৮০ বছরের কোঠায় কুসুমকুমারী ব্যানার্জী। ১৯৭১ সালে ছিলেন সিলেটের খান চা-বাগানের মিডওয়াইফ (সেবিকা)।
মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মাকে গুলি করে তাঁকে ধরে নিয়ে যায় বাগানের ম্যানেজারের বাংলোয়। সেখানে বর্বর নির্যাতনের শিকার হন তিনি।
একদিন পালিয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের আমতরঙ্গ ক্যাম্পে যান। সেখানে তিনি সেবিকার কাজ করেন।
তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫৩ বছর পরও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি কুসুমকুমারী ব্যানার্জী। এই অপ্রাপ্তিই জীবনসায়াহ্নে তাঁর বড় আক্ষেপ। একই দুঃখ-বঞ্চনা বয়ে বেড়াচ্ছেন হবিগঞ্জের লক্ষ্মীপ্রিয়া বৈষ্ণবী, সিলেটের মায়ারানী শব্দকর ও ছায়া মালাকারের মতো পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনের শিকার অসংখ্য নারী।
নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন পর্যন্ত গেজেটভুক্ত ১ হাজার ১৪৬ জনের মধ্যে বীরাঙ্গনা মাত্র ৪৫৫ জন। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের এই তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে বড় বাধা মনে করা হচ্ছে দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়াকে।
আবার আবেদন নিয়ে ছোটাছুটি করার শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক সক্ষমতাও বর্তমানে বেশির ভাগ নারীর নেই। আবেদনের শর্ত পূরণে টাকা দাবির অভিযোগও আছে কারও কারও। আবার আবেদনের কয়েক বছর পরও স্বীকৃতি পাননি এমন নারীও আছেন।
জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বীরাঙ্গনাদের অনেকে নিজেরাই তালিকাভুক্ত হতে চান না।
আমার এলাকাতেও অনেকে আছেন, যাঁরা বীরাঙ্গনা হিসেবে পরিচিত হতে চান না। তবে যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁরা যেন তালিকাভুক্ত হতে পারেন, সেটা আমরা দেখব।’
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে গেজেটভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ২ হাজার ৫৪৮ জন।
এর মধ্যে নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা ১ হাজার ১৪৬ জন। তাঁদের মধ্যে কণ্ঠসৈনিক, চিকিৎসক, সেবিকা ও বীরাঙ্গনাও রয়েছেন।
তাঁদের মধ্যে বীরাঙ্গনা (পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনের শিকার) ৪৫৫ জন। বীরাঙ্গনাদের ২০১৫ সালে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয় সরকার।
বিভিন্ন তথ্যমতে, মুক্তিযুদ্ধে দুই লাখ মা-বোন পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর তাঁদের বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
তাঁদের বেশির ভাগই ইতিমধ্যে মারা গেছেন।
নির্যাতনের শিকার বেশির ভাগ নারীই লোকলজ্জা ও সমাজের ভয়ে বীরাঙ্গনা তালিকাভুক্ত হতে চাননি। আবার আগ্রহী নারীরাও নানা প্রতিকূলতার কারণে পাননি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, সম্মান।