সকালের ঘটনার প্রাথমিক তথ্য পেয়েছেন ৯৯৯ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে। অপহৃত দুজনকে মাইক্রোবাসে করে ঘোরানো হচ্ছে। তারা অপহৃত ব্যক্তিদের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছেন।
পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, দুর্বৃত্তদের আটক এবং অপহৃত ব্যক্তিদের উদ্ধারের জন্য ইতিমধ্যে কয়েক দলে বিভক্ত হয়ে পুলিশ তৎপরতা শুরু করেছে।
জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঞা জানান, তিনি নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন। তদন্ত করে এ ঘটনার সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।